ক্যাফে ধারাবাহিক গল্পে মনোরঞ্জন ঘোষাল (পর্ব – ১০)
টলি ট্যাব আবিষ্কার
রাস্না। পাতা ঝাঁঝি। সূর্য শিশির এ সব গাছেরা প্রোটিন সংগ্রহ করার জন্য কীট পতঙ্গ ইত্যাদিদের নিজের শরীরে তৈরী ফাঁদে আটক করে তাদের রস শোষণ করে মেরে ফেলে। এরা তো ইঁদুরের শরীরের রস শোষণ করে নি! তা হলে ওরা যে শুকিয়ে যেত। তা তো হয় নি। ইঁদুরের শরীর তো শুকিয়ে যায় নি। তাদেরকে শিকড়ে পেঁচিয়ে দম বন্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে মাত্র। শুধু মেরে ফেলাটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাদের শরীর থেকে পুষ্টি শোষণ করাটা উদ্দেশ্য নয়।
কেন? তার হদিস আমাকে পেতেই হবে। একটা জেদ চেপে বসল আমার ঘাড়ে।
দীর্ঘ সমুদ্র পথে আমি ডেনিয়লের জাহাজ টিতে ঘুরে দেখেছিলাম কতগুলো টুকরো টাকরা জিনিস সেখানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমার ঐ প্লান্টহোমে যন্ত্র বানাতে কাজে লাগবে ভেবে সেগুলিকে গুছিয়ে রেখে ছিলাম এক পাশে।
প্লান্ট-ট-হে-মে হল প্লান্ট টক হেয়ারিং মেশিন। গাছেরাও আমাদের মত ওদের নিজেদের মধ্যে কথা বলা বলি করে মনের ভাব আদান প্রদান করে।
আমি ওদের কথা বলা শব্দের কম্পাঙ্কের খোঁজ পেয়েছি। সেই মত যন্ত্র বানিয়ে ওদের বলা কথা সব শুনবো ঠিক করে ফেললাম। আমাকে যে শুনতেই হবে ওদের সুবিধা অসুবিধার কথা।
ডেনিয়ল কে ডেকে বললাম- “আমাকে আজকের একটি দিন ঐ জাহাজে কাটাতে হবে।”
“কেন?” সে জিজ্ঞেস করল।
আমি ওকে সবিস্তারে কিছু বললাম না। শুধু বললাম একটা যন্ত্র বানাতে হবে, যে টির খুব প্রয়োজন।
ও আর কোন কথা বলল না। আমি চলে গেলাম জাহাজে। তার এদিক ওদিক খুঁজে দেখলাম আমার কাজের প্রয়োজনের জিনিস মোটামুটি সবই আছে সেখানে। মনযোগ লাগিয়ে সেটি বানিয়ে ফেললাম।
যন্ত্রটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছে। একটি অংশ গাছে লাগিয়ে দিতে হবে আর একটি অংশ কানে লাগিয়ে নিতে হবে। তার পর সুইচ অন করলেই তুমি শুনতে পাবে সেই গাছের কথা।
কানে লাগানো যন্ত্রটি মন পুত করে তৈরী করা গেল না। ফোনের হেয়ারিং কড কেটে করতে হল, উপযুক্ত যন্ত্র পাতির অভাবে। তবে কাজ চালানো যাচ্ছে।
দু জনের জন্য দুটি কডই নিয়ে নিলাম। তার সঙ্গে লাগিয়ে দিলাম ফ্রিকোয়েন্সির রিসেপ্টর, যেটি ঐ গাছের বলা কথার শব্দ গুলকে ধরে ফেলতে পারবে। সেটিকে মোবাইলের এম্লিফায়ারের সঙ্গে জুড়ে দিলাম। আর সেটিকে যুক্ত করে নিলাম কডের মাইক্রোফোনের সঙ্গে।
সমগ্র মোবাইল ফোনকে আমি শ্রবন যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারতাম। তাতে বিশেষ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে মেমোরিটি নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। তাই ও কাজে আমার মন সায় দিল না।
যন্ত্রটি সম্পূর্ণ করে জাহাজ থেকে নেমে এলাম। আমার সামনেই যে গাছটি পড়ল তাতেই যন্ত্রটি লাগিয়ে পরীক্ষা করার আবেগকে উপেক্ষা করতে পারলাম না। একেবারে সামনের গাছেই যন্ত্রটি আটকে দিয়ে কানের যন্ত্রটির সুইচ অন করে দিলাম।
প্রথমেই কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না। মনে হল যন্ত্রটা বুঝি বেকার বানানো হয়ে গেছে।
একটু মন শান্ত করে মন সংযোগ বাড়িয়ে দেখলাম কি সব যেন শুনতে পাচ্ছি! আরো নিজেকে শান্ত করলাম! এবারে সব কথা পরিস্কার শোনা যাচ্ছে।
গাছটি বলছে- “এই রে আপদটি আবার এসে ঢুকছে আমাদের শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য। মনে ভাবালাম জাহাজ হাঁকিয়ে চলে যাবে।