T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় মৈত্রেয়ী ঘোষ
by
·
Published
· Updated
আমি ও রবীন্দ্রনাথ–
যখন চুপ করে বসে থাকি, যখন নিষ্ক্রিয়তাই সক্রিয় হয়ে ওঠে জীবনে, তখন চোখ যায় দেওয়ালে ফ্রেমবন্দি রবিঠাকুরের দিকে। বুঝতে চেষ্টা করি কেন আজ এতবছর পরেও আমার ড্রয়িং রুমে তাঁর ছবি জ্বলজ্বল করছে! কেন এখনো প্রতিমুহূর্তে তাঁকে স্মরণ করে চলেছি! এমন তো নয় যে অল্প কিছুদিন আগেও তিনি আমাদের মধ্যে ছিলেন, বস্তুতঃ তাঁর পথচলা শেষ হয়েছে বেশ কিছু প্রজন্ম আগে।
কিন্তু কি আশ্চর্যের বিষয়, আজ এতবছর পরেও তাঁকে বাদ দিয়ে জীবন অসম্পূর্ণ মনে হয়। আসলে জীবনকে তিনি খুব সুন্দর ভাবে উপলব্ধি করতে পারতেন,আর আপন দক্ষতায় সেই লেখচিত্র লিপিবদ্ধ করে গেছেন তাঁর একাধিক রচনায়। শৈশবের সারল্য থেকে বার্ধক্যের একাকীত্ব, কিম্বা দরিদ্রর জীর্ণ কুটির থেকে রাজ বাড়ির বিলাসিতা, সবই তাঁর কলমে ঠাঁই পেয়েছে।
আমার ব্যবহৃত জীবনের থেকে যেকোন একমুঠো সময় তুলে নিলে দেখা যাবে, বহুবছর আগেই রবিঠাকুর তাঁর কোনো একটি রচনায় হয়তো হুবহু একই ঘটনার উল্লেখ করে গেছেন, আর এখানেই তাঁর গুরত্ব। ঠিক এই কারণেই আজও আমার জীবন রবিময়। আর শুধু আমার কেন, প্রতিটি মানুষের জীবনেই রাবীন্দ্রিক প্রভাব অনস্বীকার্য।
যখন কাঁদি, যখন হাসি অথবা যখন বিষাদের আগুনে জর্জরিত হয়ে যাই তখনই ছুটে যাই রবীন্দ্র ভাবনায়, গুনগুন করে গেয়ে উঠি এক কোলি রবীন্দ্রসঙ্গীত। সাংসারিক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে যখন দাম্পত্য জীবনের অনুভূতিগুলো আর অনুরণিত হয়না তখনই আশ্রয় খুঁজি তাঁর সৃষ্টিতে, বলতে ইচ্ছা করে–
“যেখানে ঘর বাঁধবো আমি
আসে আসুক বান–
তুমি যদি ভাসাও মোরে
চাইনে পরিত্রাণ।”
এইভাবেই বারংবার রবিঠাকুর কে স্মরণ করে এগিয়ে চলেছে আমার সাদামাটা এক নারী জীবন। যে জীবন আমার আশেপাশের আর পাঁচজনের কাছে ততটা গ্রাহ্য নাহলেও আজ থেকে বহু দশক আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিতে মর্যাদা পেয়েছে, অত্যন্ত সুন্দর ভাবে। তাই আজ পঁচিশে বৈশাখ তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আরও একবার স্মরণ করি তাঁকে।
দেশপ্রেমী রবীন্দ্রনাথ, সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ এবং অবশ্যই মানুষ রবীন্দ্রনাথ– বাঙালির অন্তরে চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন।