ধলেশ্বরীর অন্য ধারায় ভ্রমন কাহিনীতে লোকমান হোসেন পলা

সাজেক ভ্যালীঃ আকাশ- মেঘ- পাহাড়ের মিতালী

মেঘ-পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি। অনেকে সাজেক ভ্যালীকে বাংলাদেশের ভূস্বর্গ বলে থাকেন।
আকাশের নীল যেন এখানে এসে দিগন্ত ছুঁয়েছে। চারপাশে যতদূর দৃষ্টি যায়, ছোট-বড় সবুজ পাহাড়। উপর থেকে দৃষ্টি মেললে যেন সবুজ সমুদ্রের ঢেউ। একটি থেকে আরেকটি পাহাড়ের মাঝে যেন আটকে আছে সাদা মেঘের ভেলা।

দেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন সাজেক। পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় এ ইউনিয়ন। তবে সাজেকে যেতে হয় খাগড়াছড়ি সদর থেকে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা এবং বিকেল ৩টায় বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করার পর সকল গাড়ি একযোগে সাজেকের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে গেছে আঁকা-বাঁকা পিচঢালা সড়ক।
যাওয়ার পথে কখনো গাড়িগুলো আকাশের দিকে, কখনো পাহাড়ের গহীনের দিকে চলতে থাকে। সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে পাহাড়ি শিশুরা হাত নেড়ে অতিথিদের অভিবাদন জানায়।
খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথের শেষে সাজেক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফুট উচ্চতায় পাকা সড়কের দু’পাশে পায়ে হেঁটে চলার জন্য রয়েছে পরিচ্ছন্ন ফুটপাত। পাহাড়িদের এবং পর্যটকদের জন্য রয়েছে রঙিন সব কটেজ। পাহাড়ের উপত্যকায় সাজানো-গোছানো শহরের নাম সাজেক। যা পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।
সাজেকে রুইলুই ও কংলাক নামে দুটি পাড়া রয়েছে।
সাজেকে প্রবেশেই পড়বে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট । এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরারাও বাস করে । ১৮৮৫ সালে এই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় । এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই । রুইলুই পাড়াকে ঘিরেই সাজেক গড়ে উঠেছে। রুইলুই পাড়ার পরই আছে কংলাক পাড়া ।
সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উঁচুতে অবস্হিত বিজিবি ক্যাম্প । এখানে হেলিপ্যাড আছে । সাজেকের শেষ গ্রাম কংলাক পাড়া । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া । এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই । কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । কংলাক পাড়া সাজেকের সবচেয়ে উচু পাড়া ।
পর্যটকরা অবস্থান করেন রুইলুই পাড়ায়। সেনাবাহিনী পরিচালিত সাজেক ও রুনময় নামে দুটি রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে পাহাড়ের ঢালে। এসব রিসোর্টের বারান্দায় বসেই মেঘ-পাহাড়ের মিতালী দেখার সুযোগ মেলে।
কংলাক পাড়ায় গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য পায়ে হেটে পাহাড় বয়ে উঠতে হয়। সাজেকে এটাই সবচেয়ে উঁচুস্থান। কংলাক পাড়া থেকে এক নজরে সাজেক দেখার সুযোগ মেলে। তবে সাজেকে হেলিপ্যাডে পর্যটকরা গোধূলী বরণ করেন। এখানে বসেই দল বেধে গান ধরেন পর্যটকরা। সন্ধ্যা নামার পরে অনেকে ফানুস উঁড়িয়ে দেন। তবে অন্ধকারটা ঘনিভূত হবার সাথে সাথেই সবাই ফিরে আসেন রুইলুই পাড়ায়। এখানে সড়কের পাশে পাহাড়িরা কমলা, আনারস, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করেন। পাহাড়ের এসব ফল খুব সুস্বাদু।

কি ভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে সব জনপ্রিয় পরিবহনেরই খাগড়াছড়ি পর্যন্ত বাস সার্ভিস আছে যেমন নন এসি আছে শ্যামলী হানিফ এস আলম শান্তি পরিবহন ইউনিক ইত্যাদি আর এসি পরিবহনের মধ্যে আছে সেন্টমার্টিন রিল্যাক্স শান্তি পরিবহন ইত্যাদি ।।

মুলত সবগুলো বাসই প্রতি রাতের দশটা এগারোটার মধ্যেই ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে যায় এবং ভোর ৫/৬ টা নাগাদ খাগড়াছড়ি নামিয়ে দেয় ।। ভাড়া নন এসি ৫২০ টাকা আর এসি ১০০০ টাকা ।
খাগড়াছড়ি থেকে আপনি তিন মাধ্যমে সাজেক পৌছাতে পারবেন । চান্দের গাড়ী,সিএনজি এবং মটরসাইকেলে ।
সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো খাগড়াছড়ি শহর বা দীঘিনালা উপজেলা শহর থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে ঘুরে আসা । ভাড়া নিবে পুরাতন চান্দের গাড়ী ৬০০০-৭০০০ টাকা আর নতুন মাহিন্দ্রা পিকআপগুলো ৯০০০-৯৫০০ টাকা , এই টাকার মধ্যে আপনি যাবেন তারপর রাত সাজেকে কাটাবেন গাড়ী আবার আপনাকে নিয়ে আসবে খাগড়াছড়িতে বুঝা গেছে ব্যাপারটা ? । এক গাড়িতে গাড়ীর সাইজ অনুযায়ী দশ থেকে ১৫ জন বসতে পারবেন । এই টাকার মধ্যে গাড়ী আপনাকে হাজাছড়া ,রিসং ঝর্ণা ,আলুটিলা ,জেলা পরিষদ পার্ক ও ঝুলন্ত ব্রিজ ও তারেং ঘুড়িয়ে দেখাবে ।। যদি কেউ এগুলো না ঘুরেন তাহলে ১০০০-১৫০০ টাকা কম লাগবে ।।
গাড়ী আগে থেকে ঠিক করার দরকার নেই খাগড়াছড়ি শাপলা চত্বরের জিপ সমিতি অফিসে গেলেই ওরা সব ঠিক করে দিবে ।।
লোক কম হলে খাগড়াছড়ি শহর থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন । ভাড়া ৩০০০ টাকার মতো নিবে ।
এছাড়াও মটরসাইকেলে করে সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন এক্ষেত্রে এক মটরসাইকেলে ড্রাইভার সহ তিনজন বসতে পারবেন ভাড়া আসা যাওয়া রিজার্ভ ১০০০-১২০০ টাকা (দামদর করে নিবেন কম বেশি হতে পারে) । । বাসে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা নিবে । দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন ।

কোথায় থাকবেন:

সাজেকে থাকার জন্যে অনেক ৪০ এর অধিক রিসোর্ট ও আদিবাসী কটেজ আছে। এক রাতের জন্যে জনপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পরবে। ছুটির দিনে যেতে চাইলে আগে মাসখানেক আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখা ভালো, নয়তো ভালো রুম পাবার নিশ্চিয়তা কম। আর কম দামে থাকতে চাইলে আদিবাসী কটেজ গুলোতে থাকতে পারেন। এছাড়া বর্তমানে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নতুন নতুন অনেক কটেজ হয়েছে। সাজেকের সব কটেজ থেকেই মোটামুটি সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়।

বিশেষ টিপস:

◆ যাবার সময় আইডি কার্ড নিয়ে যাবেন।
◆ হেলিপ্যাড থেকে সূর্যাস্ত দেখবেন।
◆ অবশ্যই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠবেন।
◆ পাওয়ার ব্যাংক সাথে নিবেন।
◆ খাগড়াছড়ি থেকে পানি কিনে নিয়ে যাবেন পরিমানমত।
◆ ঝরনায় সাবধান থাকবেন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।