ধলেশ্বরীর অন্য ধারায় ভ্রমণ কাহিনীতে লোকমান হোসেন পলা

কাজী নজরুলের স্ত্রী প্রমিলা দেবীর গ্রাম তেওতা, অপরূপ যমুনা নদী, নবরত্ন মঠ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভরা

মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর কূলঘেঁষা সবুজ-শ্যামল গাছপালায় ঢাকা তেওতা গ্রামটিকে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়েছে জমিদার শ্যামশংকর রায়ের প্রতিষ্ঠিত নবরত্ন মঠটি। অনেকদূর থেকেই দেখা যেত শ্বেতশুভ্র নবরত্ন মঠ। এক সময়ে জমিদারের বাড়ির আঙিনার এই মঠকে ঘিরে দোলপূজা আর দুর্গাপূজার রঙিন উৎসব পালিত হতো। চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর নবরত্ন মন্দিরটি এখনও বেশ ভালো অবস্থায় টিকে আছে।
মানিকগঞ্জের পুরাকীর্তি স্থাপনার মধ্যে শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ী ইতিহাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর বাড়ির ঐতিহাসিক নির্দর্শন এখন শুধু কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এই জমিদার বাড়িটি বাবু হেমশংকর রায় চৌধুরী, বাবু জয় শংকর রায় চৌধুরী, দুই ভাইয়ের নিজ বসতবাড়ি ছিল। এখান থেকেই জমিদারি পরিচালনা করতেন। মূল বাড়ীতে ৫৫টি ঘর ছিল। এই বাড়ির বেশ কয়েকটি সিঁড়ি আছে যা দিয়ে ছাদে ওঠা যায়। প্রতিটি বাড়ির ছাদ এত কাছাকাছি যে, ইচ্ছা করলেই একটা থেকে আরেক টা তে যাওয়া যায়। বাড়ী সংলগ্ন দুটি পুকুর ছিল সেই সময়, এর একটি এখনও বিদ্যমান রয়েছে। বাড়ির পাশেই ছিল দুটি মন্দির আর একটা মঠ।
উপকথা :
উপকথা অনুযায়ী তেওতা গ্রামের পাঁচু সেন বাল্যবয়সে পিতৃহারা হন। বিধবা মা এ বাড়ী ও বাড়ী কাজ করে অনেক কষ্টে পাঁচুকে বড় করেন। একদিন পাঁচু মায়ের কাছে মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার বায়না ধরে। তাই একদিন গ্রামেরই এক জেলের কাছ থেকে বাকিতে দুই পয়সার মাছ কেনেন মা। দুপুরে জেলে যখন বাড়ী যাবে তখন পয়সা দিবেন। দুপুরে মাছ রান্না করে পাঁচুকে ভাত বেড়ে দিয়েছেন মা, ঠিক তখনই জেলে বাড়ীতে পয়সা নিতে হাজির। কিন্তু তখনো পয়সা জোগাড় হয়নি। বদমাইশ জেলে তখন রান্না করা মাছই তুলে নিয়ে যায়। ক্ষোভে-দুঃখে পাঁচু ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। যমুনা পার হয়ে হাজির হয় গোয়ালন্দ ঘাটে। সেখানে এক মাড়োয়ারির কাছে কাজ শুরু করে। তারপর নিজ বুদ্ধি আর পরিশ্রমে একসময় পাঁচু নিজেই ব্যবসা শুরু করে। এরপর টাকাপয়সার মালিক হয়ে তেওতায় মায়ের কাছে ফিরে আসে। আশেপাশের দশ গ্রামের বেশীরভাগ জমিই কিনে নেয় মায়ের জন্য। পাঁচুর পরবর্তী বংশধরেরাই তেওতায় জমিদারী প্রতিষ্ঠা করে।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এই তেওতা গ্রামটি আরও বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী প্রমীলার স্মৃতি জড়িয়ে থাকায়। তেওতা গ্রামের মেয়ে প্রমীলা। জমিদারবাড়ী পাশেই বসন্তকুমার সেন আর গিরিবালা সেন দম্পতির মেয়ে আশালতা সেন বা প্রমীলা নজরুল। এর ডাক নাম দুলি। কবি নজরুল বিভিন্নন কারনে কয়েক দফায় এসেছিলেন এই গ্রামে। তবে এখানে কেন এসেছিলেন এ নিয়ে জনমনে রয়েছে নানান বিতর্ক। তবে জনশ্রুতি হয়েছে ১৯২২ সালে প্রমীলার সাথে একবার এসেছিলেন।
কিভাবে যাওয়া যায় :
ঢাকা থেকে বাসে আরিচা ঘাট, এরপর আরিচা ঘাট থেকে সি.এন.জি. অথবা ব্যাটারি রিক্সা যোগে তেওতা জমিদার বাড়ী যাওয়া যায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।