ধলেশ্বরীর অন্য ধারায় ভ্রমণ কাহিনীতে লোকমান হোসেন পলা

রঙীন আলো আর অনিন্দ্য সৌন্দর্য সমৃদ্ধের দেশ সিঙ্গাপুর

টিভি পর্দা বা পত্রিকার পাতায় যারা নিয়মিত চোখ রাখেন,তারা মাত্রই জানেন যে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের যে কয়টি দেশ অর্থনীতি,আধুনিকতা আর পর্যটনে শীর্ষস্থানের কাতারে নাম লিখিয়েছে সেসব দেশের মধ্যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অতি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরও অন্যতম। সিঙ্গাপুর মানেই এখন রঙীন আলো আর অনিন্দ্য সৌন্দর্য সমৃদ্ধ কাচের শহর। সিঙ্গাপুর মানে পরিচ্ছন্নতার শহর,নয়নাভিরাম সড়ক আর সমুদ্র তীরের শহর।
খুব বেশি দিন হয়নি এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি স্বাধীন দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে। কিন্তু এই অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশটি বিশ্বের শীর্ষস্থানে তার আসন পাকাপোক্ত করেছে যে কয়টি কারণে তন্মধ্যে দেশটির পর্যটন ব্যবস্থা অন্যতম। পর্যটন সমৃদ্ধতার কারণেই সিঙ্গাপুর এখন এশিয়াসহ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে স্বপ্নের শহর।
সিঙ্গাপুরের নামকরণ করা হয় মূলত সিংহপুর থেকে। নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সত্যিকারের অর্থে সার্বিকভাবেও দেশটি সিংহের মত বলবান হয়ে উঠেছে। সিংহপুর বা লায়ন সিটির প্রতীক হলো মার্লিয়ন। মার্লিয়ন হলো অর্ধেক সিংহ আর অর্ধেক মৎস্যের এক পৌরণিক প্রাণী।
সিঙ্গাপুর শহর
কেবল কারে চেপে যাওয়া যায় এই শহরে। উপর থেকে দৃশ্যমান এই শহরটা দেখতে একদম ছবির মত লাগে। সবকিছু ছবির মতই সাজানো গোছানো আর আলো ঝলমলে সুন্দর। নীল সমুদ্রের তীরে হওয়ায় রাত হলেই সুবৃহৎ দালানকোঠার মায়াবী আলো সমুদ্রের জলে মিশে রাতের আবেশ করে তোলে স্বর্গীয়। সিঙ্গাপুরের সেন্টোসা পৌঁছে ‘ইমেজেস অব সিঙ্গাপুর’ মিউজিয়ামে আপনাকে একবার পা রাখতেই হবে। কিসের জন্য পা রাখা? কারণ এই মিউজিয়ামটিতে প্রমাণ সাইজের অসংখ্য মূর্তি দিয়ে সাজানো চিনা.মালশিয়া,ভারতীয় নানা জাতীর বিচিত্র জগৎ। এই সব অঞ্চলের ঘরবাড়ি,পরিবেশ প্রকৃতি,আচার অনুষ্ঠান,নানা লোককীর্তির বর্ণময় প্রতিচ্ছবি। এর একটু সামনে এগুলেই পাবেন বাটারফ্লাই পার্ক। বাটারফ্লাই পার্কটা যেন অজ্রস প্রকারের রং বাহারী প্রজাপতির সংগ্রহশালা বা উদ্যান। রঙীন প্রজাপতির কল্যাণেই পার্কের ভেতরটা পৃথিবীর বাইরের এক রঙ্গীন জগতের আবহাওয়া এনে দিতে পারে আপনাকে। বাটারফ্লাই পার্কেরই পাশে অর্কিড গার্ডেন। যারা ফুল ভালোবাসেন এই গার্ডেনটি তাদের জন্য। আর এসবেরই পাশে রয়েছে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে অচেনা জগৎ পরিভ্রমণের নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ। সুড়ঙ্গপথে হেঁটে হেঁটে সঙ্গীকে নিয়ে পৌঁছে যেতে পারবেন সেই পাতালপুরীতে। এ এক বিশাল একুয়ারিয়াম। যেখানে পা রাখলেই মনে হবে নিশ্চিত সমুদ্রের তলায় হাজির হয়েছেন অথচ আপনার গায়ে এক বিন্দু পরিমাণও জলের ফোঁটা এসে লাগছে না। মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূর থেকেই আপনাকে দেখে উৎসাহী মুখ বাড়িয়ে ঘুরে বেড়াবে অজস্র প্রকারের নাম না জানা সামুদ্রিক মাছ। মনে হবে ইচ্ছে করলেই ছুঁয়ে দিতে পারবেন।
একুয়ারিয়াম দর্শন শেষে যেতে পারেন পৃথিবীর সবথেকে বড় কৃত্রিম পাখিআবাস ‘জুরং বার্ড পার্ক ’ দর্শনে। জুরংয়ের আরেক আনন্দের নাম জলপ্রপাত। এটিও পৃথিবীর সবথেকে বৃহৎ কৃত্রিম জলপ্রপাত। কেবলই আগত দর্শনার্থীদের আনন্দ দানের উদ্দেশ্যে তৈরি। তাছাড়াও পুরো পার্কজুড়ে রয়েছে অসংখ্য পাখি,গাছপালা আর ফলপাকুড়ের সমারোহ। ঘন জঙ্গলে বন্য পশুদের মুখোমুখি হতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। তার জন্য রয়েছে নাইট সাফারী। গাড়ির ভেতর বসে কাচের বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অনায়াসে দেখতে পারবেন হরিণ,ক্লেপ বাফেলো,ব্লু শিপসহ আরো নানাবিধ জন্তুর। কচ্ছপ দেখতে চাইলে যেতে পারেন অদূরের কচ্ছপ দ্বীপ ‘কুসু’। কুসুতে রয়েছে দুশো বছরের এক চিনে মন্দির।সারা দেশেই বেশ সুন্দর মসজিদ রয়েছে। সমস্ত দ্বীপ ঘিরে ছোট ছোট জলাভূমি আর ডোবা। এসবের পাশাপাশি সমস্ত শহর জুড়েও রয়েছে বিলাস বৈভবের এক নান্দনিক অধ্যায়। সন্ধ্যের আলো ঝলমলে শহরে দেদারছে খানাপিনা আর আমোদ প্রমোদের সুব্যবস্থা। এখানকার রেস্তোরাঁয় ঢুকে ‘রোটি পরোটা’র স্বাদ নিতে ভুলবেন না। সবমিলিয়ে সিঙ্গাপুর একবার গেলে শহরটির অনিন্দ্য সৌন্দর্য সারাজীবন আপনার চোখে বিনা সুতোয় সেলাই হয়ে থাকবে।
কীভাবে যাবেন
সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য ইণ্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান রয়েছে। “এছাড়াও রয়েছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স,থাই এয়ারলাইন্সের বিমান। বাংলাদেশ বিমান ও যাওয়া যায় সিঙ্গাপুর। তবে সবথেকে বড় সুখবর দেশেই এখন বিভিন্ন বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্সি তাদের প্যাকেজ ট্যুরের আওতায় অতি অল্প খরচে আপনাকে সিঙ্গাপুর ঘুরে আসার সুযোগ দিচ্ছে।

কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য সেরাঙ্গুন রোডের ‘গোল্ডেন টেম্পল’ হোটেল,ভিক্টোরিয়া ষ্ট্রিটের ‘হোটেল ভিক্টোরিয়া’ কম বাজেটের পর্যটকের জন্য সুবিধাজনক। যাদের মাঝারী বাজেট তারা হোটেল গোল্ডেন মোস্তফা নেন্টারের আশে পাশে অনেক মাঝারিমানের হোটেল রয়েছে ‘হোটেল ইম্পিরিয়াল’ ‘গ্রাণ্ড সেন্ট্রাল’ প্রভৃতি হোটেলে থাকতে পারবেন। বুকিং না করে গিয়েও বিমানবন্দরে পৌঁছেও এইসব হোটেলে অনায়াসে আপনার কাঙ্খিত রুমের বুকিং দিতে পারবেন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।