মার্গে অনন্য সম্মান খুশী সরকার (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১২৭
বিষয় – অন্তরের টান

অনলের শিখা

শিখা দেখছে,ফুটন্ত পলাশের আভায় চারদিকে রক্তিম। ভাবছে,এই আলোকে সাক্ষী রেখেই তো দু’জন দু’জনার কাছে এসেছিলাম, ভালোবেসেছিলাম। তারপর সেই ভালোবাসা পরিনত হলো পরিণয়ে। দাম্পত্য জীবন কত রঙিন ছিল আমাদের! ছয় মাস পরে তুমি চলে গেলে একটা কোম্পানির চাকরি নিয়ে বিদেশে। কিছুতেই তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না কিন্তু আমাকে তুমি সঙ্গে নিলে না। বললে, শিখা দেখো, বাড়িতে বাবা-মা আছেন, তাদের তো দেখাশোনা করতে হবে। আমি তো বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবো কোম্পানির কাজে। তোমাকে তো সেখানে একাই ঘরে থাকতে হবে। আমি মাসে মাসে এসে তোমাদের দেখে যাব।তোমার কথাই হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলাম সেদিন।
তুমি সঙ্গে না থাকলেও তোমার ভালোবাসা আমাকে জড়িয়ে ছিল রাতদিন অপেক্ষা করেছি তোমার ফোনের। আকুল হয়ে ভেবেছি একমাস পরেই তো আসবে। কিন্তু এক মাস কেন দু মাস পরেও তুমি এলে না। কাজের দোহাই দিয়ে থেকে গেলে। সেটাকেই সত্যি ভেবে তোমার ফোনের অপেক্ষায় আবার।জানো,তোমার ফোন এলেই আনন্দে মনটা উদ্বেল হয়ে উঠত। ভিডিও কলেও তো বুঝতে পারিনি এতটুকু।
আজ মনে হচ্ছে, তোমার ভালোবাসাই ছিল মিথ্যে। তুমি আমাকে ভালোই বাসোনি কোনোদিন। তা না হলে মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে আরেকটি মেয়ের প্রেমে আসক্ত হতে পারতে না। সেই সন্ধ্যায় যখন মোবাইল বেজে উঠল তখন পুলকে মনটা নেচে উঠেছিল তুমি আসবে বলে। কিন্তু তা আর হলো কই? আগেই বলে দিলে তোমার ভালোবাসার কথা, নির্বিকারচিত্তে বললে তুমি আর ফিরবে না আমার কাছে, তুমি ভালোবাসো না আমায়। স্বামীর কাছ থেকে এমন কথা কোনো স্ত্রী শুনলে তার কেমন প্রতিক্রিয়া হয়, সে কথা তুমি ভাবোনি। লজ্জায় দুঃখে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল।
পরক্ষণেই মনে হয়েছিল,তোমার নতুন ভালবাসাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেব।কিন্ত ভাবলাম, তুমি যখন ভালোই বাসো না তখন শাস্তি দিয়ে কি লাভ? জোর করে তো আর ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তাই নীরবে চলে এসেছিলাম সেদিন।
আজ কতদিন হয়ে গেল, তুমি চলে গেছো দূরে কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারিনি তোমায়। কেন বলোতো? এত আঘাত দিলে তবু কেন মনটা তোমার দিকেই ধায়? তুমি তো সুখেই সংসার করছো। তা জেনেও–
মন বলে, যা- বলেছ সব মিথ্যে। একদিন ঠিক ফিরে আসবে আমার কাছে। তিন বছর পেরিয়েও ভাবি, ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছো তো? কথা দিয়েছিলে,ওই ছাইপাসগুলো গিলবে না আর। ভাবতে ভাবতে শিখার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন করে নিজেকে,যে তাকে এত আঘাত দিয়েছে ,তার কথা কেন সে ভাবে এত! তবে কি এ অন্তরের টান? যে টান হৃদয়ের এতটাই গভীরে যে তা কোনদিনও মুছে ফেলতে পারবে না।
অজান্তেই বলে ওঠে, ভালো থেকো তুমি,ভালো থেকো,ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যায় শিখা।
হঠাৎ দেখে, কে যেন তার দিকে এগিয়ে আসছে। সামনে আসতেই চমকে উঠে শিখা,”এ কি তুমি!”
“হ্যাঁ আমি” হাসিমুখে জানায় অনল।
“এরপরেও তুমি হাসছো?”
“হ্যাঁ হাসবোই তো।
“তুমি যা দেখালে!”
“মানে?”
আমি যা যা বলেছি সব সত্যি ভেবেছো? আমার উপরে তোমার ভরসা নেই?তোমাকে ছেড়ে আর একটা…!
“আবার মিথ্যা?” ক্রুদ্ধস্বরে বলে শিখা।
একদমই না। শিখা ছাড়া অনল বাঁচতে পারবে না,বোঝো না বোকা মেয়ে!
“এতদিনে আমিও যদি বিয়ে করে নিতাম তোমার মত?”
“আমিও করিনি তুমিও করতে না কারণ আমাদের ভালবাসায় অন্তরের টান এতটাই গভীর যে আমরা কখনো কারো থেকে কেউ আলাদা হতে পারবো না।”
অনলের কথায় শিখার প্রেম হোমযজ্ঞের শিখায় জ্বলে ওঠে। সেই রক্তিম আভায় শিখা অনলের প্রেম আজ আবার হয়ে উঠল রঙিন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।