মার্গে অনন্য সম্মান সীমাদ্রি বিশ্বাস (সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৬২
বিষয় – অহংকার

দর্পচূর্ণ


1994 সাল। আর আই পি টি-তে জয়েন করলাম। খুব দাম্ভিক হয়ে উঠেছিলাম। অফসেট রমরম করে চলছে দেশে। কলকাতায় তিরিশটার উপর মেশিন হাতে। সার্ভিসিং। তার উপর কলেজ শিক্ষকতা। ধরাকে সরা জ্ঞান করছি তখন। কেউ কিস্যু জানে না, আমি সিওর। অল্প কথা বলি।ভুরু কুঁচকে, কাঁধ ঝাকিয়ে কথা বলি। একজন মানুষ অবশ্য বেশ ইম্প্রেস করেছিলেন। অমরেশ কুমার মুখার্জি। এ কে এম স্যার। কম্যুনিকেশনের ক্লাস নিতেন। বিলেত ফেরত। জবরদস্ত ছিল তার ক্লাসের পদ্ধতি। তার সাথেই যা একটু সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমি যে অতি খারাপ ধরণের দাম্ভিক ছিলাম সে কথা এই ফাঁকে আর একবার পাঁচকান করে রাখি।
সেই সময় ছেলেমেয়েরা রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করবে ঠিক করল। আমার মাউথ অর্গানও তখন কলেজে সবাই জেনেছে। প্রশংসা করেছে। তাতে আমার অহঙ্কারের পারদ আরও চড়েছে। যাইহোক অনুষ্ঠানের দিন স্টেজে আমার ডাক পড়েছে। সামনের সারির একধারে এ কে এম স্যার বসে। পাশ দিয়ে স্টেজে ওঠবার সময় বললেন ত্রিতালে কোন রবীন্দ্রসঙ্গীত জানা আছে? বাজাস। বাজালাম। এস শ্যামল সুন্দর। চটাপট হাততালিতে মেন হল মুখরিত। নামলাম। স্যারের পাশ দিয়ে যাবার সময় তিনি বললেন, “দারুণ বাজিয়েছিস।” আমি কোন উত্তর না দিয়ে ভুরু কুঁচকে কাঁধ শ্রাগ করে পাশ দিয়ে চলে গেছি। গিয়েই ভুলটা বুঝতে পেরেছি। উত্তর দেওয়া উচিত ছিল। শয়তানেরও অনুশোচনা হয়। আমারও হ’ল। একজন শ্রদ্ধেয় মানুষের প্রতি কুৎসিত শারীরিক ভাষার জন্যে। বোধহয় খেয়াল করেন নি। ভাবলাম। পরে হেসে অনেক কথাও হ’ল। বুঝলাম ধরতে পারেন নি। নিশ্চিন্ত হলাম, কিন্তু তখনও এ কে এম স্যারকে পুরো চিনি নি! চিনলাম।পরে….
অনুষ্ঠানের পরে দু’ সপ্তা পার হয়ে গেছে। নিজের ঘরে বসে গ্রিপার সেটিংসের ওপর নোট বানাচ্ছি এমন সময় অফিসের কর্মী নিমাইদা এসে জানাল, এ কে এম স্যার ডাকছেন। এই রে, সেই প্রসঙ্গ না কি! ভয়ে ভয়ে গেলাম তার ঘরে, দেখি চায়ের ফ্লাক্স থেকে ঢেলে চা খাচ্ছেন। আমায় এক কাপ দিয়ে বললেন, “নে চা খা। কী সারাক্ষণ লিখিস! মাঝে মাঝে রিল্যাক্সও করতে হয়।” চা খাচ্ছি, একথা ওকথা করে বললেন, বাড়িতে টিভি আছে?”
–“হ্যাঁ”
–“ডিসকভারি চ্যানেল দেখিস?
—“দেখি তো”
—” ফণা তোলা সাপ দেখেছিস?”
—-“তা দেখেছি।”
—-“আচ্ছা ফণা তোলা অবস্থায় সাপকে এগোতে দেখেছিস?”
—-“না তো!”
এ কে এম স্যার চওড়া করে হাসলেন, বললেন
—“ফণা নামালে তবেই আবার এগোতে পারে, তাই না?….”

মনে রাখার চেষ্টা করেছি সেই কথা। আজও।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।