মার্গে অনন্য সম্মান খুশী সরকার (সেরার সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার 

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৬০
বিষয় – দোসর/সুখী গৃহকোণ / সমর্থন / জন্মাষ্টমী

অবুঝ মাতৃত্ব

গাড়িটা হুস্ করে বেরিয়ে গেল চোখের সামনে। অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত একদৃষ্টিতে তাকিয়েছিল দীপা। চোখের কোল বেয়ে জল পড়ছে গড়িয়ে। আঁচলের খুঁট দিয়ে মুছতে মুছতে ধিরে ধিরে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। অবশেষে বাড়িটা ফাঁকা হয়ে গেলো অথচ মাত্র 24 ঘণ্টা আগেও গমগম করছিল আনন্দে শরতের ঝলমলে রোদের মতো কিন্তু এর মধ্যেই এক গভীর শূন্যতা চারদিকে। ঘরের ভিতরে সিঁড়ির উপরে ছাদে সব জায়গাতেই যেন এক গভীর নৈঃশব্দ্য জমাট বেঁধে আছে শীতের কুয়াশার মতো। দীপা বিষন্ন মনে ঘরে ঢুকেই দেখে বিক্ষিপ্ত ছড়ানো জিনিসপত্র। চারিদিকে সুপ্তির ব্যবহৃত জামাকাপড় গুলো যেন হা করে তাকিয়ে আছে দীপার দিকে হঠাৎ নজর পড়ে সুপ্তির আঁকা স্বামী বিবেকানন্দের ছবিটার উপর। ছবিটা ঘরের খাটের উপরে পড়ে আছে খোলা অবস্থায়। সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়ে যত্ন করে পরম স্নেহে হাত বুলায় তার উপর। এই ছবিটা এঁকে দীপাকেই প্রথম দেখাতে এসে উদ্গ্রীব হয়ে বলেছিল, ‘ছবিটা কেমন হয়েছে মাসি?’ ছবিটার নিখুঁত আঁকায় অবাক হয়ে বলেছিল, ‘বাহ সুন্দর এঁকেছিস তো! এই কথা শুনে দারুণ আনন্দ হয়েছিল সুপ্তির সেদিন। তারপর স্কুলে দেখানো হয়ে গেলে এই ঘরের টেবিলের উপরই আছে। দীপা অপলক চেয়ে থাকে ছবিটার উপর। নজর পড়ে আলনায় রাখা তার গতবছরের স্কুলের ইউনিফর্মে্র উপর। এবছর একটা নতুন ইউনিফর্ম বানিয়ে দিয়েছিল দীপা। কী যত্নশীল ছিল মেয়েটা! সবকিছুই খুব যত্নে পরম মমতায় গুছিয়ে রাখতো। তার ভালবাসার ছোঁয়ায় ঘরটা হাসত তাকে দেখে। এখন যেন গভীর বিষন্নতা নিয়ে চেয়ে আছে খোলা দরজার দিকে। খুঁটিনাটি সব দিকেই নজর ছিল ওর। এই সব কাজ করতে গিয়ে তাঁর পড়তে বসতে দেরি হলে দীপা রাগ করে অনেক সময় বকেছে সুপ্তিকে। অথচ তার মুখে একটিও রা ছিল না, শুধু অপরাধীর মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকত আর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় ঝরতো অশ্রু দুগাল বেয়ে। কিন্তু আজ যেন সব রাগ অভিমান ভুলে জল হয়ে পড়ছে চোখ থেকে। আজ সব তীরের মত এসে বিঁধছে তার বুকে।
যাওয়ার আগে সুপ্তি তার নিজের জিনিসপত্র সব গুছিয়ে রাখছিল আগের মতোই। দীপা বুঝতে পারছিল সবই কিন্তু কিছু বলতে পারেনি। রিতাও বুঝতে পারছিল দিদির মনের অবস্থা। তাই যাবার সময় ধরা গলায় খুব কষ্টে বলেছিল “আজ আসি রে দিদি’ ভালো থাকিস” দীপার কষ্ট যেন মিশে ছিল তার গলায়। তারপর যখন সুপ্তি এসেছিল প্রণাম করতে তখন আর চোখের জল বাঁধ মানেনি দীপার। হাউমাউ করে কেঁদেছিল দীপা বুকে জড়িয়ে।কান্না ভেজা গলায় বলেছিল, “আবার আসবি তো? মাসিকে মাঝে মাঝে দেখতে?” তখন আর মাসির মুখে তাকাতে পারেনি সুপ্তি। ঝর ঝর করে জল পরছিল চোখ থেকে। শুধু মাথাটা নীচু করে অস্ফুটে ঘাড় নেড়ে বলেছিল,”হ্যাঁ।” দূরে বসে ছিল দীপঙ্কর। তাঁকে গিয়ে প্রণাম করে সুপ্তি কেঁদে বলেছিল,”মেশো, আসি।” দীপঙ্কর‌ও বিষন্নমনে বলেছিল, “হ্যাঁ,আবার আসিস, সুবিধেমতো।” কিন্তু দীপঙ্কর জানে ওখানে গিয়ে পড়াশোনায় ওর আরো চাপ বাড়বে, তার আসা সম্ভব হবে না। তবুও এই মেয়েটাই তো গত ছয় বছর ধরে আমাদের নিঃসঙ্গ জীবনের শূন্যতা ভরিয়ে দিয়েছে কিন্তু পরের সন্তান আর কতকাল অন্যের মাতৃত্বের ভার বহন করতে পারে !
দীপঙ্করের মনে হল এখন দীপার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। ক’দিন ধরে যা ওর উপর গেল, একদিকে নিজের স্কুলের পরীক্ষা অন্যদিকে বোনঝির পরীক্ষার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা,যাক দুটোই ভালো ভালো মিটে গেছে এখন একটু বিশ্রাম নিক।
কিন্তু দীপার বিশ্রাম তো তার প্রিয় বোঝির স্মৃতিচারণে। যেদিকেই তাকায় শুধু ওর স্মৃতি‌ই তার চোখে পড়ে। টেবিলের উপর ছড়িয়ে আছে তার খাতা বই, হাতের রুমাল, ব্যাগ। এই তো এক সপ্তাহ আগেও এই ঘরেই কত শব্দ করে পড়তো সুপ্তি। তার গলার স্বর যেন চার দেওয়ালে লেগে আছে এখনো। এখনো যেন জামাকাপড়ে তার উপস্থিতির গন্ধ ছড়িয়ে আছে সারা ঘরে। পরীক্ষা নিয়ে ভীষণ চিন্তা তার। একটুও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ভাবতো না। হয়তো বুঝেছিল মাসি তাকে না খাইয়ে ছাড়বে না। দীপা সময়মতো খাইয়ে দেওয়া পড়া বুঝিয়ে দেওয়া—- বাড়িটা গমগম করত।
পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগের দিন রাতে এলো রিতা। সত্যিই তো মেয়ের পরীক্ষা হলে কি থাকতে পারে? রিতা তো জানে তাই একটু সাহায্য করতে এসেছে। সাতদিন ধরে চলল পরীক্ষার ব্যস্ততা শেষ পরীক্ষার আগের রাতে রিতা বলে,”দিদি, কাল তো সুপ্তির পরীক্ষা শেষ হয়ে যাচ্ছে, ওকে এবার নিয়ে যায়। ভেবেছি উচ্চমাধ্যমিকে ওখানেই ভর্তি করে দেবো।” যেন আকাশ ভেঙে পড়ে দীপার মাথায়। হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। “নিয়ে যাবি?”বলেই আবার তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ যেন তার বুকটা হাহাকার করে ওঠে। শরীরটা হালকা হয়ে যায়,অন্তরটা ফাঁকা হয়ে যায় মুহূর্তে। ওদিকে রিতা আপন মনেই বলতে থাকে, “আসলে দিদি, ওখানে তো গিয়ে আবার টিউশন পড়ার জন্য খোঁজখবর করতে হবে, কোন্ স্কুলে ভর্তি হবে তার ব্যবস্থা করতে হবে, ফর্ম ফিলাপের ব্যাপার আছে, নানান কাজ আছে তাই ভাবছি এখন‌ই সঙ্গে করে নিয়ে যায়। কিন্তু এসব কথা কিছুই যেন দীপার কানে ঢুকছিল না,সে আপন মনে ভেবে চলেছে, “নিয়ে যাবে”! “দিদি কি ভাবছিস?” রিতার কথাতে চমক ভাঙ্গে দীপার। অন্যমনস্ক ভাবে জানিয়ে দেয়, “ঠিক আছে” কিন্তু অন্তর তার একথা সমর্থন করে না। মুহূর্তে ভেসে ওঠে তার সেদিনটা—– একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে যেদিন শ্বশুর ঘরে চলে গেল সেদিনও এমনিভাবেই হৃদয়টা তার হাহাকার করে উঠেছিল। শুন্য হয়ে গিয়েছিল ভেতরটা। তখন অপত্য স্নেহের হাহাকারে বিদীর্ণ বক্ষ মরুভূমির মতো তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে চেয়েছিল আকাশে এক পশলা বৃষ্টির জন্য। তারপর দু বছরে সেই তৃষ্ণা থিতু হয়েছে একটু একটু করে।
হঠাৎই একদিন সন্ধ্যায় বেজে উঠল মোবাইল। ফোন ধরতেই ওপার থেকে ভেসে এলো “দিদি, কেমন আছিস?” রীতার কণ্ঠস্বর শুনে অনেকটা আবেগ জমতেই আবার ভেসে এলো, “তোকে একটা অনুরোধ করবো,রাখবি?”
“বল্ না”বলল দীপা।
” আমরা ভেবেছি সুপ্তিকে তোর কাছে রাখবো। ওর শরীরটা কিছুতেই এখানে ভালো যাচ্ছে না। এবার পঞ্চম শ্রেণীতে উঠবে। তোরা তো এখন বাড়িতে শুধু দুজনেই থাকিস, তাই।আর সুপ্তি থাকলে তোর‌ও ভালো লাগবে।
“কি বলছিস তুই, সত্যি?” অবাক হয়ে বলে দীপা।
“হ্যাঁ দিদি,সত্যি”।তোর কাছে থাকলে আমরাও নিশ্চিন্ত থাকবো। রীতার কথায় দীপা যেন হাতে স্বর্গ পায়। কয়েকদিন পর রীতা সুপ্তিকে নিয়ে এলো। ওকে দেখেই যেন দীপার মরুভূমির বুকে এক পশলা বৃষ্টির রসে নতুন করে জেগে উঠলো মাতৃত্ব। ছোট্ট সুপ্তি যেন দীপার সোনাই এর প্রতিরূপ হয়ে উঠল ধীরে ধীরে। ওর “মাসি” ডাকে যেন দীপার শুকনো বুকে একটা ঢেউ খেলে গেল। সোনাইএর ছোট বেলায় একটু ব্যথা পেলে বা কোনো কষ্টের কান্না শুনে দীপার বুকের ভেতর এমন‌ই হতো। একদিন দীপা দেখল, ও ঠিকমতো ভাত মেখে খেতে পারে না আর সামান্য একটুখানি খায়। সেই থেকে ও নিজে পাশে থেকে ভাত মেখে ডাকে,”আয়, আমি খাইয়ে দিই”।
“না,আমি নিজে খাবো” উত্তরে বলে সুপ্তি।
“না, আমি খাইয়ে দেবো। তোর শরীর সুস্থ না হলে পড়াশুনা করবি কেমন করে? পড়াশোনা করতেও তো শক্তি লাগে,তাই না? আয় মা, আমি‌ই খাইয়ে দিই,হ্যাঁ?” আদরে স্নেহে দীপা ডাকে।
তারপর দেখে সবজি কিছুতেই খেতে চায় না ও। সবজি একদম না পছন্দ ওর। তারপর থেকে ভাতের সঙ্গে সবজি একসঙ্গে মেখে দলা করে খাওয়াতে খাওয়াতে কবে যে মাসি থেকে মা’ হয়ে উঠেছে, তা সে নিজেও জানে না অন্যদিকে ছোট্ট বোনঝি মাসি অন্তপ্রাণ হয়ে উঠেছে। মাসির বড় ভক্ত।মাসি ছাড়া তার একদণ্ড‌ও চলে না। মাসির খাওয়া-দাওয়ার দিকে ওর ‌কড়া নজর। সবচেয়ে ভাল লাগত দীপার যখন সবাই বলত, “দীপার দুই মেয়ে”।
দীপার প্রতিবেশী শিলার মা একদিন বিকেলে দীপাকে জিজ্ঞেস করে, কি গো তোমার ছোটো মেয়ে কোথায়, কয়দিন ধরে দেখছি না?
ও সুপ্তি ? ওর পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে তো, তাই কয়দিন ঘুরতে গেছে— হেসে উত্তর দেয় দীপা। সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিতো সুপ্তির শিল্পী মানসিকতা। দারুণ ওর ছবি আঁকার হাত। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে-মাঝে বসে যেত
ছবি আঁকতে।আর এইসব গুণে দীপা ভিতরে একটা মাতৃত্বের তৃপ্তিবোধ অনুভব করে।
হঠাৎ একদিন দীপার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় এলো দীপার কাছে তার পারিবারিক একটা সমস্যার সমাধানের কারণে।এসে দেখে দীপা নেই। ততক্ষণে সুপ্তি স্কুল থেকে ফিরেছে।সুপ্তি তাকে চিনতে না পেরে বলে, আপনি বসুন। মাসি কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে যাবে।আধা ঘন্টা পর এসে দীপা তো দেখে অবাক! “আপনি”?
“হ্যাঁগো, তোমার কাছে এসেছিলাম কিন্তু জানো তুমি না থাকায় ভাবছিলাম চলে যাবো ফিরে, আর একদিন আসবো কিন্তু “তোমার এই মেয়েটির
দারুণ ব্যবহার। আমাকে বসতে দিল। চা করে খাওয়ালো” উচ্ছ্বাসে কথাগুলো বলতে থাকে ভদ্রমহিলা। আরো বলে, খুব মিষ্টি ব্যবহার ওর। সত্যিই ভীষণ ভালো মেয়ে।
“ও তাই” হেসে বলে দীপা।
“হ্যাঁ গো” সত্যি বলছি, ভীষণ ভালো মেয়ে তোমার
বোনঝি। তারপর মহিলা চলে যেতেই খুব আদর করে বলে দীপা, “তুই আমার সত্যিই মেয়ে হয়ে উঠেছিস সুপ্তি। সত্যি তুই আমার সোনাইকেও ছাড়িয়ে গেছিস। তোর মিষ্টি ব্যবহার সত্যি যতই দেখছি ততই যেন মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। জীবনে তুই অনেক, অনেক বড় হবি। তুই এখানেই থাকবি। আমি তোর উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করবো, যা যা লাগে সব ব্যবস্থা আমি করবো। তুই এখানেই থাকবি, আমাকে ছেড়ে যাবি না তো কোনোদিন?” সুপ্তি মাসির কথায় মুচকি হাসে, কোনো উত্তর দেয় না। মৌনতায় সমর্থনের লক্ষণ। মনে মনে এই ধারণা পোষণ করে নিজেকে তৈরি করেছে দীপা। সে মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে, আর হয়তো তার বোন রীতাও এই বিষয়ে কোনো আপত্তি করবে না কারণ তাদের মেয়ের তো সে দায়িত্ব নিচ্ছে, তার কোনো ক্ষতি তো করছে না। ওদের যা ইচ্ছা সেই ইচ্ছে তো দীপার‌ও।তাই ভাবনাটাকে ধীরে ধীরে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে মনে মনে ইমারৎ করতে চেয়েছে সে। চরম ব্যস্ততা আর নানা ভাবনার মগ্নতায় কেমন করে যে পরীক্ষার সাতটা দিন শেষ হয়ে গেল দীপা বুঝতেই পারেনি। শেষের দিন হঠাৎ রীতা বলে, “যাক,পরীক্ষা আজ শেষ। টেনশন মুক্ত হবো বল্ দিদি?” “হ্যাঁরে রিতা, সত্যিই ভীষণ ভালো লাগছে। পরীক্ষার দিনক’টা বুঝতেই পারলাম না।
আজ জমিয়ে আড্ডা দেবো আমরা, খুব মজা করে সবাই একসঙ্গে চা সিঙ্গারা খাবো– ভীষণ উৎসাহিত হয়ে বলে সুপ্তি।
“ঠিক আছে, খুব মজা হবে। তোর মেসোকে ভালো দেখে সিঙ্গারা আর মিষ্টি আনতে বলবো” আনন্দে উচ্ছাসে বলে দীপা। সন্ধ্যায় টেবিলে চলছে হাসি হৈ-হুল্লোড়ে চা মিষ্টি খাওয়া, এমন সময় রীতা জানায়,”দিদি, পরীক্ষা তো শেষ। এবার উচ্চমাধ্যমিকের চিন্তা। ওখানে ভর্তির জন্য ব্যবস্থা করতে হবে, তাই ভাবছি কাল‌ই ওকে নিয়ে বাড়ি যাবো। আকাশে তাকিয়ে দেখে দীপা আকাশে ঘন কালো মেঘ ছেয়ে গেছে। চারদিকে কেমন যেন অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, এখনই হয়তো মুষলধারে বৃষ্টি নামবে। তার মধ্যেই রীতার এমন ইচ্ছে প্রকাশে দীপা আঁৎকে ওঠে। বুকটা ধড়াস ধড়াস করে আছড়ে পড়ছে যেন। এ কী কথা শুনছে সে,তার মাথা ঘোরে, ভেবে পায় না কি উত্তর দেবে সে? “যাস” অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর মাথা নেড়ে জানায়। বাইরে তখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। একভাবেই তাকিয়ে থাকে জানলার দিকে।
পরদিন রিতা সকালে উঠেই জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়।রিতা দীপার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে,দিদি,ও যখন‌ই ছুটি পাবে তখন‌ই তোদের সঙ্গে দেখা করে যাবে। কিন্তু দীপার অবুঝ মাতৃত্ব কিছুতেই সে কথা মানতে পারেনি। তবুও তার আর কিছুই করার ছিল না। তাই অবুঝ মনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছে,পরের সন্তানকে কি ইচ্ছে হলেও রাখা যায়? মনের ব্যথা মনেই চেপে রান্না করে খাইয়েছে হাসি মুখে।ওরা চলে যেতেই একরাশ অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে দীপা সুপ্তির রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্নগুলোকে আঁকরে ধরে ডুবন্ত মানুষের মতো।বার বার হাতরে খোঁজে ওর ব্যবহারের জিনিসগুলো।
“কেন এত পাগল হচ্ছো?”দীপঙ্করের কথায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে দীপা। হাহাকার করে ওঠে ওর ভেতরটা। সজোরে কাঁদতে কাঁদতে অস্ফুটে বলে, “তুমি বুঝবে না।ও যে আমার মেয়ে নয়,একথা ভাবতে পারছি ক‌ই,ও যে ছিল আমার সোনাইয়ের দোসর, আমার মেয়ের প্রতিরূপ।”
“আবার আসবে দেখো” সান্ত্বনা দেয় দীপঙ্কর।
“আর আসবে না,ও যে আমার হৃদয়টা টুকরো টুকরো করে ভেঙে দিয়ে গেল। এই ভাঙা মন নিয়ে আমি বাঁচবো কিভাবে,বলতে পারো?” বাইরে তখন আবার বৃষ্টির শুরু হয়েছে। বৃষ্টিতে ভেজার ভয়ে পাখিরা আকাশ মুখরিত করে ফিরছে নীড়ে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।