পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হল আজ! মা আসছেন মর্তে। কাসর, ঘন্টা ও উলু ধ্বনির মাঝে আগমনীর আগমন বার্তায় ধরণী আজ উল্লসিত, তৃপ্ত। কিন্তু এই শুভ তিথির আবির্ভাবের পশ্চাতে রয়েছে এক কাহিনী যা মানব জাতির কাছে আজও অজ্ঞাত!
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের কাছে বধ হবার পশ্চাতে মহাবীর কর্ণ স্বর্গে গমন করেন। কিন্তু সেই অমৃতলোকে আহারে তাঁকে স্বর্ণ ও রৌপ্য দেওয়া হয়। কর্ণ তখন যমরাজকে প্রশ্ন করেন তাঁর সাথে এই রূপ ব্যবহার কেন? যমরাজ তখন তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে জীবিত কালে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের জল ও তিল অর্পণ করেননি, তাই তাঁকে এই আহার দেওয়া হয়েছে। হতভম্ব কর্ণ বলেন যে জন্ম সময় তাঁর জননী তাঁকে পরিত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে অধিরথ ও রাধার কাছে প্রতিপালিত হন। ধৃতরাষ্ট্র পুত্র দুর্যোধন তাঁর শৌর্যে প্রীত হয়ে তাঁকে অঙ্গরাজ ঘোষণা করেন। এরপর শ্রী কৃষ্ণ ও পঞ্চপাণ্ডব জননী কুন্তী তাঁর সম্মুখে তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত প্রকাশ করেন, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের এক দিন পূর্বে। এরপর যুদ্ধ আরম্ভ হলে, তিনি মাত্র ১৬-১৭ দিন বেঁচে ছিলেন। তাই তাঁর সময় ছিল না। যমরাজ এই কথা শ্রবণ করবার পর বলেন:”কর্ণ, তুমি সারা জীবন যুদ্ধের কথা ভেবেছ। তাই তার পুণ্যবলে তুমি আজ আমার সম্মুখে। কিন্তু পূর্বপুরুষদের প্রতি তোমার উদাসীনতার কারণে এই শাস্তি”। মহাবীর কর্ণ তখন উপায় জানতে চায় যমরাজের নিকট! যমরাজ তখন বলেন উপায় একটা আছে। কর্ণকে মর্তলোকে ফিরে যেতে হবে। কুন্তিনন্দন তখন যমরাজের কথা মত ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপদ তিথিতে নেমে আসেন এই বসুন্ধরায়। সূচিত হয় পূর্বপুরুষদের প্রতি তিল ও জল নিবেদন। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে তাঁর সঙ্কল্প পূর্ণ হলে ফিরে যান স্বর্গে চিরতরে! তাই আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিই হল মহালয়া। এর সাথে দুর্গাপূজা বা মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের কোন যোগসূত্র নেই।
১৯৭৬ সালে কলকাতা দুরদর্শনের অনুষ্ঠান এই মহালয়া উপলক্ষে পুজোর প্রথম দিন , অর্থাৎ মহাষষ্ঠীর দিন পুনপ্রচার করা হয়। তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সাধারণ জনগণের এই রূপ প্রতিক্রিয়ায়ে অনুষ্ঠানটি তাঁর মূল ক্ষেত্রেই রাখা হয়। পাশাপাশি মহানায়ক উত্তম কুমারের মহিষাসুরমর্দিনী স্থত্রপাঠ শ্রোতারা বর্জন করে। ফিরে আসে সেই অমলিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ: “আশ্বিনের শারদ প্রাতে…” তবে এই বারের দেবী বন্দনা শুরু হবে মহালয়ার এক মাস বাদে। পরপর দুটি অমাবস্যা তিথির কারণে, আশ্বিন মাস এক মল মাস রূপে প্রকাশ পেয়েছে। তবুও মা আসছেন। এর থেকে আর বড় কিছু কি হতে পারে! মায়ের আশীর্বাদে কেটে যাবে সকল দুর্দশা, গ্লানি, অতিমারী, মহামারী ও ক্লেশ। তাই প্রহর গোনার পালা শুরু!!