সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে কুণাল রায় (পর্ব – ৩৯)

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা :

সপ্তদশ অধ্যায় : শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগ যোগ : অন্তিম পর্ব :

ভগবান অর্জুনকে বললেন যে পরমেশ্বর, ব্রাহ্মণ, গুরু, প্রাজ্ঞগণের পূজা এবং শৌচ, সরলতা, ব্রহ্মচর্য ও অহিংসা – এ গুলিকে কায়িক তপস্যা বলা হয়। উদ্বেগহীন, সত্য, প্রিয় কিন্তু হিতকর বাক্য এবং বৈদিক শাস্ত্র পাঠ করাকে বাচিক তপস্যা বলা হয়। অন্যদিকে চিত্তের উৎফুল্লতা, সরলতা, মৌন, আত্মনিগ্রহ ও ব্যবহারে নিষ্কপটটা – এই সকলকে মানসিক তপস্যা বলা হয়।

 পরমেশ্বর আরো বললেন তাঁর সখাকে যে ফলের প্রার্থনা না করে শ্রদ্ধা সহকারে যে ত্রিবিদ তপস্যা অনুষ্ঠিত হয় তাকে সাত্ত্বিক তপস্যা বলা হয়। শ্রদ্ধা, মান ও পূজা লাভের প্রত্যাশায় যে তপস্যা করা হয় তাকে রাজসিক তপস্যা বলে। পরিশেষে আপনাকে পীড়ন প্রদান করে অথবা অপরের সর্বনাশের জন্য যে তপস্যা করা হয় তাকে তামসিক তপস্যা বলা হয়।
   ভগবান আরো বলেন যে দান করা কর্তব্য মনে করে যে দান করা হয় তাকে সাত্ত্বিক দান বলা হয়। তবে কোন রূপ প্রত্যাশা না করে, উপযুক্ত স্থানে ও উপযুক্ত পাত্রে এই দান সম্ভব। অন্যদিকে যে দান ফল লাভের আশায় ও অনুতাপ সহকারে করা হয় তাকে রাজসিক দান বলা হয়। অনাদরে, অপবিত্র স্থানে, অযোগ্য পাত্রে এবং অবজ্ঞা সহকারে যে দান করা হয় তাকে তামসিক দান বলে।
পুরাকালে ওম, তৎ সৎ – এই ত্রিনাম দ্বারা ব্রাহ্মগণ, বেদসমূহ ও যজ্ঞসমূহ বিহিত হয়েছে। তাই ব্রাহ্মণ সমাজকে দান, যজ্ঞ ও তপস্যা কালে সদা ‘ওম’ উচ্চারণের দ্বারা সম্পন্ন করা হয়। মুক্তি কামীরা ফলের প্রত্যাশা না করে “তৎ” এই শব্দ উচ্চারণ পূর্বক নানা প্রকার যজ্ঞ, তপস্যা, দান আদি কর্মের অনুষ্ঠান করেন।
 সৎ ও সাধুরুপে এই “সৎ” শব্দটি প্রযুক্ত হয়। সকল শুভ কর্ম যেমন দান, ধ্যান, তপস্যা ইত্যাদিতে “সৎ” শব্দ উচ্চারিত হয়। কিন্তু  অশ্রদ্ধা সহকারে যে দান, ধ্যান ও তপস্যা অনুষ্ঠিত হয় তাকে “অসৎ” বলা হয়। সেই সকল ক্রিয়া ইহলোক ও পরলোকে ফলদায়ক হয় না।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।