গুরু পূর্ণিমার এই পুণ্য তিথি হয়ে উঠুক এক সঠিক পথপ্রদর্শক – লিখেছেন কুণাল রায়

জীবনে চলার পথে, স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথে, আমাদের যেই ব্যক্তি এক সঠিক পথপ্রদর্শক রূপে আমাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করেন, তিনিই জীবনের আদর্শ, আমাদের গুরু। এই শব্দটি কত সামান্য, অথচ লুকিয়ে আছে এক অসামান্য তাৎপর্য। “গু” শব্দটির অর্থ হল অন্ধকার এবং “রু” শব্দটির অর্থ হল এক আলোর দিশা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমাদের জীবনের সকল অন্ধকার ঘুচিয়ে, আলোর দিকে নিয়ে যায়, তিনিই এই গুরুপদে আসীন হন।
গুরু পূর্ণিমাকে আমরা ব্যাস পূর্ণিমাও বলে থাকি। মূলত জৈন ও বুদ্ধদের এক বাৎসরিক উৎসব। শোনা যায় এই দিনেই ভগবান বুদ্ধ তাঁর প্রথম বাণী প্রচার করেছিলেন সারনাথে। সহজ সরল পালি ভাষার ব্যবহারে জয় করেছিলেন জনপ্রীতি। সেই সকল দিন আজ অতীতের স্বর্ণ পাতায় ঠাঁই পেয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই তিথির আদৌও কোন তথ্য আছে কিনা, সেই ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। গুরু যে পিতা মাতারও উর্দ্ধে একথা তাঁরা স্বীকার করতে চায় না। শিক্ষক মহলে এই নিয়ে যথেষ্ট অসন্তোষও আছে। সকালে খবরের কাগজের পাতা খুললেই শিক্ষক অথবা শিক্ষিকার নিগ্রহের কাহিনী উপস্থিত। এক কথায় এক অরাজকতা! কোন পুরোনো শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে প্রণাম করবার রীতিও আজ আর চোখে পড়ে না! ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে যে মধুর সম্পর্ক থাকা উচিত, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক প্রকার তিক্ততার পরিচয় বহন করে! প্রশ্ন হচ্ছে কে কাকে মানিয়ে নেবে: ছাত্ৰ শিক্ষককে না শিক্ষক ছাত্ৰকে! আমরা বুঝতে অক্ষম যে তারা একে অপরের পরিপূরক। তাঁদের একতাই এই সমাজকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে, অস্তিত্ব রক্ষা করতে শেখাবে!
অনন্ত জলরাশির মাঝে চারিদিক আলো করে বিরাজমান এক লৌহ কাঠামো। নাম তার “ব্যাকন”। কত দিকভ্রষ্ট নাবিককে যে পথ দেখায়, তা অগণিত! তার অস্তিত্ব হিমালয় পর্বতসম। আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনে পিতাই হচ্ছে পরম গুরু। কিন্তু জীবনকে যিনি জীবনের স্রোতের সাথে মিলিয়ে দিতে সাহায্য করে, তিনিই একমাত্র অবলম্বন। তাই তাঁকে অসম্মান, তাচ্ছিল আমন্ত্রণ জানায় এক বিপর্যয়কে, নিশ্চিতরূপে। তাই আজ এই মাহেন্দ্রক্ষণে আসুন আমরা সকলে সেই পরম গুরুকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি যিনি উপহার দিয়েছেন এই সুন্দর পৃথিবীকে!!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।