—এক্সকিউজ মি ম্যাডাম! আসতে পারি?
—না পারেন না, রাত বারোটার পর আমি ডাইনিং রুমে নয় বেড রুমে থাকি, এটা আমার প্রাইভেট স্পেস, যে কেউ এলাউড নয়।
—ওকে, বাই চলি, ভালো থাকুন।
—না থামুন, নক করে যখন স্যাঁতস্যাঁতে ঘুম ভাঙিয়েই দিলেন, তখন থাকুন না হয়, কি বলবেন বলুন! কোনো দরকার নিশ্চই?
—ম্যাডাম আমার ঘরের এসি টা চলছেনা, বাথরুমের কল থেকে জল পড়ছেনা, ফ্রিজের ভেতর লাইট জ্বলছে না, ইলেক্ট্রিশিয়ান জানা আছে কোনো?
—মানে? আপনি কি পাগল। এই রাত তিনটের সময় এসব আজব প্রশ্ন করছেন, আর তাও আবার একটা অচেনা মানুষকে, অদ্ভুত তো! আমি আপনার ইয়ার্কি মারার পাত্রী নই, যান তো, অসহ্য!
—এই তো ম্যাডাম চটে যাচ্ছেন, নিজেই বললেন কি দরকার বলতে! আর যেই প্রয়োজনের কথা বলতে শুরু করলাম, ওমনি আপনি রেগে গেলেন।
—রাত দুপুরে চ্যাংড়ামি করতে ভাল্লাগছে? ভালোই তো ভ্যাজভ্যাজ করতে পারেন, তা দিনে কটা মেয়ে তোলেন এভাবে?
—সে প্রচুর মেয়ে! এক একজন হুর পরী জানেন, স্রেফ ডানা নেই, কেউ মাছ কাটার বঁটি এনে কেটে দিয়েছে, আমি তাদের ডানা সারাইয়ের কাজ করি। যাকগে আপনি যখন পটলেন না, দেখি আর কাউকে পাই কিনা! চলি, ভালো থাকুন।
—দাঁড়ান, যাবেন না, আমি অনুমতি দিইনি আপনাকে, যেতে পারবেন না এই মুহূর্তে আপনি। কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান। কেন যত্ন করে কারোর ক্ষতয় বোরোলিন লাগান? আই মিন ফুঁটো হৃদয়ে হাওয়া ভরতে ভালো লাগে আপনার?
—আপনি কবিতা কেন লেখেন স্বচ্ছতোয়া? মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলতে আপনার ভালো লাগে? এই মুহূর্তে আপনার লেখা পড়ে দশটা মানুষ কেঁদে উঠবে, পাঁচটা মানুষ খিল্লি করবে, চারটে মানুষ হেসে উঠবে, দুটো মানুষের প্রচন্ড প্রেম পাবে, ছয়টা মানুষ ফোনে তাদের প্রেমিক প্রেমিকা কে বলবে স্বচ্ছতোয়া দির লেখার মতো করে প্রেম করবি রে? হা হা হা…এতগুলো মানুষের ইমোশন নিয়ে নারচার কেন করেন? এ তো অপরাধ…
—মানে? আপনি কি বলছেন, আপনি নিজে জানেন সেটা? আপনি রীতিমতো এলিগেশন আনছেন আমার বিরুদ্ধে। আপনি শুধু দেখলেন আমি মানুষের আবেগ নিয়ে ফুটবল খেলছি, আর আমার আবেগ! আমার ইমোশন! তার কোনো গুরুত্ব নেই?
এইযে নিজের অনুভূতিগুলোকে সাপ্রেস করে, কোনো একটা ভারি পাথরের সাহায্যে চাপা দিয়ে অন্য একটা মানুষের ইমোশন নিজের ভেতর ভেতর উপলব্ধি করা, এ যে বড় কষ্টের ফারহান। সারাদিন আবেগ নিয়ে খেলতে খেলতে দিনের শেষে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ি, খুব কষ্ট হয় জানেন, মাথা ব্যথা করে, শিরাগুলো ছিঁড়ে যায় আমার, কত রাত ঘুমাইনা।
বিশ্বাস করুন আমি কবিতা লিখতে পারিনা, কত মানুষ কবিতা লেখে, আহা কি দারুণ কবিতা! পড়লে মনে হয় ক্ষুধার্ত ঘোড়ার কাছে কেউ এক মুঠো ঘাস ফেলে গেলো, কি শান্তি, কি সুন্দর! মনে হয় যেন আকাশ থেকে মা নেমে এসে আমার গায়ের চাদরটা টেনে দিলো।
মনে হয়…মনে হয় অহংকার ঝেড়ে ফেলে কোনো নারী নগ্ন শরীরে এসে দাঁড়িয়েছে নদীর ধারে, যদি বাই চান্স আমি চাঁদটাকে পুরুষ ভাবি, তবে ভাবুন তো ফারহান, চাঁদের আলো সেই মুহূর্তে ল্যাংটো নারীর শরীর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াবে কেমন! পাতায় পাতায় জ্বলে উঠবে আগুন।
আমি তো এমন কিছুই লিখতে পারিনা, যা লিখি এ নিতান্তই সামান্য অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি, ওইযে আপনি জিগেস করলেন কেন লিখি! আমার ভালো লাগে মানুষ ঘাঁটতে, আমার নেশা এবং ফেভরেট পেশাও ভেবে নিতে পারেন।
তবে আমার ভাষা বড্ড সহজ, যেমন কোনো শিশুর গায়ে লেপ্টে থাকে দুধের ঘ্রাণ…
—হা…হা..হা জানি তো স্বচ্ছতোয়া! সেই কারণেই তো এলাম আপনার কাছে, দুমিনিট বসবো বলে, আপনার মাথায় শান্তিজল ছোঁয়াবো বলে। আপনি কখনো কোনো মেঘকে পাহাড়ের কাছে ঝুঁকে যেতে দেখেছেন? আমি আজ রাতের মতো সাদাটে সাদাটে ছেঁড়াফাটা মেঘ হলেম আপনার…
আপনি আমায় ফুটবল ভেবে জোরে একটা কিক মারতেই পারেন, আপনার স্ট্রেস আউট হবে।
—ওহ! এত সহজে নিজেকে ভেঙে ফেললেন যেন কোনো ধসে যাওয়া বাড়ি! আমার বৃষ্টি ঝরে পড়া নিস্তেজ উঠোনে সন্ধেপ্রদীপ জ্বালাতে এসেছেন তাইতো ফারহান? আমাকেও বুঝি বাকি পাঁচটা মেয়ের মতো হুর পরী ভাবলেন যার ডানা কেটে গেছে কোনো ঝড়বাদলের দিনে?
—আহা! আমি মানুষকে এত কিছু ভাবিই না, শুনুন মানুষের সম্পর্কে এতকিছু ভাবতে নেই, শুধু তাদের ছুঁয়ে দেখতে হয়। মানুষ বড্ড দরকারি জিনিস জানেন তো! মুহূর্তে আছে, আবার মুহূর্তেই নেই হয়ে যাবে। আমি আনপ্রেডিক্টেবল মানুষ, কারোর সম্পর্কে কোনো ধারণা তৈরি করিনা। যে কোনো ধারণা যে কোনো সময় পাল্টে যেতে দেখেছি যে।
যাকগে, আর একটাও কথা নয়, চুপ…চুপ, যান ঘুমিয়ে পড়ুন।
—শুনুন…
—বলুন।
—কিছুনা, কেটে পড়ুন এখন, আমায় ঘুমোতে দিন।
—যান স্বচ্ছতোয়া, অনেক রাত হলো, আমি আবার আসবো আপনার কাছে, অপেক্ষা করুন…
—আপনি আসবেন ফারহান?