গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

আমি মোঃ শাহাদত  হোসেন, বিএলএফ,                                                                                      গেজেট নম্বর-সিংড়া – ৯৬০, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর – ০৩০৪০২০০৬৯, এমআইএস নম্বর – ০১৬৯০০০২২২৪, মোবাইল নম্বর – ০১৭১৯৪৭৩৫৮০                                                                                                 
পিতা: গগন প্রামানিক, মাতা:  মজিরন নেছা,                                                                                                স্থায়ী ঠিকানা:  গ্রাম: কান্তনগর, ডাকঘর: বাড়িয়া, উপজেলা: সিংড়া, জেলা: নাটোর।                                        বর্তমান ঠিকানা: মুরগীহাটী, সিংড়া বাজার, উপজেলা: সিংড়া, জেলা: নাটোর।

১৯৭১ সালে আমি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার তৎকালীন  জিন্নাহ কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। কলেজে পড়াকালীন সময়ে আমি কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলাম। আমি ১৯৬৯ সালের স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার বিরোদী গণআন্দোলন এবং ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের সময় আমাদের এলাকার আওয়ামী লীগ মনোনীত এমএনএ প্রাথর্ী ডাঃ মোশাররফ হোসেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পরও তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা অযুহাত খাড়া করা হয়। শুধু তা্ই না সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেও ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ মার্চ তা স্থগিত ঘোষণা করেন। তখন আমরা এলাকার যুবক ছেলেদের সংগঠিত করে মিছিল মিটিং শুরু করি।  ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরোক্ষ ভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর আমরা এলাকার যুবক ছেলেদের নিয়ে একটা বাহিনী গঠন করে স্থানীয় সিংড়া হাই স্কুল মাঠে আনসার কমান্ডার গোলজার হোসেনের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করি। ২৫ মার্চ রাতে পাকসেনারা সারা বাংলাদেশের আক্রমণ পরিচালনা করার পর ১২ এপ্রিল শত্রুরা নগরবাড়িঘাট-পাবনা হয়ে রাজশাহী শহরে এসে ঘাঁটি স্খাপন করে। এই সময়ে সিংড়া এলাকার স্বাধীীনতা বিরোধী চক্র অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তখন বাধ্য হয়ে আমরা গ্রামের দিকে পালিয়ে যাই।

মে মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে আমি দেশ ছেড়ে  বগুড়া জেলার বর্ডার পার হয়ে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের পাশের কামারপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করি।  সেখানে কয়েকদিন থাকার পর  রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের একজন নেতা মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য নাটোর এলাকার কলেজ পড়–য়া কিছু যুবক ছাত্রের নাম জোগাড় করে দিতে বলেন। আমিসহ ৭ জন ছাত্র তার সাথে যোগাযোগ করি। তখন আমাদের ট্রাকে করে শিলিগুড়ির পাশের বাগডোগড়া বিমান বন্দর থেকে উত্তর প্রদেশের শাহরানপুর বিমান বন্দর হয়ে মিলিটারী ট্রাকে করে দেরাদুৃন জেলার টেন্ডুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। সেখানে ৩৮ দিন প্রশিক্ষণ শেষে শাহরানপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে করে আমাদের জলপাইগুড়ি স্টেশনে এনে সেখান থেকে পাশের পাঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ডাঃ সিরাজুল ইসলামকে কমান্ডার ও আমাকে ডেপুটি কমান্ডার করে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধার একটা গ্রুপ গঠন করা হয়। তারপর অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদান করে আমাদের ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার তপন থানায় পাশের একটা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আমরা তৎকালীন রাজশাহী জেলার পোরশা থানার সাপাহার, হামুরহাট থানার মুধইল ও বগুড়া জেলার খঞ্জনপুর পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণে অংশগ্রহণ করি।

অক্টোবর মাসে সেখান থেকে আমরা ভারতের চেঙ্গিসপুর বর্ডার পেরিয়ে তৎকালীন রাজশাহী জেলার বদলগাছি, বগুড়া জেলার আক্কেলপুর-আদমদীঘি হয়ে তৎকালীন রাজশাহী জেলার রানীনগর থানার গুয়াতা গ্রামে সেল্টার গ্রহণ করি।

পারুলবিশা গ্রামের যুদ্ধ ঃ                                                                                                                                                                 আদমদীঘি থানায় পাকসেনাদের ক্যাম্প ছিল।  আমাদের সেল্টার ছিল সেখান থেকে  ৫ মাইল দূরে গুয়াতা গ্রামে। এইদিন পাকসেনারা গ্রামীন পথ ধরে গুয়াতা গ্রামের আমাদের সেল্টারের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এই খবর পেয়ে আমাদের গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা পারুলবিশা গ্রামে শত্রুসেনাদের জন্য এ্যাম্বুস পেতে অপেক্ষা করতে থাকি। শত্রুরা এ্যাম্বুসের মধ্যে পুরাপুরি ঢুকার পর আমরা অতর্কিতে তাদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করি। প্রথম গুলিতেই ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। তারপর তারা পজিশন নিয়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরই মধ্যে আদমদীঘি থেকে শত্রুসেনারা আমাদের উপর মর্টারের গুলিবর্ষণ শুরু করলে আমরা ক্রলিং করতে করতে পিছু হটে আসি। তার  অল্প কিছু দিন পরেই আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। যে দেশের জন্য যুদ্ধ করে বাংলা মায়ের বুকে উড়ায়েছি স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ খচিত পতাকা, সেই পতাকার মান রাখতে এখনও আমি নিজের জীবন উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তু আছি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।