গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ কমলকৃষ্ণ কুন্ডু

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ কমলকৃষ্ণ কুন্ডু, এফ,এফ. লাল মুক্তিবার্তা নম্বর-০১১৫০১০৪৫৩, সমন্বিত তালিকা নম্বর-০১৬১০০০৬৫৭৩, মোবাইল নম্বর-০১৭১৫৪৭৯৯৫৮, পিতা: কৃষ্ণদাস কুন্ডু, মাতা: রেবতিবালা কুন্ডু, স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম, ডাকঘর ও উপজেলা: চাটমোহর, জেলা: পাবনা। বর্তমান ঠিকানা: ৩০/২/এ, শেওড়া চামড়া গুদামের পাশে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, ময়মনসিংহ।

৩ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে ডাঃ অমলকৃষ্ণ কুন্ডু ছিলেন বাবা মায়ের ৬ষ্ঠ সন্তান। ১৯৭১ সালে তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পরীক্ষা পাশ করার পর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হাউজ স্টাফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিংশ শতাব্দির ষাটের দশক ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ জাগরণের সুবর্ণ সময়। এই দশকের শেষ ভাগে ১৯৬৯ সালে সৈরাচারী আইয়ুব সরকার বিরোধী প্রচন্ড গণআন্দোলন সংগঠিত হয়। ডাঃ অমল কৃষ্ণকুন্ডু এই আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। আন্দোলনের জোয়ারে আইয়ুব খান পদত্যাগ করার পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের আয়োজন করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পরও প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা অযুহাতে সময়ক্ষেপন করতে থাকেন। শুধু তাই না দেরিতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করার পর ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পূনরায় তা স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার সাথে সাথে বাংলাদেশের আপামর মানুষ রাস্তায় নেমে এসে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচন্ড গণআন্দোল গড়ে তোলেন। আন্দোলনের পরবতর্ী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক বিশাল জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন। তিনি তার ভাষণে এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম বলে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ডাঃ অমলকৃষ্ণ কুন্ডুসহ সারা দেশের মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সারা দেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।
দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে সমস্যা সমাধানে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেও আলোচনার ফলাফল না আসায় সেনাবাহিনীকে বাঙালিদের উপর আক্রমণের নির্দেশ প্রদান করে ২৪ মার্চ বিকালে তিনি ঢাকা ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। সেইদিন রাতেই পাকিস্তানি সেনারা সারা বাংলাদেশের উপর আক্রমণ করে মানুষ হত্যা শুরু করে। একই রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর পরই পাকিস্তানি সেনাদের হাতে গ্রেফতার হন। তিনি গ্রেফতার হলেও তার স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী সারা বাংলাদেশে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানি সেনারা ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করে মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করলে ডাঃ অমলকৃষ্ণ কুন্ডু তার একজন ডাক্তার বন্ধুর সাথে তাদের ফুলপুর থানার গ্রামের বাড়ি গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে ২০ দিন অবস্থান করার পর শত্রুসেনারা গ্রামে গিয়েও হানা দিতে শুরু করলে তিনি তখন পুরাড় জমিদার বাড়ির পাশের অন্য এক বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে মাত্র কয়দিন অবস্থান করার পর একদিন শত্রুসেনারা এসে জমিদার বাড়ি আক্রমণ করে তাদের পুরা পরিবারকে হত্যা করে। এই নৃশংস ঘটনার পর দেরি না করে ডাঃ অমলকৃষ্ণ কুন্ডু ময়মনসিংহ জেলার বর্ডার পার হয়ে ভারতের ডালু ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে হাজির হন।

সেখানে তার সাথে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সাথে দেখা হয়। তিনি তাকে স্থানীয় বিএসএফ ইনচার্জ ক্যাপ্টেন বালজিৎ সিংয়ের কাছে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর ডাঃ অমলকৃষ্ণ কুন্ডুর সাথে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকউদ্দিন ভূইয়ার দেখা হয়। তিনি অমলকৃষ্ণ কুন্ডুকে তেলঢালা বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রিগেড হেডকোয়ারে নিয়ে যান। মেজর সাইফুল ইসলাম তখন এই ব্রিগেডের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর তাকে ব্রিগেড মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এর কিছু দিন পর তাকে ব্রিগেড মেডিক্যাল অফিসারের পাশাপাশি ৩য় বেঙ্গলের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে তিনি ব্রিগেড হেডকোয়াটার ও ৩য় বেঙ্গলের অফিসার ও সৈনিকদের সাধারণ চিকিৎসা প্রদান করতে থাকেন। আগষ্ট মাসের শেষের দিকে সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে গেলে সেখানে আহত মুক্তিযোদ্ধারা আসতে শুরু করে। সুযোগ সল্পতার মধ্যে যে রোগিদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো তা তিনি নিজে করতেন আর বাকিদের পাশের ভারতীয় আর্মি হাসপাতালে রেফার করতেন। মুক্তিযোদ্ধা বাছাই টিমের সদস্য হিসাবে তিনি তাদের মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন করতেন। তাছাড়াও তিনি ভ্রাম্যমান চিকিৎক হিসাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য আশেপাশের বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প পরিদর্শন করতেন। আর এভাবেই একজন চিকিৎসক তার মানবিক সেবা প্রদান করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে সুস্থ ূূূূূূূূূ করে তোলেন শত শত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ অমলকৃষ্ণ কুন্ডুর এই মানবিক অবদানের কথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহানে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।