গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মাহবুবুল আলম

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মাহবুবুল আলম, এফ.এফ. গেজেট নম্বর-ফটিকছড়ি-২২১৫, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ০২০৩০৩০৪৩৭, এমআইএস নম্বর-০১১৫০০০০২৯৭, মোবাইল নম্বর-০১৮৬৩৬১০৪১১, পিতা ঃ কাজী মফজল আহম্মদ, মাতা ঃ রাবেয়া খাতুন, স্থায়ী ঠিকানা ঃ নাসির কাজীর বাড়ি, গ্রাম ঃ দমদমা, ডাকঘর ঃ চাড়ালিয়া হাট, উপজেলা ঃ ফটিকছড়ি, জেলা ঃ চট্টগ্রাম। বর্তমান ঠিকানা ঃ বাড়ি নম্বর-৮, রোড নম্বর-২, গ্রীন ভ্যালি হাউজিং সোসাইটি, টেক্সটাইল গেট, থানা ঃ বায়োজিদ, পূর্ব নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম।
বাবা মায়ের ৩ সন্তানের মধ্যে কাজী মাহবুবুল আলম ছিলেন সবার বড়। ১৯৭১ সালে তিনি ফটিকছড়ি থানার নানুপুর আবু সোবহান হাই স্কুল থেকে এসএসনিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ৭ম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে তিনি ফরম পূরণ করে ছাত্রলীগের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ছাত্রলীগের সদস্য পদ প্রহণ করার পর থেকেই তিনি রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠেন। তিনি যেমন ১৯৬৯ সালের স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার বিরোধী গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তেমনি ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের সময় তাদের এলাকার আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপিএ প্রাথর্ী মির্জা আবু মনসুর ও এমএনএ প্রাথর্ী ফজলুল হক বিএসির পক্ষে নির্বাচনী প্রচার কাজে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পরও পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সময়ক্ষেপনের নীতি গ্রহণ করেন। শুধু তাই না, দেরিতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করার পরও ১৯৭১ সালের ১ মার্চ আবার তা স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণায় সারা বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে এসে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচন্ড গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। দেশের এহেন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক বিশাল জনসভায় তার নীতি নিধার্রণী ভাষণ প্রদান করেন। তিনি তার ভাষণে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুকে মোকাবেলার আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহবানের পর কাজী মাহবুবুল আলমসহ এলাকার যুবক ছেলেরা একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য সামছুল আলমের অধীনে মাইজভান্ডার আহমদিয়া হাই স্কুল মাঠে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা সারা বাংলাদেশের উপর আক্রমণ করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও মানুষের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে শুরু করে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কাজী মাহবুবুল আলমদের সামরিক প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকে। শত্রুসনাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। জুন মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে কাজী মাহবুবুল আলম দেশ ছেড়ে ভারতের পথে যাত্রা করেন। তারপর পায়ে হেঁটে অনেক কষ্ট করে পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় থেকে ফেনী নদী পার হয়ে ভারতের সাবরুম গিয়ে পৌছান। সেখান থেকে তাদের হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়। সেখানে ২০ দিন অবস্থান করার পর মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করে কাজী মাহবুবুল আলমদের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটোনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। ভিনদেশে আত্মীয়স্বজনহীন পরিবেশে কঠোর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সময় সকল মুক্তিযোদ্ধাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় বিষন্নতায় ভুগতেন। কিন্তু তবুও দেশমাতৃকার স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে তারা সফলতার সাথে ৩২ দিনের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের আবার হরিণা অপারেশন ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনা হয়। সেখানে আসার পর বদিউল আলমের নেতৃত্বে একটা মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ গঠন করে কাজী মাহবুবুল আলমদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদান করা হয়।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে বদিউল আলমের নেতৃত্বে এই মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশের ভেতরে এসে তারা ফটিকছড়ি থানার নানুপুর ইউনিয়নের অন্তগত খোরশেদ সাহেবের বাগানে ক্যাম্প স্থাপন করেন।
নারায়নহাটের যুদ্ধ ঃ ফটিকছড়ি থানার নারায়নহাটে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ছিল। কাজী মাহবুবুল আলমদের সেল্টার ছিল সেখান থেকে ৬ মাইল উত্তরে খোরশেদ সাহেবের বাগানে। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে একদিন মাঝ রাতে কয়েক গ্রুপের ৬০/৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা শত্রদের ক্যাম্পের উপর অতর্কিতে আক্রমণ শুরু করে। রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত প্রচন্ড যুদ্ধ চলার অনেক জানমালের ক্ষতি স্বীকার করে শত্রুরা পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। সেখান থেকে বিপুল পরিমান মর্টারের গোলা ও বিভিন্ন অস্ত্রের গোলাগুলি উদ্ধার করা হয়। যা পরে নৌকাযোগে নাজিরহাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
খংখাইয়া খাল পাড়ের যুদ্ধ ঃ খংখাইয়া খালের উত্তর পাশে ফটিকছড়ি থানা আর দক্ষিণ পাড়ে রাউজান থানা অবস্থিত। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানি সেনারা খাল পার হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ চালায়। তখন কয়েক গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধাসহ কাজী মাহবুব আলমরা শত্রুসেনাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সকাল ৮টা থেকে বিকের ৫টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলার পর অনেক জানমালের ক্ষতি স্বীকার করে শত্রুসেনারা পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। কাজী মাহবুবুল আলমদের মতো সাহসী যোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। তাইতো আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।