গুচ্ছকবিতায় ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

করোনা বদলাল অভ্যাস

ঈশ্বরও অভুক্ত? ফুলেও লুকিয়ে করোনা?
মন্দির ছেড়ে তিনি হাসপাতালে দিনরাত।
ঘরে বসে করুন প্রেয়ার আজান প্রার্থনা
ঢাক-ঢোল বাজলে সেবায় ঘটবে ব্যাঘাত।
দেবালয় তবে কি বন্ধ করবে আগামী?
শেষ হল তবে পাণ্ডা-পুরোহিতদের রাজ?
টনটন সোনা কোটিকোটি টাকার প্রণামি –
ভুলে করোনা দেখাল ‘সেবা’ই ধর্মরাজ।
করোনা ধীরে ধীরে পাল্টে দিচ্ছে অভ্যাস
নিজে ঝাঁট দিয়ে নিজে ধুতে হবে বাসন
কাজের মাসীকে ঘরে ফিরিয়েছে ভাইরাস
স্যোসাল ডিস্ট্যান্সিং মানতে হবেই এখন।
করোনা মানুষকে বেঁধে পরিচ্ছন্নতার জালে
শৃঙ্খলা শিখিয়ে বিশৃঙ্খলায় তুলেছে লাঠি
অপ্রয়োজনীয় রোগী আর নেই হাসপাতালে
ধনী-দরিদ্র ভুলে ভাত চাইছে এক-মুঠি ।
শুধু পাড়া-প্রতিবেশী তাকাচ্ছে আড়চোখে
এখন গলাগলি ভুলে দূরত্ব বজায় রাখে।

পৃথিবীর গান

প্রিয় দেশবাসী, ঘরে থাকো দয়াকরে
অভ্যাস করে হাত ধোও বারবার।
বল তফাৎ যাও দূরে থেকে সরে সরে
তোমার ধৈর্যটুকুই ঘোচাবে অন্ধকার।
এই পাপের দুর্গ প্রাসাদ গম্বুজ মিনারে
পৃথিবী উদাস, যত মাথা ঠোক বারবার।
পশ্চিমের সূর্য ডুবে গেছে অন্ধকারে
মৃত্যু মিছিলে গ্রাম নগরের হাহাকার।
দেখ ভিটে মাটি ফাঁকা নির্জন ভাঙা ঘরে,
শুধু শুকনো পাতাদের ঝরে পড়া চিৎকার।
যেন, অতিমারী মড়ক না ডাকে মন্বন্তরে
এই অন্যায়ে কিন্তু তুমিও পাবেনা পার।
এই যুদ্ধের দিনগুলো তোমাকে বিদ্রূপ করে-
একদিন তুমিই না করেছিলে মৃত্যুর কারবার।
আজ মিল নেই কোনও শ্রমিক-মালিকের হাড়ে
জয়ী মানুষের হাতে পৃথিবী হাসবে আবার।

করোনা নিয়েছে যত দিয়েছে আরও বেশি

আজ মাত্রাতিরিক্ত দূষণ কমেছে বিশ্বে
দু-চোখ ভরে দেখে নাও নীলাকাশ
মুম্বাই সমুদ্রে ডলফিন নৃত্যের দৃশ্যে
আনন্দে প্রকৃতি গ্রহণ করছে শ্বাস।
পরিযায়ী পাখিরা আবার আসছে ফিরে
হিমবাহ বরফের গলন কমেছে মেরুতে
লোকে গল্প পড়ছে আলমারির ধুলো ঝেড়ে
পরিবারে সবাইকে সময় পারছে দিতে।
পারমাণবিক বোমা, মিগ, রাফায়েল দিয়ে
প্রাণ কেড়ে নেওয়া যতটা সহজ কাজ
রাষ্ট্র-নায়কদের করোনা দিয়েছে বুঝিয়ে
প্রাণ বাঁচানো ঠিক ততটা কঠিন আজ।
কোয়ারান্টাইনে গেছে মন্ত্রণা দেওয়া নেতা
প্রকৃত জননেতারা নেতৃত্ব দিচ্ছে পথে
ডাক্তারকে না মেরে চাইছে তারই সুস্থতা
বন্ধ হয়েছে চুরি ডাকাতিও দিন-রাতে।
বন্ধ হয়ে গেছে দুহাতে অপচয় করা
লোকে কম জিনিষের জীবনযাপনে খুশি
বিলেতফেরত ভুলে গ্রাম থেকে বাড়ী ফেরা
বিপদ রুখতে স্টোন দিচ্ছেনা জ্যোতিষী।
মৃত্যুভয় ভীষণ নিষ্ঠুর, আর বেদনার
জীবনের কাছে মানুষের অনেক দাবি
এ-পৃথিবী আজ ভীষণ লাগছে অচেনা
করোনা জয়ীদের ডাকছে নতুন পৃথিবী।

ফুলের জলসায় দেশ

হেলিকপ্টার থেকে টুপটাপ ঝরছে ফুল
চিঠিতে চিঠিতে আড়ি-অভিমানে, মশগুল।
কপ্টার ছুটছে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর
মদের দোকানে। ভোররাত থেকে ভিড়।
ফুল ঝরছে পরিযায়ী শ্রমিকের মাথায়
পিষে দেয় ট্রেন। ভুখা রুটিরা গর্জায়।
কপ্টার ছুটছে ভারতের কোণে কোণে
অতিমারী ভুলে লড়াই রেশন দোকানে।
ফুলেরা ছড়াচ্ছে মিষ্টি সুবাসের গন্ধ
একে একে সব নামী হাসপাতাল বন্ধ।
ফুলেরা ঝরছে কাঁপে টলোমলো দুর্দিন
ধূর্ত রাজনীতি। ক্রমে আবরণহীন।
ফুলেরা দেখছে লুঠ হয়ে যাচ্ছে চাল
মারী ও মন্বন্তরে ছোটে ফুটন্ত সকাল।
ফুলেরা বলছে। বাড়ছে মৃত্যু। চুপ্!
শ্মশানে কবরে শয়ে-শয়ে লাশের স্তূপ।
মৃত্যুর হাহাকার, বাড়ন্ত হচ্ছে কিট
ফুলেরা হাসছে। কে কাটবে ট্রেনের টিকিট?
ফুলেরা ঝরছে চক্কর দিচ্ছে কপ্টার
পিপিই নেই। হাহুতাশ করছে সিস্টার।
প্লাস্টিকে বেঁধে রাত্রে বেরোয় লাশ
লাইন পড়ে যায় শ্মশানের বাইপাস।
করোনা পজিটিভ। ঘরে থাক তবে বেশ।
হাসপাতাল নেই। ফুলের জলসায় দেশ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।