• Uncategorized
  • 0

হৈচৈ ধারাবাহিক ভ্রমণকাহিনী তে ঈশানী রায়চৌধুরী (পর্ব – ৪)

চললুম ইউরোপ

পরদিন সকাল সকাল এলাহি ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা এলাম Grand Place এ। বিশাল একটা চত্বর, পাথরের ইঁট দিয়ে বাঁধানো, সেখানে অনেক Tour operator রয়েছে যাদের বিশাল ছাতায় নাম লেখা। এখান থেকে শুরু হবে Walking tour… দূর আমাদের দেশটাই বেশ। হুশ করে গাড়ি চড়ে বেরিয়ে পড় আর দিব্বি সব দেখেটেখে নাও। এখন এই বেতো হাঁটু নিয়ে…. কি জানি বাপু কি হবে! যাই হোক ঠেলে গুঁতিয়ে যিনি ধারাবিবরণী দিচ্ছেন তার কাছে চলে এলাম….. যদি মুখনাড়া দেখে কিছু বুঝতে পারি ! বাবাই বলেছে, মা ইনি Mexican ইংরেজিতে বলবেন… তবে তাঁর ইংরেজি তিনিই বুঝছেন অন্তত আমি তো তত বুঝিনি। যাই হোক পরের বার Lip reading শিখে আসব। ছেলে ভুরু কোঁচকাচ্ছে মা এখানে কেউ ঠেলাঠেলি করে না। আরে বাপু আমাদের ১৫০কোটির দেশ না ঠেললে চলে! ততক্ষণে হাতে ধরিয়ে দিল ছোট একটা যন্ত্র যেটা দিয়ে দূর থেকেও ভাল শুনছি।যেখানে চোখ আটকে যাচ্ছে দাঁড়িয়ে পড়ছি। দুএকবার আমাকে খুঁজে এনে রায়চৌধুরীমশায় আল্টিমেটাম দিলেন….’ এরপর যদি দলের থেকে আলাদা হও, তোমার দায়িত্ব তোমার ‘ খোঁড়াতে খোঁড়াতে চললুম। বাপরে এরা কি খায় যে এত জোরে হাঁটে। প্রখ‍্যাত ইউরিনেটিং বয় দেখলাম। চারদিকে চকোলেটের দোকান… একটা জায়গায় গেলাম যেখানে চকোলেট তৈরী হচ্ছে। বেলজিয়াম তো চকোলেটের দেশ। শেষে এলাম যে জায়গাটায় তার নাম Mont Des Arts।
চোখ জুড়িয়ে গেল… ধাপে ধাপে সিঁড়ি পেরিয়ে এত চমৎকার বাগান … তার গাছ, রং বিন‍্যাস সব মুগ্ধ করে দিল। তবে যতই বেড়াই পেট তো তার দাবী ছাড়বে না। অতএব লাঞ্চ করতে ঢুকলাম আর কি খেলাম জানেন…. পাস্তা সঙ্গে ঝিনুকের মাংস। কত্তামশায় প্রথমে একটু নিমরাজি ছিলেন পরে একটা খেয়ে বেশ খুশি। এরপরে আমাদের গন্তব্য ‘মিনি ইউরোপ ‘।
সে না দেখলে বোঝানো যাবে না, কি নিখুঁত মিনিয়েচার জগদ্বিখ‍্যাত সব দ্রষ্টব‍্য স্থানের। শেক্সপীয়রের গ্রাম, বাড়ি সব আছে। Atomium এর পাশ দিয়ে ঢুকলাম ভেতরে। যে রাস্তায় হাঁটছি পাশ দিয়ে নদী, কোথাও রেললাইন… ট্রেন যাচ্ছে, ব্রীজ, বাস কার সব আছে। ছোটবেলায় আমাদের ঝুলন সাজানো মনে পড়ল… সেই ঢিল পাথরের পাহাড়,বালির রাস্তা ছোট ছোট ডালের জঙ্গল…. সব যেন একরকম শুধু আমাদের সে বয়সটা আর নেই। যাই হোক বুড়ো পায়ে এগোচ্ছি দেখি আইফেল টাওয়ার,পিসার হেলানো টাওয়ার ওয়েস্টমিনিস্টার অ‍্যাবে কি নেই সেখানে। এবার যে ইংল‍্যান্ড যাওয়া হচ্ছে না তার স্বাদ খানিকটা হলেও মিটল। আস্তে আস্তে সন্ধে হয়ে আসছে তাই এবার ঝাঁকিদর্শন!
মখমলের মত ঘাসজমি পেরিয়ে হোটেলের পথ ধরলাম আমরা।
পরদিন সকালে দেখতে যাব Bruges (ব্রুস)। হোটেলের পাট তো শেষ এবার সংসার চড়ল পিঠে। মানে আমাদের যা ব‍্যাগপত্তর সব ছেলের পিঠে উঠল। ট্রেনে করে নামলাম Bruges। আবার সেই Walking tour । এ এক আশ্চর্য শহর…. মধ‍্যযুগকে জ‍্যান্ত করে রেখেছে এরা। পাঁচ ছশো বছরের পুরোনো বাড়িও এখনও সংরক্ষণ করে রেখেছে…. পাথরের ইঁটে বাঁধাই রাস্তায় ঘোড়ার খুরে আওয়াজ তুলে ছুটছে গাড়ি তাতে ভিক্টোরিয়ান পোশাক পরা মানুষজনও আছে। বাপরে একি সিনেমা দেখছি নাকি ? সত‍্যি চাইলে মানুষ কি না পারে ! ওয়াকিং দলের সঙ্গে যাচ্ছি আর বারবার চোখ চলে যাচ্ছে ছণ দিকে…পিঠের বোঝা নিয়ে ওর তো কষ্ট হচ্ছে ! যেখানে সুযোগ পাচ্ছি আমি বসে পড়ছি… ও তো নামাচ্ছেও না ব‍্যাগ ।

সফরশেযে খাওয়াদাওয়ার ব‍্যবস্থা হল। রেস্তোরাঁর এক্সটেনশন ফুটপাথে চমৎকার ব‍্যবস্থা… আমরা একটা টেবিলে বসলাম তার পাশে আগুন জ্বালানো আছে যাতে ঠান্ডায় খাওয়ার আনন্দ মাটি না হয়। এখানে যে ছেলেটি অর্ডার নিল, খাবার দিল তার বাড়ি আফগানিস্তান।আমি সাহেব নয় দেখে দিব্বি গল্প জুড়ে দিলাম…. তুমারা বাড়িমে কে কে হোতা হ‍্যায়? তুম এখানকার ভাষা বলতে পারতা হ‍‍্যায় ? ইত‍্যাদি। যাই হোক পাট চুকলে আমরা ফেরার জন‍্যে পা বাড়ালাম, তা ফিরব কিসে ! একটাও গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না, এদিকে ট্রেনেরও আর বেশি দেরি নেই…. হন‍্যে হয়ে খোঁজাখুঁজি করতে করতে শেষ মূহুর্তে একটা অটোরিক্সা পাওয়া গেল।গাড়িতে উঠে মনে হল আরে আমরা প‍্যাসেঞ্জার আর সাহেব ড্রাইভার ! দুশো বছরের যন্ত্রণার একটা মধুর প্রতিশোধ।
আবার সন্ধের বাসে আমস্টারডাম। পরেরদিন যথারীতি ছেলের অফিস তাই দুধ কর্নফ্লেক খেয়ে ঘুমোতে গেলাম। শুভরাত্রি!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।