রম্য রচনায় ইন্দ্রাণী ঘোষ

ষষ্ঠী

ষষ্ঠী শুধু জামাইদের মোটেই নয়. দয়া করে একদিন শ্বশুরবাড়ী পায়ের ধুলো দেয়ার রেওয়াজ কবে থেকে হয়েছিল জানি না. তবে এই ষষ্ঠী কিন্তু দয়া করে মেয়েকে উদ্ধার করার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন নয়, সমস্ত সন্তানের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত. সে জামাই, বৌমা, নাতি, নাতনী সকলের. কোন ব্যবস্থা এই ‘জামাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ধারনার’ জন্ম দিয়েছিল জানা নেই. আজ সকাল থেকেই কেন কে জানে ষষ্ঠী ঠাকুরণের কথাই মনে পড়ছিল.

ষষ্ঠী মানেই ক্ষীরের পুতুলের ষষ্ঠী ঠাকুরণ. সেই গো যে সেই বানরের পাল্কি থেকে দুয়োরাণীর ক্ষীরের ছেলে চুরি করে খেয়ে কাঠামোর ভিতর পালাচ্ছিলেন. বানর চেপে ধরে বলেছিল. ‘শিগগির ছেলে ফেরত দাও, নাহলে কাঠামোশুদ্ধু তোমায় দিঘির জলে ডুবিয়ে ছাড়ব’. ওমনি বানর ছেলে পেয়েছিল, আর দিব্যদৃষ্টি পেয়েছিল মা ষষ্ঠীর কৃপায়. তা সে তো গেল বানরের গল্প.
মা ষষ্ঠীর সাথে আমার আজকে দুপুরে ছাদে দেখা হয়েছিল. আজ অনেকদিন বাদে ঝকঝকে রোদ্দুর উঠেছিল. আমিও পায়ে পায়ে ছাদে গেছিলাম. দেখি ছাদের আলসে ধরে, শুকনো মুখে ষষ্ঠী ঠাকুরণ দাঁড়িয়ে আছে. আমি বল্লাম ‘কি ঠাকুরণ, কি মনে করে?’, আর সবসময় তুমি ছেলেদের জন্যি পুজো নাও কেন? আমরা কেউ নই নাকি? তুমি তো নিজেও মেয়ে, তাহলে আমাদের নিয়ে কোন উৎসবের ব্যবস্থা করতে পার না? ‘ শুনে ঠাকুরণ মুচকি হাসলে বললে’ ওরে আমাদের তো সম্ববৎসর উৎসব. একদিনের উৎসবে আমাদের কি কাম? ‘ আমি বললাম’ চালাকি ছাড় ঠাকুরণ, আমাদের উৎসবের ব্যবস্থা কর’. ‘আ মোলো এ তো মেলা ফ্যাচাং বাধালি, আচ্ছা শোন বলি, আমার পুজো সবার জন্য, আর এই যে তোদের হাল ফ্যাশনের’ ‘স্পেশ’ , সেই তো উৎসব, এই যে তোরা নিজের মত ঘুরতে ফিরতে পারিস, নিজের মত গপ্পগাছা করিস, লিখিস, নাচিস, গান করিস, ঘোড়ায় চড়িস, ক্যারাটে শিখিস, চাকরীতে যাস এগুলো উৎসব নয়? ‘ আমি বলি’ বাজে কথা রাখ, ঘরে বাইরে সামলে আমাদের হাঁপ ধরে না? আজ এর বিহিত না করে তোমায় যেতে দিচ্ছি না, সেদিন দিকনগরে বানর চেপে ধরেছিল তোমায় আজ আমি ছাড়ছি না’.
ঠাকুরণ বলে ‘ওরে মুখপুড়ি অন্তরে যে তোদের আলো জ্বলে, সেই আলোতে আলোকিত হয় জগৎ সংসার বুঝিস না’, ঠাকুরণের মুখটাও কথা বলতে বলতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল, এ কথা শুনে ভেব্লে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম. ঠাকুরণ সেই সুযোগে আচঁল গুছিয়ে পালালে. আমি শুধু ক্ষীরের গন্ধের সাথে সাথে মা মা গন্ধ মেশানো হাওয়ায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম. আচ্ছা ঠাকুরণ কি শুকনো মুখে আমাদের কথাই ভাবছিলেন? কথা বলতে বলতে পরে তাঁর মুখটা উজ্জ্বল হল যে? মানে ঠাকুরণের সাথে এই নিভৃত আলাপচারিতা ছাড়া যাবে না দেখছি.

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।