সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ১৭)

আরশি কথা

বিকেলে ঝোরার বাড়ী ভর্তি. স্তিতধী ফিরেছেন. আকাশলীনার সাথেই. দুই মা এসে পৌঁছেছেন. কলকল করে গল্প করছে আকাশলীনা. রিসার্চের গল্প. ওখানকার হষ্টেলের গল্প. রোজ সকালে ব্রেকফাষ্টের লাইনে দাঁড়িয়ে কোকো দেওয়া দুধের অসামান্য স্বাদ. পাউরুটির ধারপাশ দিয়ে না গিয়ে পেট ভরে কোকো দেওয়া দুধ আর পরিজ কেমন করে খেয়েছে. তারপর একদিন গরম পাঁউরুটি হেলা শ্রদ্ধা করে প্লেটে নিয়েছে , তারপর মুখে দিয়ে দেখেছে সে জিনিষ দেবভোগ্য. মুখে দিলেই তুলতুলে পাউরুটি গলে যাচ্ছে.
‘ও মা শুনছ কি বলছি?’ আকাশলীনা ঝাঁকুনি দেয় ঝোরাকে. ‘হ্যাঁ শুনেছি তো দুধ, পাউরুটি কিসসা’. ‘যাক বাবা আমি তো ভাবলাম তোমার ভাবসমাধি হল’. ‘তা ঠিকই বলেছিস তোর মা যে কিসের ঘোরে থাকে কে জানে’. সুনয়নী দেবী ঝাঁঝিয়ে ওঠেন. ঊফ এই শুরু হল মায়ের মেয়েকে বাস্তবে ফেরানোর বৃথা প্রচেষ্টা. ঝোরা প্রমাদ গোনে. প্রভাবতী দেবী ঝোরার শাশুড়ী মা, ছেলের প্রজ্ঞা এবং নাতনীর মেধায় মুগ্ধ. পুত্রবধু যে একটু ছিটেল তিনি জানেন, তাই ওদিকের কথপোকথনে কান দেন না.
ঝোরা আড়চোখে আরশির দিকে চায়. আজ আরশিতে কোন রহস্যের ছায়া নেই. স্বচ্ছতোয়াকেও দেখা যাচ্ছে না. শুধু হলদে প্রিমরোজের একটা লতা বাগানের কোনায় দুলছে চাঁদের আলো মেখে, সেই ছায়াটুকুই আরশির এককোনে পড়ে আছে. কুরুশের কাজ করা পর্দাটা দিয়ে আরশি ভালো করে ঢেকে দেয় ঝোরা. নিরু দি কিমার ঘুগনি, বানিয়ে রেখে গেছে, সাথে পনীর. আটার কৌটো টেনে বার করে ঝোরা. আটা মাখতে মাখতে টের পায় আঙুলের সেই চিনচিনে ব্যাথাটা, আরশির কাচে কেটে গিয়েছিল. নাকি এ শুধু মনেরই ভুল?
কে জানে.

ক্রমশ.

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!