সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ১৬)

আরশি কথা

১৬

আকাশলীনা ঝোরার একমাত্র সন্তান. আজ আকাশের ফেরার কথা. ঝোরার স্বামী স্থিতধি বসুও আজি ফিরছেন. গবেষণার কাজে বেশির ভাগ সময়তেই বাইরে থাকেন স্থিতধি. অঙ্ক, পদার্থ বিদ্যায় ডুবে থাকেন. জগত সংসার সম্বন্ধে হুশ তাল নেই. বেঁচে গেছে ঝোরা. এই যদি ঝোরাকে স্থিতধির কেরিয়ার ঊজ্জ্বল করতে, ভাবমূর্তি বজায় রাখতে এই পার্টি, সেই জগঝম্প করপোরেটের জলসা করতে হত হয়ে গেছিল. বিজ্ঞাপনের অপিসে কপি লেখার খাতিরে এসব ভালোই জানে ঝোরা. সেই জন্যেই এসব সন্তর্পণে এড়িয়ে চলে. ভাগ্যিস দশটা, পাঁচটা ঠেলতে হয় না ঝোরাকে. ফ্রী ল্যান্স কাজ. বাকি সময়টুকু নিজের ভিতরে, আরশির জগতে বিচরন করতে পারে. বাড়ীর সকলের ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে. নিরু দি এসে হাজির হয়েছে. রান্না বলতে হবে নিরু দি কে.
কাল আকাশের কাছ থেকে ফিরে আসার পর আয়নার ভিতরে কুমুদরঞ্জন কচ্ছপের সাথে কি অদ্ভুত অভিজ্ঞতাটাই না হয়েছিল ঝোরার. মারমেডরা ঝোরাকে আর স্বচ্ছতোয়াকে পিঠে নিয়ে কি প্রাণপণ সাঁতারটাই না কাটলে. ঝোরার কানে এখনো সেই বাঁশির সুর বাজছে. মারমেডদের গানের সুর. যখন সমুদ্রতটে এসে পৌছয় ঝোরা আর স্বচ্ছতোয়া, ঝোরা তখন ক্লান্ত, অবসন্ন. স্বচ্ছতোয়া দিব্যি সমুদ্রতটে বসে খেলতে শুরু করেছে. মারমেডদের সে কি রূপ. সোনালি চুল, টিকোলো নাক, সমুদ্রনীল চোখ. শুধু কোমর থেকে নীচ অবধি দুটি পায়ের জায়গায় বিশাল রামধনু রঙা ল্যাজ. ঝোরা জিজ্ঞেস করে ‘তোমরাই গান গাও বুঝি?’ মারমেডরা বলে ‘হু, সকলে আমাদের গান শুনতে পায় না, তা তুমি ওই কুমুদরঞ্জন কচ্ছপের পিঠে চড়েছিলে কেন, তুমি কি রামধনুর দেশে রোদ্দুর খেয়ে বাঁচতে পারবে? সমুদ্রের নীচে মায়া পাহাড়ের দেশ, তার মাথায় সাতরঙা রামধনু, কুমুদরঞ্জন ওই মায়া রোদ্দুরের রামধনুর দেশে থাকে. মায়া রোদ্দুর খেয়ে বেঁচে থাকে, আর সমুদ্রে নেমে যখন সাঁতার কাটে ফেরার কথা ভুলেই যায়, স্বচ্ছতোয়া একমাত্র ওর সাথে ওই পাহাড়ে উঠতে পারে, তুমি চেষ্টা কর না, আমরা ভাগ্যিস ছিলাম তাই তোমায় টেনে আনতে পারলাম, সেদিনও চোরা ঘূর্ণি থেকে আমরাই বার করেছিলাম তোমাকে ‘ .
মারমেডদের কথা ভাবতে ভাবতে চা জুড়িয়ে যায় ঝোরার. হঠাৎ দরজার ওপাশে খঞ্জনীর আওয়াজ হ্য, নিরু দি ছুটে যায় দরজা খুলতে. বৈরাগী এসেছে ভিক্ষা নিতে. মাধুকরী নিয়ে ফেরার পথে ঝোরার দিকে চোখ পড়ে বৈরাগীর. খঞ্জনীতে বোল তুলে সে বলে ‘ ভাবসাগরে ডুবে আছ রাধারানী, মনের ঘরের আরশিনগরে যে ডুবেছে, সে যে সেই প্রেমেই মজেছে গো, কল্যান হোক রাধারানী’.
চমকে ওঠে ঝোরা, বৈরাগী ঠাকুর আরশি কথা জানে না কি?

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।