সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ৯)

বৈশাখ

শীত যখন যাই যাই করে অনেক ঢঙ করে, তখনই ফিচেল হাসি হেসে বসন্ত সেই ন্যাকামীর স্বাদ নেয় । ওই দিনে গরম, রাতে পাগল হাওয়া । এইসব আশনাই দেখে সুয্যিদেব চোখ পাকিয়ে ধমক দেন । ব্যাস ধমক দিয়েই উঠে পড়েন মাঝ আকাশে । সব আশিকি তখন ল্যাজ গুটিয়ে দে দৌড় ।

কৃষ্ণচূড়া শুধু আরও লাল, আরও গ্রাম্ভারী, হয়ে বলে ‘জানা আছে, ওই উচাটন দুদিন বৈ তো নয় ।’ এই ভেবে সে তাঁর লাল রঙ আরও গাঢ় করাতে মন দেন । রাধাচূড়ার বাপু অত দেমাক নেই, সে মনের সুখে বাসন্তী কার্পেট বিছিয়ে চলে এ শহরের রাস্তায়, অলিগলিতে । বেল, জুঁইরা আরও সহজ । সুয্যিদেব পাটে বসলেই তাঁরা সকলে মিলে সৌরভ উপুর করে হাওয়ায়, হাওয়ায় । সুয্যিদেব যতক্ষন চোখ রাঙাচ্ছেন তাঁরা একেবারে চুপটি করে থাকে । লতানে জুঁইয়ের অবশ্য কনফিডেন্স আলাদা । মেধাবী, দামাল সে । দুপুর দুটোয় সে সৌরভের প্রাচূর্য্য ঢেলে দেওয়ার হিম্মত রাখে । সু্য্যিদেব তাঁর এই দামালপনা প্রশ্রয় দেন, যদিও তিনি আগুন ঢেলেই যান সবার উপরেই । ঘোর দুপুরে ইশকুল ফেরত জুঁইদের কাছাকাছি গেলে আর দুহাতের আজলা ভরে তুলে নিলে সে বেজায় খুশি হয়ে বাড়ীর নিভৃত কোন থেকে বৈঠকখানা অবধি সুরভিত করে দেয় । শুধু কাঁচের বা পেতলের রেকাবিতে তাঁকে রেখে দিতে হবে একটু জল দিয়ে । ব্যাস আর কিচ্ছুটি চাই না । আমের মঞ্জরীরা বিদায়বেলায় ওদের হাতে নি:শব্দে দায়িত্ব তুলে দিয়ে যায় ।

যে যতই বলুক বাপু প্রাণ হাঁসফাস, প্যাচপ্যাচে ঘাম । আমার বাপু গরমকাল প্রিয় ঋতু । এমন জোড়ালো, তীব্র আহবান আর কারই বা আছে । আইসক্রীমে, ঠান্ডাইতে, রু আফজার লাল রঙে, লাল পাড় সাদা ঢাকাই জামদানি, টাঙাইলের আভিজাত্যে, ‘এসো হে বৈশাখ’ বারবার ফিরে এস । তোমার তীব্রতা, তোমার গন্ধ, তোমার রঙ দেখার জন্য আমি এই পৃথিবীতে বারবার জন্মাতে রাজি ।

ও: হ্যাঁ, দেড়েল বুড়ো তো তোমার কোলে চেপেই ২৫ তারিখে এসেছিলেন এই ধরাধামে, তাই তোমাকে আরেকটু বেশি ভালবাসি, এই বেলা বলেই দিলুম তোমাকে । ওই বুড়োর জন্যি বেঁচে গেলুম যে ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।