সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ৭)

তৃণের সারি তুলছে মাথা,
তরুর শাখে নবীন পাতা ।

এক দিদিমণির বাড়ীতে শনিবার ক্লাস বসে । বারো ক্লাশ, আই. এস. সি র । পড়ার কথা টেম্পেষ্ট, যার মানে সমুদ্রের ঝড় । ‘শেখ’ কবির খটমটে শব্দের জাগলিং, আর সঙ্গে এমন দর্শন যা সামলাতে গিয়ে দাঁত কপাটি ছিরকুটে পড়তে হয় । হলে কি হবে, পরীক্ষার বৈতরণী পেরোতে হবে তো । অতএব দিদিমণি কোমর বেঁধে ‘হেই সামালো’ ‘ বলে, মারেন ধাক্কা । পরীক্ষার নাও এমনিতেই কোভিডের ধাক্কায় টালমাটাল, তা সে নাও সামলাতে গিয়ে ‘বোটসওয়েনের’ রোল প্লে করা সবাই মিলে কি মুখের কথা ।
এই রকম ঘন্টা দুয়েক প্রবল ঝড়ের সাথে ক্লাশে তো যুদ্ধ হল । দিদিমণি কিঞ্চিত চা পিপাসা মেটাতে উঠলেন, ফিরে এসে দেখেন পড়ার জায়গা বেবাক ফাঁকা । ‘এই তোরা কোথায়? বলে হাঁক পাড়তে গিয়ে দেখেন, দিদিমণির কন্যার ঘরের দরজা বন্ধ, সবকটা পালিয়েছে ওখানে । বলাই বাহুল্য এই দলটি দিদিমণির কন্যার ইস্কুলের একেবারে মন্টেসরি বেলার বন্ধুর দল, এখন এরা সকলেই ক্লাশ টুয়েলভ, অনলাইনের খাঁচা থেকে মুক্তি পাওয়া বিহঙ্গের দল । তা দিদিমণি আস্তে করে দরজা খুলে দেখলেন, একজনের খাট, যেখানে দুজন আঁটে না, সেখানে সবকটা ঠেসে শুয়ে দুই হাত দাঁড় বাওয়ার মত করে চালাচ্ছে । দিদিমণি ভাবেন, ‘ যা: বাবা বিছানা নিল কেন? ‘ চোখের পলকে দিদিমণি দেখলেন, এক কন্যে সটান উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল বিছানায়, আর অদ্ভুত ভাবে হাল ধরার মত পজিশন নিয়ে নিল, বাকিরা আরও প্রাণপন হাত, পা চালাতে লাগল বিছানায় শুয়ে ।
দিদিমণির মনে হল ‘রোল প্লে’ চলছে । একজন হাল ধরেছে, বাকিরা দাঁড় বাইছে । কে জানে । আর যে তাঁরা কি বলছিল, ওই কথার জলচ্ছাসে দিদিমণি কিছু বোঝার চেষ্টা করেন নি ।
দিদিমণি ঘরের দরজা বন্ধ করে দিতে দিতে ভাবেন এইভাবেই ওরা জীবনের হাল ধরে সব ‘টেম্পেষ্ট’ জয় করে এগিয়ে যাক ।
দিদিমণি চায়ের মগে লম্বা চুমুক দেন, অনেকটা পথ তাঁরও পেরোনো হয়ে গেছে ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।