সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ৯)

আরশি কথা

মোবাইল তুলে কানে ধরে ঝোরা। মেয়ে ফোন করেছে। ” উফ মা কোথায় ছিলে?” ‘এই তো মা অফিসে “। ডাহা মিথ্যে বলে ঝোরা । ” কতবার ফোন করছি জান”। “সাইলেন্ট ছিল মা গো। আমার আজ কপি দেবার ছিল লেখাটা পছন্দ হয়েছে ক্লায়েন্টের”। ” উফ তোমার এই লেখা আর লেখা, সকাল থেকে তিনবার ফোন করলাম”। “সরি মা বল কেমন ঘুরছিস”। ” ঘুরছি? সকাল থেকে ফিল্ডে ছিলাম।স্পেসিমেন কালেক্ট করছিলাম রোদে ঘুরে ঘুরে, এই রেস্টহাউসে ফিরেছি “। “যাক কাজ কেমন হল বল।” আকাশলীনা মায়ের উৎসাহী গলায় খুশি হয়। “কাজ ভালো হয়েছে,এরপর দুদিন সেমিনার। অর্গানিক কাল্টিভেশনের উপর পেপারটা প্রায় নামিয়ে এনেছি। বাবা ফোন করেছিল? ” হ্যাঁ এই তো কালকেই কথা হল, ভালো আছে । আর দুদিন কাজ বাকি । তুই আর বাবা তো একদিনেই ফিরবি।” ” আর দিয়া ,ঠামি?” ‘ফোন করেছিল । দু জনেই ভালো আছে ।” “আচ্ছা মা আমরা পাঁচজন ,পাঁচ জায়গায় কি অদ্ভুত না?” উদাস শোনায় আকাশলীনার গলা । ”ধুর বোকা মেয়ে তা হবে কেন, যে যার কাজ করছি ভালো আছি । কদিন পরেই তো দেখা হবে। গল্পের ঝাঁপি উপুর করে বসব সবাই’। ” ‘আমরা ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছি না তো মা ?”’ হোমসিক মেয়েকে শান্ত করে ঝোরা “সবসময় একসাথে থাকলে কেউ কাউকে সহ্য করতে পারতাম না, এই ভালো, আকাশে ডানা মেলে আবার ঘরে ফিরে আসা”। ” জান মা । এখানে একটা ক্যানালে জল ছেড়েছে । কি ঘূর্নি জলের। ফেনা ভর্তি ঢেউ । কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছে। আমার সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করছিল। গাইড বারণ করলেন ‘। চমকে ওঠে ঝোরা , আয়নার ভিতরেও তো চোরাস্রোত ছিল। ‘ না মাম্মা জলে নেম না, আর একদম দলছুট হবে না” । হা হা করে হাসে আকাশলীনা । ” আমি কি ছোট আছি মা? তুমি চিন্তা করবে তাই মজা করলাম, দুদিন বাদে ফিরছি, পাতলা মটনের ঝোল বানিয়ে রেখ আলু দিয়ে, নিরামিস খেয়ে মুখ মেরে গেছে “। ‘আচ্ছা সাবধানে থেক ” । ফোন ছেড়ে ভাবতে বসে ঝোরা। আয়নায় চোরা স্রোত, ব্ল্যাক প্রিন্স, আকাশলীনার ফোন সব কেমন একটা অঙ্ক যেন ।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।