• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৬৩)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৯৯

খুব ছোটো ছিলাম যখন সব অসুবিধার কথা বাবাকে বলতাম। শুধু আমি কেন বাড়ির সবাই তাই করত। আমাদের সব অসুবিধার সামনে বাবাকে দাঁড় করিয়ে দিতাম। আর বাবাকে দেখতাম সেই চিরাচরিত একটাই রূপ। ধীর স্থির হয়ে সবকিছু শুনে যাচ্ছেন। মুখে কোনো বিরুদ্ধ মন্তব্য নেই। তাঁর কাছে কি এই সমস্যাগুলোর অনায়াস সমাধানের কোনো সমীকরণ লুকানো ছিল? আমাদের বলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার সমাধান করে দিতেন? মোটেই না। অনেক সমস্যারই তিনি কোনো সমাধান করতে পারতেন না। তাঁর সাধ্য ছিল না। তবুও অসীম ধৈর্যের সঙ্গে তিনি সেসব শুনতেন। না পারার জন্যে তাঁর নিশ্চয়ই কষ্ট হতো। কিন্তু তিনি তা কখনও বাইরে প্রকাশ করতেন না।
আজ একটা বাড়ির প্রধান হয়ে বুঝতে পারি বাবার কষ্টটা। আমরা তো আমাদের সব অসুবিধার কথা বাবাকে জানাতাম। কিন্তু বাবারও তো নিশ্চয়ই কোনো অসুবিধা হতো। নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়ে বাবার কাছে কত বায়না করতাম। বাবারও কি মনে মনে কোনো ইচ্ছা জাগতো না? কোনো কিছু খেতে, কোথাও যেতে? কোনো দিন বাবা তাঁর অসুবিধার কথা আমাদের বলেন নি। আমি এমন একটা দিনের কথাও মনে করতে পারি না যেদিন বাবা আমাদেরকে কোনো জিনিস না দিয়ে একা একা খেয়েছেন। অথবা কোথাও চলে গেছেন। তাহলে কি বাবা হলে মনের সব ইচ্ছাগুলো আস্তে আস্তে মরে যায়?
আজ বুঝতে পারি মাথার ওপর একজন অভিভাবক থাকার কতো প্রয়োজন। সময় অসময়ে তাঁকে হাতের নাগালে পাওয়া যায়। অনেক কিছু জানানো যায় তাঁকে। তিনি হয়তো অনেক কিছুরই সমাধান করতে পারবেন না। কিন্তু তবুও তো বলে হালকা হওয়া যায়। শুধু তাই নয়, তিনি মাথার ওপর বটগাছের মতো বিরাজ করেন। আর কিছু না হোক, বুকের ওপর পাথর জড়ো হলে সেই অভিভাবকের পাশে গিয়ে কিছুক্ষণ অন্তত বসে থাকা যায়।
বাবার জন্যে আজ খুব কষ্ট হয়। একদিনের জন্যেও তার পাশে দাঁড়িয়ে বুকে হাত রাখি নি। মুখে বলি নি, তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা? একদিনের জন্যেও জিজ্ঞাসা করি নি, তোমার কি খেতে ইচ্ছা করছে বলো না বাবা, আমি এনে দেব। গভীর রাতে লিখতে লিখতে এসব মনে পড়লে খুব কান্না পায়। আরও একটা কথা আজ খুব মনে পড়ে, বাড়িতে বাবা কোনো কিছু নিয়ে এলে আমার ভাগ তো আমি খেতামই। পরে যখন বাবা খেত তখনও বাবার ভাগ থেকে আমি নিয়ে খেতাম। কোনো দিন বাবা না বলেন নি। আজ বুঝতে পারি বাবাদের বুকের ভেতর কষ্ট জমতে জমতে পাহাড় হয়ে যায়। কেউ ভুলেও একবার তা নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করেন না। এই পাহাড় বুকে নিয়েই তাঁরা একদিন হারিয়ে যায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।