১৫ ই আগষ্ট দেশ স্বাধীন হয়েছিল. কবে জেনেছিলাম ভুলে গেছি. খুব ছোটবেলাতে বেহালার আধা মফ:স্বল এলাকার অলিগলিতে একটা করে পতাকা উড়ত আর আমরা ‘জনগণ মন’ গেয়ে একমুঠো লজেন্স নিয়ে বাড়ী ফিরতাম. সেদিন লজেন্স খেতে মানা নেই. বাসা বদল হবার পর নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা ঢাকুরিয়ার একান্নবর্তী পরিবারের ধাঁচের ফ্ল্যাটবাড়ীতে পতাকা তোলার পর লজেন্সের সাথে সাথে আরেকটি অভিজ্ঞতা ঝুলিতে এল, বাড়ল আরেকটি পালক সংগ্রহের খাতায়.
এই পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক বছর এক দিদা স্বাধীনতার মানে বোঝাতেন. আর অনবরত তাঁর চোখে জল ঝরত, তখন বোঝার ক্ষমতা ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে স্বাধীনতা দিবস, বা ১৫ ই আগষ্ট একটা আবেগ. এক নিখাদ ভালবাসা. কি যে সেই ভদ্রমহিলা বলতেন আর মনে নেই. কঠিন কথাই হবে নিশ্চয়ই, হয়ত আবেগের সাথে ইতিহাসের মিশেল.
নব নালন্দার লাল উঠোনের বাড়ীটায় আসার পর জানলাম ‘মুক্তির মন্দির সোপাণ তলে, কত প্রাণ হল বলিদান’ এই গানটা শুনলে বুকে দোলা লাগে,আর – “এই দেশ, এই দেশ আমার এই দেশ” গানটা কোন ক্লাসের ছেলে গাইলে ভাললাগার শিরশিরে হাওয়া লাগে প্রাণে.
ইস্কুল ছেড়ে কলেজে, তখন নতুন পাখা গজাতে শুরু করেছে. স্বাধীনতার মানে তখন ইতিহাস বইয়ের পাতা ছেড়ে বিশ্লেষণে, মননে. দেশ স্বাধীন হবার পর দেশের শ্রী বৃদ্ধি হয়েছে না দেশ রসাতলে গেছে সেই নিয়েও তুমুল তুফান ক্যান্টিনে চায়ের কাপে. এই সময়তেই লোপামূদ্রা গেয়ে ফেললেন গানখানি ‘ স্বাধীনতা কি খায় না মাখে, স্বাধীনতা কি কেষ্ট না রাধে, সেটা শুধু স্বাধীনতা জানে. ” একেবারে চাবুক পড়েছিল মনে আছে.
আমাদের প্রজন্ম দেশভাগ দেখে নি, মন্বন্তর দেখে নি, শুধু স্বার্থপর হতে শিখেছে এই গঞ্জনা যখন গা সওয়া হয়ে গেছে তখনি এলেন ভার্জিনিয়া মেমসাহেব, ‘আ রুম অফ অয়ান’ স ওন’ নিয়ে , ব্যাস দেশকালের সীমা ছাড়িয়ে স্বাধীনতার মানে ঢুকে গেল রক্তে. ‘স্ব’ এর অধীনে থাকাই যে স্বাধীনতা আর সেই ‘স্ব’ কে যে কঠিন হতে হয় এই বুঝে উঠতে গিয়ে দেখলাম আমার একরত্তি কন্যার কলেজ যেতে আর মোটে দু বছর বাকি.
এত কিছুর মধ্যেও যেটা এক রয়ে গেছে তা হল , সেই চোদ্দই আগষ্টের ঘন্টা ধ্বনি, সেই কবেকার পড়া ‘ এট দ্য স্ট্রোক অফ মিডনাইট ওয়েন দ্য অয়ার্ল্ড স্লিপ্স, ইন্ডিয়া উইল আওয়েক টু লাইফ এন্ড ফ্রীডম’. কেমন বিদ্যুত ঝলকের মত শব্দগুলি. এই শব্দ চয়নে কতটা রাজনিতীর রঙ, কতটা স্বপ্নের সওদাগরী আছে জানি না. শুধু এটুকু জানি প্রত্যেকবার এই শব্দগুলি আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখায় নতুন ভোরের.