এই সময়ের লেখায় ধৃতি রায়চৌধুরী

আকাশবাণী কলকাতার ঘোষিকা ও এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসবের কাজের সঙ্গে যুক্ত। অবসরে বই পড়তে, সিনেমা দেখতে আর গান শুনতে ভালবাসি। কলকাতা অলিগলি ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসি।

এত খারাপ সময় যেন আর না আসে !

সম্প্রতি একটি ইংরেজি গানের বাংলা তর্জমা করেছেন শিল্পী অঞ্জন দত্ত। এটি তারই একটি লাইন।
২০২০
জানুয়ারির শেষ থেকেই মহামারীর খবর ছড়িয়ে পড়ে, তার চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস। ২০২০ এর আগমন যে খুব ভালো সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে এমন নয়। লড়াই চলছিল, লড়াই ! মাথার ওপরের ছাদটুকু বাঁচিয়ে রাখার লড়াই ! পেটের ভাত জোগাড়ের লড়াই ! এন আর সি, এন পি আর, সি এ এ – এই কতগুলো শব্দ এসে মানুষের জীবন থেকে সাময়িক শান্তিটুকুও কেড়ে নেয়। এই দেশ আর তার দেশ থাকবে না যদি না প্রমাণ জোগাড় করতে পারো। যদিও লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রমাণ কেনার দৃষ্টান্ত কম নয়। কিন্তু সেটা তোমার জন্য নয় গরীব মানুষ, তাই এই দেশও তোমার নয়। যা-ই হোক, এইসব মিলে সময়টা অস্থির ছিল – আন্দোলন, বিক্ষোভ, মিছিল। এর মধ্যেই এল ২০২০!
করোনা না কী একটা নাম শোনা যাচ্ছে – ভয়ংকর রোগ, দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। জানুয়ারির শেষেই হু করোনা কোবিদ ১৯ -কে মহামারী বলে ঘোষণা করলো।
– ধুর, তাতে কী! ভারতে তো কিছু না। ফেব্রুয়ারিতেও তেমন কিছুই নয়, তখনও চলছে ঘর বাঁচানোর লড়াই, বাঁধছে দিল্লি দাঙ্গা, চলছে রাষ্ট্রনায়কদের বন্ধুত্বের উদযাপন। কতগুলো মানুষ মরলো ! হিসেব রাখা অপ্রয়োজনীয়। তাদের প্রাণ বড্ড সস্তা।
আরও আছে – একের পর এক বনভূমি পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া, অসংখ্য প্রাণীর আর্তনাদ। এ-সবকিছুই “দুর্ঘটনা”।
ব্যর্থ হয়নি তাদের অভিশাপ !
বিষে বিষ হয়ে গেছে ২০২০!
এখন তাই এতো মানুষকে সুরাহা ও শুশ্রূষা দিতে ব্যর্থ সরকার।
মৃত্যু বন্যা বয়ে চলেছে বছর শুরুর শীত-মরশুম থেকেই।
টানা তিন মাস লকডাউন চললো দেশ জুড়ে। করোনা কোবিদ ১৯ ছড়িয়ে পড়ছে ঝড়ের বেগে। এরই মধ্যে এল একের পর এক ঝড়, হ্যাঁ আক্ষরিক অর্থেই ঝড়, প্রবল ঝড়। কেড়ে নিল ঘর বাড়ি, দলিল কাগজ, ভেঙে গেল নদীর বাঁধ, বড় বড় গাছ। তছনছ হয়ে গেল দুটো জেলা ও আরও বিস্তীর্ণ এলাকা।
তিন মাসের লকডাউনের পর হঠাৎ করে এসবের মধ্যেই খুলে দেওয়া হল অফিস কাছারি মন্দির মসজিদ রেস্তোরাঁ শপিং মল মদের দোকান, সব।
করোনা যেমন ছিল, তেমনই থেকে গেল।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগে থেকেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।
এই টানা তিন মাসের লকডাউন এই অবস্থাকে যে আরও থিতিয়ে দিয়েছে , এটা বলাই বাহুল্য।
এই যে লকডাউন হল, তার ফলে আর কিছু হোক না হোক, করোনা চলে যাক বা না-যাক, বেশ কিছু মানুষ কিন্তু কাজ-হারা হল। বেশ কিছুদিন রেশনে চাল ডাল মিললেও সংসারের খরচ চালাতে নাজেহাল অধিকাংশ মানুষ।
সংসার খরচ চালাতে যখন নাভিশ্বাস বেরিয়ে আসে, তখন অন্য অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা কল্পনাতীত হয়ে ওঠে সেসব মানুষের কাছে। আর এর ফলেই ধুকতে থাকে জামা-কাপড়, বই-খাতা বা সাজ-সজ্জার দোকানগুলো। স্বাভাবিকভাবেই টান পড়ে তাদের সংসারেও। চাহিদা কমে যাওয়ায় কমে যায় লাভ, আর তাই-ই বড় বড় কোম্পানি থেকে ছাটাই হয় কর্মী। কাজ-হারা হয় আরও এক শ্রেণীর মানুষ। এইভাবেই শিকলের মতো জড়িয়ে থাকা সমাজের প্রতিটা শ্রেণীই ধুকতে থাকে খিদের জ্বালায়।
কাজহীন মানুষগুলো খিদে-পেটে হতাশাগ্রস্ত হয়ে তিলতিল করে মরে যায়। আর বাড়ে কিছু ডিপ্রেশনে ভোগা রোগা মানুষ – মানসিক রুগী।
পসার বাড়ে শরীর আর মনের ডাক্তারদের।
আর যাদের ডাক্তারের সানিধ্য পাওয়ারও সামর্থ নেই ? – তারা প্রতিদিন মরে যায় একটু একটু করে। তারা বন্ধ্যা সময়ের ফসল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।