শ্বেতা আয়নাতে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে শাশুড়ি অনিতা দেবীকে বলে “মা আমরা আজ একটা পার্টিতে যাচ্ছি আপনি রাতের রান্না করে খেয়ে নেবেন।”
অনিতা দেবী আমতা আমতা করে বলেন “কিন্তু আমি তো তোমার ঐ অটোমেটিক গ্যাস জ্বালাতে পারি না আর একা একা তারপর যদি কিছু হয় যায়?”
পাশের ঘর থেকে অমিত তাদের কথাবার্তা সব শুনে সামনে এসে বলে “আহা মা তুমি না সত্যি !এক কাজ করো সামনের ঐ রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে শুনেছি আজ মহোত্সব আছে ওখানে না হয় চলে যেও, মন্দির দর্শন ও হবে আর সাথে তোমার ডিনারটাও হয়ে যাবে।”
ছয় বছরের রোহন সামনে বসে সবার কথোপকথন শুনছিল, গাড়িতে বসে রাস্তায় যেতে যেতে বাবাকে বলে “বাবা আমি যখন তোমার মতো অনেক নামি দামি মানুষ হবো তখন আমি একটা বড়ো বাংলো নেবো, একটা বড়ো মন্দিরের সামনে যাতে আমি এইরকম পার্টিতে গেলে তোমরাও মন্দিরে গিয়ে ভোগ খেয়ে আসতে পারবে আর তোমাদের যাতে দূরে না যেতে হয়।”
শ্বেতা আর অমিত দুজনেই দুজনের দিকে একবার দেখে আর গাড়ি উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে আসে এইভেবে যে তাঁরা এসে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে আর সাথে মাকে ও নিয়ে যাবে।
দরজার সামনে আসতেই তাঁরা শুনতে পায় ঘরের মধ্যে মিউজিক চলছে জোর কদমে, ভেতর থেকে হাসাহাসির আওয়াজ ও ভেসে আসছে কানে। দরজার কলিং বেল বাজায় শ্বেতা, অনিতা দেবী জোরে বলেন নীলিমা দরজাটা খুলে দে তো মনে হচ্ছে অর্ডার টা এসে গেছে ।
নীলিমা দেবী পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন দরজা খুলে দেখেন অমিতরা ফিরে এসেছে, জিজ্ঞেস করেন “বাবা তোমাদের পার্টি ক্যান্সেল হয়ে গেছে? শুনেছি আজ তোমার অফিসের অনেক বড়ো পার্টি ছিল, কত বড়ো বড়ো নামি দামি মানুষ আসবে আজ, তো আগে খবর দেয়নি তোমাদের?” কথাগুলো নীলিমা দেবী এক নিশ্বাসে বলে যান, ঠিক আছে বাবা ভালোই হোলো এসো তোমরাও আমাদের পার্টিতে জয়েন্ট করো, আর খাবার আরো তিনটে অর্ডার করে দিচ্ছি”
অনিতা দেবী “কি গো নীলিমাদি কার সাথে এতো কথা বোলছো অর্ডার নিয়েছো? জিজ্ঞেস করতে করতে দরজায় অনিতা দেবী একটা জেগিন্স ওপরে লাল টপ, ঠোঁটে লিপস্টিক, শ্বেতা হা করে তাকিয়ে থাকে। রোহন বলে ঠাম্মা! তুমি কি পরেছো?
নীলিমা দেবী বলেন আজ তোমার ঠাম্মির জন্মদিন তাই আমরা তোমার ঠাম্মিকে গিফ্ট করেছি। ভেতর থেকে ভেসে আসছে গান “অভী তো ম্যায় জয়া হু”
শ্বেতা আর অমিত মুখ নীচু করে ঘরে ঢোকে ভেতর ঘরে সমবয়সী সব এই ফ্ল্যাটের আরো পাশের ফ্ল্যাটের কিছু পুরুষ মহিলা সবার হাতে কোল্ড ড্রিঙ্কস আর স্ন্যাকস তাঁরা সবাই যে যার মতো এনজয় করছে।
অমিত, শ্বেতা নিজেকে খুব অপরাধী মনে করে
সবাই একসাথে পার্টিতে জয়েন্ট করে ততক্ষণে কেক ও এসে গেছে রোহন বলে ঠাম্মা আমিও তোমার সাথে কেক কাটবো। অনিতা দেবীর এতো আনন্দের মধ্যে ও চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ে, কেক কাটে ,”হ্যাপি বার্থডে অনিতা।” সারা ঘরময় গমগম করে ওঠে। এই নামটা ধরে এখন আর কেউ তাকে ঘরে ডাকার নেই সবাই অমিতের মা, রোহনের ঠাকুমা এইভাবেই ডাকে আজ নিজের নামটা শুনে কিছুটা হলেও নিজের পরিচয়টা আর একবার কিছুটা দিন পেছনে নিয়ে যায়।
পার্টি শেষে সবাই চলে গেলে, শ্বেতা “আমাদের এইভাবে সবার সামনে অপমান না করলেও পারতেন মা, আপনার জন্মদিন আমাদের বললে তো পারতেন, না না বৌমা আমি তো কিছুই জানি না ঐ মন্দিরে যাবো বলে ঘরের তালা দিচ্ছি এমন সময় ওঁরা সবাই পেছন থেকে এসে হ্যাপি বার্থডে বলে ধরলে বলে আজ পার্টি দিতেই হবে। তাই আর কি আর ওসব তো ওঁরাই করেছে, ওঁরা বলছিল দুবছর আগেও বিপিন দা থাকতে তোমার জন্মদিনের কতো ঘটা করতেন উনি।
“থাক থাক আর আমাদের টোন্টিং করতে হবে না।
এই বুড়ো বয়সে আপনার ভীমরতি ধরেছে, দরজায় কলিং বেল, এতো রাতে আবার কে এলো? শ্বেতা দরজা খোলে সামনে নীলিমা দেবী, বৌমা আমার মোবাইলটা ভুলে ফেলে গেছি আর হ্যাঁ তোমার সব কথাবার্তা আমি বাইরে থেকে শুনছিলাম তাই একটু দেরি হোলো বেল বাজাতে, ইচ্ছে করেই বেলটা বাজাইনি। তাহলে তো কিছু জানতেই পারতাম না, দ্যাখো বৌমা তোমরা নিজেরা সব করতে পারবে আর আমাদের বয়স হয়েছে বলে কি আমরা এতটাই অবাঞ্ছিত যে নিজের টুকরো টুকরো খুশি গুলো সবার মধ্যে ভাগ করে নিতে পারবো না? যদি এটা ভাবো তবে ভুল ভাবছো। আমাদেরও পুরো অধিকার আছে নিজের মতো করে বাঁচার। আর হ্যাঁ অনিতাকে কিছু বলবে না, ও তো কিছুই জানত না, আমরাই…..
শ্বেতার কথাগুলো কতটা কানে গেল বা বুঝল তার কোনো পরোয়া না করেই নীলিমা দেবী বেরিয়ে যান…..