গল্পেরা জোনাকি তে দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

সরীসৃপ

      হঠাৎ পাশে এসে বসলো বিজলী। বিজলী তৃতীয় লিঙ্গ–হিজরে। ট্রেনের যাত্রীদের কাছ থেকে ওরা তালি বাজিয়ে পয়সা তোলে।বেশ জোরজুলুম করে ওরা। নিত্যযাত্রীদের সাথেও আগে এরকম করতো।বেশ কয়েকবার ঝামেলা হাওয়ায় এখন ওরা নিত্যযাত্রীদের এড়িয়ে চলে। সায়নের সাথেও আগে বাকবিতণ্ডা হয়েছে । আস্তে আস্তে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। হাতে চায়ের কাপ দেখে চা খেতে চাইল বিজলী।চা দোকানী  শুভকে বলে ওকে চা বিস্কুট খাওয়ালাম। অনেকক্ষণ ট্রেন নেই। স্টেশনে বেশ ভিড়।খবর হলো মেচেদা লোকাল আসবে। বিজলী অকারণ হাসতে হাসতে গায়ে ঢলে পড়ছে। আশপাশের কৌতুহলী মুখে মুচকি হাসি।

        একটা আওয়াজ কানে এলো। একটা মেয়ের চিৎকার।মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলাম জনা চারেক ছেলে জিন্স টপস্ পরা এক তন্বী সুদর্শনাকে হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে কোথাও। একটা ছেলে মেয়েটির শরীরের ব্যক্তিগত জায়গায় হাত দেবার চেষ্টায়।মেয়েটির সাহায্যের চিৎকারে উপস্থিত আশপাশের মানুষ নির্লিপ্ত ।মুখ ঘুরিয়ে ছিটকে এদিক ওদিক সকলে। ওদের উদাসীনতায় ছেলেগুলো দ্বিগুণ উৎসাহে।আর সহ্য করা যাচ্ছে না। উঠে দাঁড়ালাম। আমার আগে বিজলী এগিয়ে গেল ছেলেগুলোর দিকে চোখে আগুন নিয়ে।

         বিজলী গিয়ে দাঁড়াল ছেলেগুলোর মাঝে।মেয়েটার হাতটা ছাড়াতে চেষ্টা করল। ছেলেটা ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল ষ্টেশনে। ব্যাস্, বিজলী সঙ্গে সঙ্গে রণং দেহী ! সামনের চায়ের দোকানের ফুটতে থাকা গরম চা  ছুঁড়ে দিল ছেলেটার গায়ে।” বাবা গো” চিৎকারে মুখ ঢেকে বসে পড়ল  ছেলেটা জ্বলুনিতে। দ্বিতীয় ছেলেটা ছুড়ি নিয়ে আক্রমণ করতেই ও দোকানের একটা কাঁচের জার তুলে মারলো মাথায়। মাথা ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো ছেলেটার। তৃতীয় ছেলেটা ঝাঁপিয়ে পড়লো বিজলীর ওপরে।কিল চর ঘুসি চলতে থাকল। বিজলীও ছাড়ার পাত্র নয়। সমস্ত অন্যায়ের ও যেন আজ শেষ দেখতে চায়  ! দোকানে রাখা লোহার শিকটা তুলে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে মারল ছেলেটার ডান হাতে।মট্ করে একটা আওয়াজ হলো। ছেলেটা যন্ত্রণায় ছিটকে পড়ল ষ্টেশনে। চতুর্থ ছেলেটা পালাতে চেষ্টা করতেই বিজলী ওর পা লক্ষ্য করে চালালো শিকটা। প্রচন্ড আঘাতে ছেলেটা খোঁড়াতে খোঁড়াতে ছুটল ষ্টেশন ছেড়ে। বিজলী তাড়া করতে গেল। ওকে জড়িয়ে ধরে ক্ষান্ত করলাম। হাঁপাচ্ছে বিজলী। ছুটে গিয়ে ও মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটা তখনও কেঁদে যাচ্ছে অঝোর ধারায়।

          বিজলীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে। দুএকজন এগিয়ে এসে কথাটা বলতেই বিজলী চিৎকার করে উঠল : “সার্কাস দেখছিলিস সব এতোক্ষণ। স্বার্থপর কাপুরুষ সব ! আমরা হিজরে বলে ঘেন্না করিস।আর তোরা? না- মর্দ ! চোখের সামনে মেয়েটার ক্ষতি হতে দেখছিলিস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।কাল এরাই তোর মা-বোনকে ধরবে। লিঙ্গ খাড়া করার তেলটা এবার তোদের শিরদাঁড়ায় লাগা ওটা সোজা করতে। সরীসৃপের দল “! দমকা হাওয়া বিজলীর কথাগুলোকে যেন ভাসিয়ে নিয়ে গেল শিক্ষিত সুসভ্য সমাজের কাছে বার্তা দিতে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।