Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

ক্যাফে ধারাবাহিক গল্পে সুব্রত সরকার (অন্তিম পর্ব)

maro news
ক্যাফে ধারাবাহিক গল্পে সুব্রত সরকার (অন্তিম পর্ব)

অন্তরার শেষ কথাগুলো

পাঁচ

অন্তরা চলে গেছে আজ বাইশ দিন হল। আমি ওর কথামত গৌড়ীয় মঠে পারলৌকিক কাজ করেছি। চিতার ছাইভস্ম তুলে রেখেছি। ডুলুংকে নিয়ে যাব ঝাড়গ্রামে। ডুলুং নদীর জলে বাপ-বেটিতে দাঁড়িয়ে অন্তরার শেষ চিহ্নটুকু ভাসিয়ে দিয়ে আসব। ওর প্রিয় নদীর জলে ভাসতে ভাসতে ও কোথায় হারিয়ে যাবে জানি না! অন্তরার বাকি ইচ্ছেগুলোর কথা মনে রেখেছি। সময় ও সুযোগ মত সেগুলো পালন করব। কিন্তু ওর একদম শেষ ইচ্ছের কথাটা আমি কি করে যে রক্ষা করব জানি না। আমি সামান্য এক লেখক। ভালো-মন্দ মিশিয়ে কিছু গল্প লিখেছি। লিখতে ভালোবাসি। ও ছিল আমার সব গল্পের প্রথম পাঠক! ভালোবাসত আমার লেখা গল্পগুলো পড়তে। আজ তিনদিন ধরে কত চেষ্টা করছি, কি করে একটা গল্প লেখা যায় অন্তরাকে নিয়ে। কিন্তু কিছুতেই লেখাটা শুরু করতে পারছি না। গত তেরো মাস আমি একটা লাইনও লিখতে পারি নি। হসপিটালে ছুটে ছুটে বেরিয়েছি। তবু হেরে গেলাম। হারিয়ে ফেললাম ওকে! একটা হেরো লোক কি করে গল্প লিখবে? সার্থক গল্প লেখা তো এক মহৎ শিল্পকর্ম। অন্তরা, আমি পারছি না। আমাকে ক্ষমা করে দিও! লেখার টেবিলে স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। লেখা শুরু করতে পারি নি। ভাবনায় শুধু ভিড় করে আসছে কত কথা, কত স্মৃতি। কিন্তু লিখতে পারছি না। পাশে পড়ে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠল। আমার লেখক বন্ধু দেবদাস কুণ্ডুর ফোন। ফোনটা ধরে বললাম, “হ্যাঁ, বল…” “কেমন আছিস? লেখার টেবিলে বসছিস তো?” চুপ করে রইলাম। ও প্রান্তে বন্ধুর স্নেহে দেবদাস বলে যায়, “লেখ। লেখা শুরু কর আবার। লেখাটাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। লেখার মধ্যে ফিরে আয়।” অন্তরারও শেষ কথাগুলো এমনই ছিল, “লেখাটা নষ্ট করবে না। লেখা ছেড়ে দেবে না।” দেবদাসকে আর বলতে পারলাম না অন্তরার শেষ ইচ্ছের কথাগুলো। সাদা পৃষ্ঠা চেয়ে আছে আমার দিকে। কলম ছুঁয়ে কালি অক্ষর হওয়ার অপেক্ষায়। তবু গল্প আসছে না আমার ভাবনায়, আমার কলমে, আমার কালিতে! লেখার টেবিলে চুপ করে বসেই আছি। অন্তরা, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো, আমার এই লিখতে না পারার যন্ত্রণাদগ্ধ কষ্টটা! আমি তো লিখতেই চাই, তোমাকে নিয়ে একটা গল্প!...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register