Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ক্যাফে ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ১)

maro news
ক্যাফে ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ১)

শহিদ ভগৎ সিং চরিত

প্রথম অধ্যায় || প্রথম পর্ব

বায়োস্কোপওয়ালা লোকটি, হ্যাণ্ডেল ঘুরিয়ে বলে চলেছে, "দেখ খোকাবাবুরা, দেখ, ছেলেটি কূপের পাশ থেকে রক্ত- জমাট মাটি খুঁড়ে, মাথায় ঠেকিয়ে, বাঁ হাতে ধরা শিশিতে পুরছে, চোখের জল গেছে শুকিয়ে; দূরের দেওয়ালে, মেশিন গানের গুলির গর্তের দিকে চাওয়া মাত্রই, ছেলেটির চোখে আগুনের গোলা ছুটতে আরম্ভ করলো, দেখ খোকাবাবুরা, দেখ, ছেলেটিকে চিনে রাখ; বয়স তোমাদের মতই হবে, মাত্র বারো বছর; ১৩ই এপ্রিল ১৯১৯ সালে, অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালা বাগের গণ-হত্যার পরের দিন বা তার পরের দিনের ঘটনা এটা; স্কুল যাবার পথে, সে পিঠে স্কুল- ব্যাগ নিয়েই লাহোর থেকে চলে এসেছে একাই, এই অমৃতসরে; বাড়িতে সবাই উদগ্রীব, কখনও তার ফিরতে এত দেরী হয় না! বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে, ছেলেটি বাড়ি ঢুকছে। ছোট বোন, ছুটে এসে বলছে, 'ভাইয়া, তোমার ভাগের ফলটা আমি রেখে দিয়েছি'।"

"মাটি- ভর্তি শিশিটা সযত্নে, চেস্টার- ড্রয়ারের উপরে রেখে চলে প্রতিদিন ফুল চরানো, চলে প্রতিদিন প্রণাম; সে সময় সে বিড়বিড় করে কী বলে বলা যাবে না, তবে তখন তার চোখ- মুখ কী রকম, অস্বাভাবিক হয়ে যায়।"

"ছেলেটির বয়স যখন মাত্র চার বছর, দুনিয়ার কিছুই যখন সে জানে না, দেখেনি, কেবল নিজেদের পরিবারের চাষ- আবাদের ফসল ছাড়া সব অজানা, তখনই সে বলছে, দেখ, ভালো করে দেখ, 'চাচাজান(বাবার বন্ধু, স্বাধীনতা সংগ্রামী মেহতা আনন্দ কিশোর জিকে), আমি বড় হলে জমিতে রাইফেলের চাষ করবো, ভালো ফসল পেয়ে দেশ থেকে বৃটিশদের তাড়াবো।' বাবা কিশেন সিংজি, সেদিনই ছেলের জাত চিনতে পেরেছিলেন; তাঁদের পরিবার তো স্বাধীনতা সংগ্রামদের পরিবার। বাবা কিশেন সিংজি, নিজে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেল খেটেছেন, কিন্তু কাকা অজিত সিং, স্বর্ণ সিং'র জীবন তো জেলখানায় ও নির্বাসনেই কেটেছে বহুদিন। কাকা অজিত সিং ও লালা লাজপত রাই মিলে, ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'ভারত মাতা সোসাইটি'; কিন্তু করলে কী হবে, উভয়ের কাজের ধারায় ছিল বিস্তর ফারাক; সাবেকি বর্মায়, কাকা বহুদিন নির্বাসিত ছিলেন। পরে, গোপনে দেশ ছেড়ে ল্যাটিন আমেরিকায় গিয়ে, বৃটিশ তাড়াবার বিপ্লবী সংস্থা তৈরি করেন। এই কাকা, অজিত সিং- ই ছিলেন বালকের আইকন; দু'জনে মধ্যে চিঠি- চাপাটি চলতো।"

"বাড়িতে রয়েছে চাচীজান হরনম কাউর, স্বামী থেকেও নেই, আর রয়েছে স্বর্ণ সিং'র বিধবা হুকুম কাউর। তাঁদের দুঃখ, মর্ম- ব্যথা, ছেলেটিকে যে ব্যথিত করবেই তা বলাই বাহুল্য;তাই বিয়ের কথা- বার্তা চলতেই ছেলেটি হবে নিরুদ্দেশ। এই ছেলেটি কে বলতো? ভারতের রাজনীতি প্রাঙ্গণে ওঠা- নতুন স্লোগান- 'ইনক্লাব,জিন্দাবাদ'এর আকাশচুম্বী মাত্রা এনে দেয় এই ছেলেটিই, যদিও এই স্লোগানের উদ্ভাবক ছিলেন হসরৎ মোহানি।এই স্লোগানই হল, প্রকৃত বিপ্লবী- দের স্লোগান, war- cry, যারা সত্যই পৃথিবীর বুক থেকে সব অনাচার দূর করে আমূল-সংস্কার সাধন করে, সমাজতান্ত্রিক দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখে; তাদের মুখের নিঃসৃত বাণী হচ্ছে 'ইনক্লাব, জিন্দাবাদ'; এরা মুখোশধারী নয়, হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় পরে, দেশের যুব- সম্প্রদায়কে বিপ্লবের পথে উদ্দীপ্ত করতে পিছপা হননি; আত্মাহুতি দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়েছেন।"

"মাত্র সাত- বছরের রাজনৈতিক ক্রিয়া - কলাপে যুক্ত থাকলেও এই ছেলেটি, জনপ্রিয়তায় গান্ধীজিকে পিছনে ফেলেছেন; না, এ কথা, অন্য কারও নয়, গান্ধী প্রিয়, সীতারাম পট্টনায়কই এ উক্তি করেছেন। ছেলেটির অস্তিত্ব ছিল গান্ধীজির প্রতিবন্ধক। বল তো কে এই ছেলেটি? সে হল পরিবারের আনন্দসূর্য, হ্যাঁ, আনন্দ- সৌভাগ্যের অগ্রদূত; তার জন্মের দিন ২৮সেপ্টেম্বর, ১৯০৭ সাল(চক নং১০৫, লায়ালপুর বাঙ্গে, বর্তমানে পাকিস্তান), আর ঐ দিনই কাকারা সবাই জেল থেকে ছাড়া পান। পরিবারে নেমে আসে আনন্দধারা, তাই ঠাকুরদা, এই সৌভাগ্যের প্রতীকের নাম রাখেন 'ভাগনওবালা', আমাদের সকলের প্রিয়, স্বাধীনতার জাজ্জ্বল্যমান সূর্য, যাঁর প্রখর তেজ, শহিদ হবার অল্পদিনের মধ্যেই, বৃটিশকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে, সেই ছেলেটি আর কেউ নয়, সে আমাদের অতি আদরের শহিদ ভগৎ সিং।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register