Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় অসীম কুমার রায়

maro news
T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় অসীম কুমার রায়

মিছিমিছি

  তখন আমি ছয় কি সাত বছরের। আমাদের চারতলা ছাদের উপর সেইসময়, রেল কোয়ার্টারের আকাশে, বিশ্বকর্মা পুজো আসলে, কতরকম ঘুড়ি উড়ত। চাঁদিয়াল, পেটকাটি, মোমবাতি, মুখপোড়া, ময়ূরপঙ্খী আবার ভেড়িয়াল, ত্রিপট্টা, ডাইমন্ড, বগ্গা — আরো কত নাম, কত নাম না জানা ঘুড়ি!   বাবার কড়া নিষেধ ছিল, একালা যেন যখন তখন ছাদে না উঠি। বাবা অফিস চলে গেলে, আমি মাকে ম্যানেজ করে দুপুরে ছাদে চলে যেতাম। দেখতাম ঘুড়ির লড়াই৷ একটা ঘুড়ির সাথে আরেকটা ঘুড়ির কী দারুণ লড়াই! লড়াই করতে করতে একেকটা ঘুড়ি ভোঁকাট্টা হয়ে নীচে নেমে আসত। এরকম একটা ঘুড়ি আমি ছাদে জল ট্যাঙ্কের কাছে গিয়ে ধরে ফেলি। ঘুড়িটা বেশ বড়োসড়ো। পেটকাটি। সঙ্গে অনেকটা মাঞ্জা দেওয়া সুতো। এই সুতোর মাঞ্জার উপর ঘুড়ির কাটাকুটি নির্ভর করত। ডিম, আঁঠা, গদ, সাবু আর কাঁচের গুড়ো, আর হলুদ দিয়ে, মাঞ্জা দিতে হয়। তারপর রৌদ্রে শুকানো। মাঞ্জা, হাতের কায়দা আর লাটাই টানা, যে ওস্তাদ যতবড় তার ঘুড়িও সেইমত কাটাকুটি খেলত।   এই ঘুড়ি ধরার জন্য অফিস থেকে বাড়ি আসার পর বাবার কাছে প্রচণ্ড মার খেলাম। বাবা মাকেও খুব ধমকাল। জল ট্যাঙ্কের কাছে চারতলা ছাদের থেকে যদি নীচে পড়ে যেতাম...! বাবা টেনশনে অস্থির হতে লাগলেন। সেদিন রাত্রিরে খাওয়া-দাওয়ার পর বাবার বুকে, এর আগে আরেকবারের মতোন, অসহ্য যন্ত্রণা। খালি বলছেন, আমাকে এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে চল। মা ও আমি তখনই পাশের কোয়ার্টারে অনিল কাকুকে সঙ্গে নিয়ে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম৷ ডাক্তার বললেন অবস্থা খুব সিরিয়াস। ইমিডিয়েট্ আই.সি.ইউ-তে নিতে হবে। আপনারা এখন বাড়ি যান, কাল সকালে আসবেন। মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। পরেরদিন যখন বাবাকে দেখতে গেলাম তখন বাবার নাকে অক্সিজেন, হাতে স্যালাইন। কথা বলতে পারলেন না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকলেন৷ মায়ের চোখে অঝোরে জল৷ আমি ক্যাবলাকান্ত, তখন ভেল ভ্যেলেটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷   আজ আর সেসব বালখিল্ল্য নেই। কিন্তু এখনও আমি লিলুয়ার আকাশে বিশ্বকর্মা পুজো আসলে, চারতলা ছাদের উপর সেই স্বপ্নের ঘুড়িগুলো উড়তে দেখি। লাল নীল হলুদ নানা রঙের ঘুড়ির সাথে সাথে কতজন ছেলে মেয়ের উঠতি স্বপ্নের কতরকম মন, রঙবেরঙের — ছোটাছুটি, উড়াউড়ি করত, ছাদে ছাদে— এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে। জীবনও তো এক স্বপ্নের মতন। কার ঘুড়ির সাথে কার ঘুড়ি কেটে মাথার উপর ভোঁকাট্টা হবে কেউ কি জানে? অনিশ্চিত সুতোর মাঞ্জার উপর উড়ছে, আমাদের ঘুড়ির জীবন।   জীবন অথবা মৃত্যু৷ মাঝের সময়টা ভীষণ মিছিমিছির মতোন মনেহয়৷ আজও ভাবি, ঐ পেটকাটি ঘুড়িটা যদি কার্নিশের ধারে জলট্যাঙ্কির কাছে না ধরতে যেতাম, বাবা কি আরো অনেক বছর হয়ত বেঁচে থাকতে পারতেন...!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register