Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ক্যাফে ধারাবাহিক গল্পে সুবল দত্ত (পর্ব - ৬)

maro news
ক্যাফে ধারাবাহিক গল্পে সুবল দত্ত (পর্ব - ৬)

হন্যতে

উল্লাস দুপুরে বেরবার পর রোজই উত্‍পলা বাথরুমের তালা খোলে। সেদিনের পর আইসক্রিম ফ্রিজ যথারীতি তালা বন্ধ। আর চাবি দিতে ভোলেনি উল্লাস। আজ দেখলো ফ্রিজের একপাশে একগাছা লম্বা চুল। তারমানে নারায়নীর অর্ধেক মুন্ডু এখনো রাখা আছে, আর এটাই বোধহয় শেষ অংশ। উত্‍পলা তাড়াতাড়ি তালাবন্ধ করে বাইরে এলো। শরীর একেবারেই সাথ দিচ্ছে না। গতরাতে প্রচণ্ড ঝড় বিদ্যুত্‍ বৃষ্টি হয়েছিল। উল্লাস আরো বেশি খুনখার ও ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল। উত্পলার মনে হয়েছিল এই বুঝি তার শেষ সময়। তারপর সারারাত ঘুম হয়নি তার। ভাবছিল আর কতদিন কতদিন এইভাবে সহ্য করবে সে? ইয়ূথ হস্টেলের রুম পার্টনার নারায়নীর প্রতি অঙ্গ তার চেনা। ওর হাসি ওর বিদ্যা বুদ্ধি। ওর চোখের ভাষা ওর কথা। কি বিচ্ছিরী ভাবে ওকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নির্দয় ভাবে ওকে হত্যা করেছে? এর কোনো প্রতিকার নেই ভগবান?

সারারাত প্রকৃতির তান্ডব নৃত্যে জড়োসড় হয়ে কুকড়ে শুয়ে ছিল উত্‍পলা। ভোরের দিকে টের পেল উল্লাস তার বন্ধ দরজার ছিটকিনি খুলে দিচ্ছে। হয়তো এই ঝড়ঝঞ্ঝা তোয়াক্কা না করে ওই অসুরটা নারায়নীর হাড় মাংস ফেলতে গেছিল। উত্‍পলা থেকে থেকে শিউরে ওঠে।

দুপুর তিনটের সময় উল্লাস বেরিয়ে যাওয়ার পর উত্‍পলা ছাদের উপরে উঠে দেখে ছাদে মস্ত একটা গাছের ডাল। গতকাল ঝড়ে পাশের বড় গাছটা থেকে ভেঙে উড়ে এসেছে। ছাদের কিনারায় গিয়ে দেখে সেই বিশাল গাছটা মাটি থেকে উপড়ে এইবাড়ির দেওয়ালের উপর পড়েছে। সেদিকের দেওয়ালটাও ভেঙেছে। ভাগ্যিস ওদের দিকে কিছু হয়নি। এই কথা মনে আসতেই উত্‍পলা হেসে ফেলল। গাছের একটা বড়ো ডাল ছাদের নাগালের মধ্যে দেখেই উত্পলার পা দুটো যেন সেই কিশোরীর অবস্থায় এল। চনমন করে উঠলো সারাদেহ মুক্তির আশায়। ছাদে ওঠার টিনের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ছাদের কার্নিশ থেকে অনায়াসে গাছের উপর নেমে পড়ে তরতর করে নেমে পড়ল মাটিতে। কটাশগুলোর আসার সময় হয়নি। এই সুযোগে পালিয়ে যেতে পারে। মেনরোডের দিকে দৌড়ে যেতে গিয়েই উল্টোদিক থেকে মোটরসাইকেলের শব্দ শুনতে পেল। তাড়াতাড়ি একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল উত্‍পলা। উল্লাস আসছে। আজ একঘন্টার মধ্যেই কেন চলে এল? কিছু সন্দেহ করেছে নাকি? না না তা কেন হবে, অন্যকোনো কারণ হয়তো। কম সে কম গতরাত অব্দি তো একটুও আভাস পায়নি যে উত্‍পলা সব জেনে গেছে। তবে ঘরে ঢুকেই তো জেনে যাবে। উত্‍পলা উল্লাসের মেন গেট দিয়ে ঢোকার অপেক্ষায় লুকিয়ে থাকলো। উল্লাস গেটের ভিতরে ঢুকতেই উত্‍পলা দৌড় লাগলো। মেনরোডে উঠেই হঠাত্‍ দাঁড়িয়ে পড়ল। পালিয়ে তো সে যাবেই। সে তো এখন মুক্ত। কিন্তু মেনরোড দিয়ে গেলে ও ধরে ফেলবে। ধরা সে কোনমতেই দেবেনা। তবে নারায়ণীকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করে কুটিকুটি করে কেটেছে, তার শেষ দেখবে না? কোথায় সে ফেলে সেই হাড় মাংস, সেটা জানতেই হবে। এরমাঝে উল্লাসের হাতে ধরাপড়ে যদি প্রাণ যায় তো যাক। পালিয়ে আর কোথায় কতদিন বাঁচবো?

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register