Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ক্যাফে ধারাবাহিক গল্পে সুবল দত্ত (পর্ব - ৩)

maro news
ক্যাফে ধারাবাহিক গল্পে সুবল দত্ত (পর্ব - ৩)

হন্যতে

উল্লাস ও চপার

কম্পিউটারের মনিটার প্যানেলের দুপাশে লম্বা দুটো সিপিইউ। দেওয়াল ঘেঁষে বেশ বড় টেবিলের উপর উল্লাসের কার্যক্ষেত্র। ঘরময় ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ। উত্‍পলা একেবারেই সন্দেহবাতিক নয়। কৌতুহল একেবারেই নেই তার। এটাই উল্লাসের খুব পছন্দ। মনে হয় সম্পর্কটা বেশ কিছুদিন রাখা যেতে পারে। তবুও দুটো প্রশ্ন ওর মনে জেগেছে। বলেছে,তোমার ঘরে এতো ব্লিচিংগের গন্ধ কেন? তোমার বাথরুমে এতো বড় আইসক্রিম ফ্রিজ কেন? উল্লাস অবশ্যি ঠিক ম্যানেজ করে নিয়েছে। তবে ও ওয়াশরুম ঘরের দরজা বন্ধ করেই খোলে। বাথরুম সে একটা নাম্বার লক লাগিয়ে রাখে।

রাত এখন দুটো। উত্‍পলার নাক ডাকার আওয়াজ ভেসে আসছে। ওর এখন জেগে ওঠা অত সহজ নয়। রাতে খাবার টেবিলে বসে উল্লাস যে স্ম্যাক নেয়, সেই কড়া ডোজের হাসিস আর গাঁজার ধোঁয়ায় যে কোনো এডিক্টেড মানুষ আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে, তো উত্‍পলা কিছুই না। উল্লাস খুব আস্তে করে উত্পলার রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। নিজের রুমে এসে স্ক্রু ডাইভার দিয়ে সি পি ইউ বক্সের একটা সাইড খুলে ফেলল। হাত বাড়িয়ে কাপড়ে মোড়া একটা বড় ও ভারী চপার বের করল। কাপড়ের মোড়ক খুলতেই চকচক করে উঠল হাতিয়ার। উল্লাস একবার কপালে ঠেকিয়ে চুমু খেল। এই হাতিয়ারটি সে পারিবারিক উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছে। ওর দাদাজী তাকে উপহার দিয়েছিল। বেশ কয়েকপুরুষ ধরে কসাই সমাজের প্রধান হয়ে আসছে ওর পিতামহ প্রপিতামহ। বংশপরম্পরা ওর কসাইয়ের জীবিকায়। চপারটা উল্লাসের হাতে দিয়ে ওর দাদু বলেছিল, এই অস্ত্র খোদ ঈশ্বরের দূত আমাদের বংশের একজনকে দিয়ে বলেছিল, যদি এই অস্ত্র দিয়ে পাঁচশো নিরানব্বুই বড় প্রাণীর কতল করতে প্যারিস, তো স্বর্গ থেকে পাঁচ মানুষের মুন্ডছেদ করার অনুমতি পেয়ে যাবি। পাঁচ মানুষের গর্দান নিতে পারলে শুধু তুই নয়, আমাদের সকল কসাই সমাজ মুক্তি পেয়ে স্বর্গে চলে যাবে। এখনো অব্দি কেউ এই কাজ করতে পারেনি। আমার বিশ্বাস তুইই এই কাজ করতে পারবি। আমাদের সবার মুক্তির জন্যে এই কাজ তোকে করতেই হবে। এই কথা বলে ঠাকুর্দা মাটিতে খুব জোরে জোরে মাথা ঠুকে ওদের দেবতাকে প্রণাম করেছিল।

সেই হাতিয়ার এখন উল্লাসের হাতে। বয়ঃসন্ধি পার হতেই তার একটিই লক্ষ্য ছিল বড় জানোয়ারের ধড় থেকে মুন্ডছেদ। তাই ইস্কুল ও পড়াশুনো বাদে দে বসে থাকতো বুচারের দোকানে। তালিম নিতো। কখনো ছোট বড় খাসি কখনো বড় পশুর গর্দান দুফাঁক করার কাজ। কয়েক বছর পর ও এইকাজে এমন নিপুণ হয়েছিল যে এক চোটেই কাজ তামাম হয়ে যেত। উল্লাসের এঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ হওয়ার পর এই সফটওয়ার কম্পানিতে জয়েন করার মধ্যেই তার জানোয়ারের মুন্ডছেদ করার কোটা পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।

উল্লাস কাটারিটা আবার যথাস্থানে রেখে দিল। এখন এটার কাজ নেই। আগের মালটার শেষ নিকেশ না হওয়া অব্দি অন্যকোনো নতুন কাজে হাত দেওয়া চলবে না। উল্লাস এবার অন্য সিপিইউ এর ঢাকনা খুলল। সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত করাত চাকা বের করে আনলো। সেটার পার্টসগুলো এমনভাবে খুলে রাখা ছিল যে কেউ জানতেই পারবেনা যে এটা একটা ইলেকট্রিক করাত। করাতের পার্টস নিপুণ হাতে এসেম্বল করে সে আইসক্রিম ফ্রিজের ডালা খুলল। এটা একটা ডিপ ফ্রিজ। তাপমাত্রা অনেক কম করা আছে। ফ্রিজের ডালা তুলতেই সাদা ধোঁয়া, ফরম্যালডিহাইড আর বাসী মাংসের গন্ধ। শক্ত কাঠ হয়ে যাওয়া চিমসে কালো একটা পায়ের আকৃতি বরফ ভেদ করে উঠে আছে। পায়ের একটা আঙুলে রূপোর মিনে করা আংটি। উল্লাস পাটাকে মুড়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করল,পারলো না। শেষে একটা হাতুড়ি দিয়ে হাঁটুতে জোরে মারতেই মট করে শব্দ হল কিন্তু মৃতদেহ ঘুরে গিয়ে অন্য পা উঠে এল। এই পাটা এখনো সুঠাম। রাইগার মর্টিসের জন্য শক্ত হয়ে আছে কিন্তু বিকৃত হয়নি। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা সাদা ভাপ উপরে উঠে মিলিয়ে যাচ্ছে। এক ভৌতিক পরিবেশ। মৃতের ফুসফুস হার্ট পাকস্থলী ইত্যাদি যত কোমল পচনশীল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আগেই ফেলে দেওয়া হয়েছে। এমন প্রিজার্ভেটিভ দেওয়া আছে যে একমাস হয়ে গেল কোনো বিকৃত বা পচাগলা সেরকম হয়নি। অর্ধেক অঙ্গ ফেলা হয়ে গেছে এখন অর্ধেক মুন্ডু একটা হাত বুকের খাঁচা কোমরের অর্ধেক ও দুটো পা বাকি। জ্যান্ত থাকতেই এর সিঁথির সিঁদুর বরাবর গলা অব্দি চপার দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছিল উল্লাস। ও ছিল তার চতুর্থ নম্বর বলি। মারতে তো হতই ওকে, কিন্তু রাগটা ওই সিঁদুরে। খুব সিঁদুর পরার শখ হয়েছিল মেয়েটার। উল্লাস ঠিক করল আজ এর এই পুস্ট জাঙ্ঘ সমেত পা পাঁচ টুকরো করতে হবে। তাড়াতড়ি এই বডি ডিসপোজ করা দরকার। পাঁচ নম্বর অপেক্ষায় আছে। তারপরই তো পরিবার সমাজ সমেত স্বর্গলাভ করব। আহ। সুখের কল্পনায় উল্লাসের চোখে জল এসে গেল।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register