Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

ক্যাফে গল্পে সন্দীপ গাঙ্গুলী

maro news
ক্যাফে গল্পে সন্দীপ গাঙ্গুলী

পৌষের স্বীকৃতি

নীরবতার হাহাকারে নিরাপত্তার ঝাড়বাতি গুলো একে একে মিলিয়ে গেল কুয়াশায় ঘেরা বাগিচায়।সুখপাখির ডানা আটকে রইল বিশাল ব্যালকনির ইজিচেয়ারে, মধুজার দুচোখের দৃষ্টিতে।চশমার ঝাপসা কাঁচ কয়েকবার মুছলো শাড়ির আঁচলে,যদি দেখতে পায় উত্তর কলকাতার এককামরা ভাড়া বাড়ির উষ্ণতার পদচারণ। কফির মগের তপ্ত স্পর্শে মধুজা খুঁজে পেতে চাইল সুজয়ের আস্তিনের নৈকট্য। হারিয়ে যাওয়া মেয়েবেলার মত চিঠি লিখল বাদামের খোসা ওড়ানো বিকেলকে মনে মনে। গুনগুনিয়ে উঠল" আমি তোমার সাথে একলা হতে চাই...."। প্রথম দিকের তাদের সাক্ষাতের মুহূর্তগুলোর কোলাজ মধুজাকে ঘিরে ফেলল, লাজুক চোখে পিছনে তাকিয়ে শুনতে চাইল সিগারেটের ধোঁয়া মেশানো সুজয়ের সংলাপ। তখন মাত্র বছর দুই হয়েছে তাদের আলাপের , এমন এক শীত সন্ধ্যায় সুজয় মধুজাকে বলেছিল " আজ থেকে তুমি আমার বাড়ি থাকবে, তোমার নতুন পরিচয়ে, ওটাই হবে আমাদের ভালবাসার আশ্রয়।" তার তিনদিনের মধ্যে মধুজা বাবার ঠিকানা ছেড়ে সুজয়ের হাত ধরে চলে এসেছিল উত্তরের এক কামরার নীড়ে।প্রায় বছর দশেক হল মধুজার ও বাড়ি ছাড়ার, হেঁসে ফেলল নিজের ফেলে আসা বাইশ বছরের অবয়বের সামনে... সুজয় নলেনগুরের পায়েস খুব ভালবাসত, প্রথম প্রথম প্রায়ই বানাত সুজয়ের জন্য, কয়েক বছর পর অবশ্য মধুজা পায়েস রান্না ছেড়ে দিল, সুজয়ের ব্লাডসুগার দেখা যাওয়ায়।নলেন গুড়ের গন্ধে আজ আবার মধুজা ভরিয়ে তুলতে চায় সুজয়ের রবিবারের প্রাতরাশের সুখবাহার, কিন্তু সুজয় এখন হারিয়ে গেছে কাজের অরণ্যে প্রাচুর্যের সংক্রমণে। বালিগঞ্জের দুহাজার বর্গফুটের বিশাল আপার্টমেন্টে মধুজা ফিরে পেতে চায় উত্তরের এক কামরার সোঁদা গন্ধ যেখানে অপেক্ষা করে আছে সুজয়ের ওমের সুখবিলাস। এমনই এক নিবিষ্ট সন্ধ্যায় উত্তরের মধুজা সুজয়ের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বলেছিল " যেদিন সাউথ কলকাতার আমাদের বাড়ির বাগান কুয়াশার চাদরে ঢাকবে, সেদিন জোনাকির ভিড়ে আমায় কাছে পাবে।" বাগানের বিদেশী গাছগুলো এখন প্রায়ই কুয়াশায় আদ্র হয় , একাকিত্বে মধুজার দুচোখও সিক্ত হয় ,কিন্তু সুজয়ের রোদ্দুরে মধুজার শীতসকাল আর আলোকিত হয় না।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register