Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পে শর্মিষ্ঠা সেন

maro news
গল্পে শর্মিষ্ঠা সেন

সুধারাণীর সম্পদ

সুধারাণীর দমকে দমকে কান্না উঠছে অথচ ছেলে বউ, নাতি নাতবউ এবং ঘর ভরা পুতির ভীড়ে শান্তিতে একফোঁটা চোখের জল ফেলার জায়গাটুকু নেই ৷ বছর বিউনি সুধারাণীর পাঁচটি ছেলে তিনটি মেয়ে ৷ মেয়েগুলির কাছেপিঠেই বিয়ে দিয়েছেন ৷ পাঁচ ছেলেই বিবাহিত তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে বিশাল একান্নবর্তী পরিবার ৷ নাতি পুতির সবার নাম এখন আর মনে করতে পারেন না ৷ কোনটি কার ঘরের তাও খেয়াল থাকে না ৷ তবুও এতকাল সুখ ছিল ,  মানুষের ওমে থাকার ভাগ্য সকলের হয়না ৷অথচ আজ হাতের লাঠিটি জোগাড় করে সুধারাণী কাঁপতে কাঁপতে আড়াল খোঁজেন৷
গতকাল ছোটছেলে নদীরাম সপরিবার অন্যত্র পাড়ি দিয়েছে ৷ পরিবার বলতে নদীরামের বউ জোছনা আর ছেলে৷ জোছনাকে এককালে কোলেপিঠে করে বড় করেছিলেন সুধারাণী ৷ ভারী ন্যাওটা ছিল পড়শি  নবীন সামন্তের মেয়েটি ৷ নদীরামের সাথে বিয়ে দিয়ে  শান্তি পেয়েছিলেন ,  হাতজোড় করে ভগবান আর নিজের স্বামীর মুখখানা স্মরণ করেছিলেন ৷ সেই সুখ কপালে সইল না, নদীরাম নিঃশব্দে বউ ছেলে নিয়ে সংসার থেকে আলাদা হয়ে চলে গেল ৷
পুকুর পাড়ে খড়ের পালা , তারই নীচে তিনমাথা এক করে বসে সুধারাণী আকাশ পাতাল ভাবছিলেন ৷ নাতবউ খুঁজে খুঁজে ঠাকুমা শাশুড়ি কে পেয়ে ডাকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়, ঠাকুমার চোখের জল আর বিলাপ শুনে৷ "ঠাকুমা, কান্দেন ক্যান ? ছোটকাকা চইলে আসবেন,নিজেগো ঘর বাড়ি, জমি জিরেত ছাইড়্যা থাকপার পারলে সেনা ! রাগ কইরা গেছেন, আইয়া পড়বেন ৷"
"অ সোনাবউ , তুই অরে চিনস না ! উ আর ফিরব না রে ! অরে যে আমরা অপমান করসি" বলে সুধারাণী ডুকুরে উঠলেন৷ নদীরাম তার বেশী বয়সের সন্তান,নদীর  ছমাস বয়সে স্বামী মারা যাবার পর উনি নদীকে অনেক বেশী আদরে বড় করেছেন ৷ নদীর প্রতি বড় মায়া !
"ঠাকুমা, ভিতর বাড়ী চলেন, বাবায় খুঁজে আপনারে" নাত বউ আলগোছে বলল ৷ কালথেকে সুধারাণী দানা পানি মুখে দেন নি, কেবল এঘর ওঘর করেছেন৷
বড় ছেলের নাম শুনে সুধারাণীর শরীরে আবার কাঁপন ধরে ৷ তাঁর চোখের সামনে ছোট বউ জোছনার গায়ে হাত তুলেছিল বড় ছেলে ! তিনি ছুটে গিয়ে বন্ধ করতে পারেন নি এমন অন্যায় কে ! মুখরা জোছনা বোবা চোখে শাশুড়ির দিকে চেয়েছিল ! সুধারাণী পারেন নি বড় ছেলেকে শাসন করতে ৷ এমন ঘটনাও তো এযাবৎ ঘটেনি ৷
সুধারাণী হাহাকার করে ওঠেন , " আমি যে কী হারাইলাম সোনাবউ , কইবার পারিনা ! কী সম্পদ খোয়াইলাম রে ! শরীলডা নড়লো না আমার , বউডা খাড়াইয়া মাইর খাইলো ! আমি আর কুথ্থাও যামুনা বউ ৷"
নাতবউ কোনও কথা বলেনা ৷ চুপ করে সুধারাণীর পাশে বসে লাঠি সরিয়ে রাখে ৷ একহাতের বেড়ে ঠাকুমাশাশুড়ির ছোট্ট শরীরটা ধরে ফিসফিস করে কথা বলে আর চোখ মোছায় ৷ পুকুরের জলে ওদের ছায়া একাকার হয়ে কাঁপতে থাকে ৷
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register