Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে রক্তিম ভট্টাচার্য

maro news
অণুগল্পে রক্তিম ভট্টাচার্য

অচেনা সকাল

আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখটা ছলছল করে উঠল সকালের। হালকা ঘন মেঘ, নরম শিরশিরে হাওয়া, নারকেলগাছগুলোর পাতা ঝাপটানো দেখে মনে হচ্ছে যেন ভ্যান গঘ তাঁর উন্মাদ ক্যানভাসে তুলি ছড়াচ্ছেন। এই দিনগুলোয় ভারী মজা হতো, সবাই মিলে ম্যালকম সাহেবের পোড়ো বাংলোর পেছনের মাঠে সাতজনের টিম করে ফুটবল খেলা হতো। নীলেশ, পাখি, আরমান, সুজয়, দোলন, সাজ্জাদ, ঝিলিক সবাই আসত। সকালও যেত তার বাবার সাইকেলটা নিয়ে; পুরো পা পেত না, হাফ প্যাডেল করে যেত। কখনও বা তন্ময় যাবার সময় তাকে ডেকে ক্যারিয়ারে চাপিয়ে নিত। ঘন্টাদুয়েক বল নিয়ে কাদা মাখামাখি করে, অবিশ্বাস্য সব গোলপার্থক্যে হারজিত ঠিক করে, হুল্লোড় করতে করতে বাড়ি আসত। সকাল গোলে খেলত; ওর মনে আছে, একবার ও পঁচিশটা গোল খেয়ে রেকর্ড করেছিল! তারপর হাউ হাউ করে সে কী সাংঘাতিক কান্না! ভাগ্যিস মণির দাদু তখনই এসেছিলেন মণিকে ডাকতে; তিনিই তো সকালকে অনেক আদর টাদর করে লজেন্স দিয়ে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ ঘোষণা করলেন, নয়তো আরেকটু হলেই মাঠে ওয়াটারপোলো খেলা যেত ওর কান্নার চোটে। সেই মণির দাদুর কথা মনে করে আবার চোখটা ছলছলিয়ে উঠল সকালের; তিনিও পরশু খুব কাঁদছিলেন। আচ্ছা, বড়রাও কাঁদে? সে যখন কাঁদছিল দাদু কত্তো আদর করেছিল; কই, দাদু যখন কাঁদছিল ও তো দাদুকে জড়িয়ে ধরেনি! এ তো ভারী অন্যায়! বন্ধুগুলোও ভারী বাজে, সে এতদিন ধরে যাচ্ছে না খেলতে, কেউ ডাকতে আসেনি আর। খালি মাঝে মাঝে কাকু কাকিমা আসছে আর ওর দিকে কেমন একটা তেষট্টির মতো মুখ করে তাকাচ্ছে। নাহয় একটা ছবি এখন সে; ঘুড়িটা ধরতে গিয়ে চারতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল টাল সামলাতে না পেরে! তাতে হয়েছেটা কী? সে কি খেলতে পারবে না নাকি? কই, পায়ে তো কোনো কষ্ট নেই আর। প্রথমে একটু লাগছিল, তারপরই তো সব মিলিয়ে গেল, আর কোথাওই ব্যাথা করছিল না। আসলে সেদিনই পাঁচ বছরের ফুটফুটে সকাল রাত চিনে নিয়েছিল। চিনেছিল তারাগুলো, হাত দিয়ে ছুঁয়েছিল তাদের, যাদের দিকে আগে শুধুই তাকিয়ে থাকত হাঁ করে। এইজন্যই বোধহয় সবার হিংসে হচ্ছে! ঠোঁট ফুলিয়ে একটু কেঁদেই ফেলল অভিমানী সকাল। আর তখনই দেখল, বাইরেও আকাশটা কালো করে এসে সকালটাকে কেমন অচেনা করে দিয়েছে...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register