Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পে দিবাকর মণ্ডল

maro news
গল্পে দিবাকর মণ্ডল

ক্ষুধা

গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড। এদিকটায় সারি সারি খাবারের দোকান। পুস্তক বিপনী ও দু'একটা।অবশ্য সব দোকানই ফুটপাতের। ভুনু নিবিষ্ট মনে একটা বইয়ের উপর দৃষ্টি নিমগ্ন রাখে।  বইয়ের সামনের মলাটের ছবিটা বড় দৃষ্টিকটু ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মহিলার ছবি। যৌবনবতী। উপরের কাচুলিটা বিচ্ছিরিভাবে বুক থেকে গেছে খসে।তার উপর ঐ রকম ঢাগর চোখের চাউনি ! নজর ফেরাতে পারে না ভুনু। আঠারো বছর বয়সটা বড় বেআক্কেলে। সাহস হয় না দাঁড়াতে। অথচ কি দুর্নিবার আকর্ষণ ছবিটার। কেউ পাছে দেখে ফেলে! অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরায় ভুনু। অথচ কি যেন একটা আবেশ পেয়ে বসেছে ভুনুর। শরীরে একটা আলাদা শিহরণ--আলাদা মাদকতা খেলে যায় ভুনুর।এ এক অদ্ভুত ক্ষুধা যেন পেয়ে বসে ভুনুকে। ইতস্তত করে সে।
বইদোকানীর নজর এড়ায় না ব‍্যাপারটায়।কাঁচা পাকা দাঁড়ি।ঈষৎ ময়লা জামাকাপড়। সংসারের সমস্ত ক্ষুধা আর দৈনতা যেন বিরাজ করছে তার দেহমন জুড়ে। আজকাল মানুষ বড়ই বই বিমুখ । মন্দা বাজার। বই দোকানী যেন হাতে চাঁদ পায়। সে ইশারায় সামনে আসতে বলে ভুনুকে।আর এক নিশ্বাসে ফিসফিস করে বলে: চাই নাকি খোকা, দু' এক পিস। সব রকমই পাবে। গল্প তো গল্প, ছবি তো ছবি। ভাড়ায় ও নিতে পার। একশো টাকা অগ্রিম জমা, সপ্তাহান্তে দশ টাকা আর যখন যেমন নিয়ে যেও।
ভয় কেটে যায় ভুনুর। ভুনু ফস্ করে বলে ওঠে:  আর নগদ নারায়ণে।
--------নগদে ও নিতে পার। তা, কেমন দামের নেবে? দোকানের একপাশে নিয়ে আসে ভুনুকে দোকানী। তারপর একটা কাগজের ভাঙাচোরা বাক্সোর ভিতর সচিত্র ছবিওলা একটা বই অদ্ভুত ভাবে তেরছা করে ফর্ ফর্ করে পাতা ওলটাতে থাকে দোকান ওলা। বলে: বিদেশী মাল। খাঁটি জার্মান মডেল। ফিপটি রুপিয়া।
ভুনু উপলব্ধি করে , সত্যি সত্যি এ পৃথিবী আজব এক ক্ষুধার রাজ‍্য --যে রাজ‍্যে বইওয়ালা যেমন এক ক্ষুধার্ত পথিক , তেমনি তার ও মনে জমে আছে অন্তহীন ক্ষুধা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register