Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অনুবাদে সোমনাথ রায়

maro news
অনুবাদে সোমনাথ রায়

ব্রোঞ্জ মৌমাছিরা

Las Abejas de Bronce: The Bronze Bees
লাতিন আমেরিকার (আর্‌হেন্‌তিনা) গল্প
মারকো বেনেভি (Marco Denevi)
ইংরাজি অনুবাদ – কেনি বীচমাউন্ট   বাংলা অনুবাদ – সোমনাথ রায়
সৃষ্টির আদিকাল থেকে শেয়াল মধু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। এই পেশাটা বংশ পরম্পরায় ধরে চলে এলেও পৈতৃক উত্তরাধিকার সূত্রেও সে এটা লাভ করেছিল। ফলে একদিকে সে যেমন ভাবে মৌমাছিদের সামলাতে পারত (কারণ মৌমাছিরা আগুনখেগো পতঙ্গ – যেমন রাগী তেমনি কামড়াকুটে) তেমনি তাদেরকে দিয়ে সবচেয়ে বেশী মধু উৎপাদন করাতে পারঙ্গম ছিল - সেটা আর কারুর পক্ষে সম্ভব ছিল না। অন্যদিকে শেয়াল সবথেকে ভাল বুঝত ভালু-কে, যার মধুর মোহ সবার চাইতে বেশী - তার সবথেকে শাঁসালো খদ্দের।
ভালুর সঙ্গে লেনদেন করা খুব সোজা কাজ নয়। ভালু বেশ ভালই বদরাগী, একটু জংলী আর শরীরে দয়ামায়াও কম। কিন্তু বাইরে বাইরে সে যদি তার খোরাক পেয়ে যায় তাহলে তার রুক্ষ ব্যাভার থেকে সে সংযত থাকে, যে ব্যাভার সবাই সহ্য করতেও পারে না।
আরে এমনকি আমাদের শেয়ালকেও, ভালুর সঙ্গে হাজারবার লেনদেন করার অভ্যাস থাকলেও, এনিয়ে বেশ কয়েকবার মুখ তেঁতো করা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। যেমন একবার, (জানি না কী তুচ্ছ কারণে এটা ঘটেছিল) মধু ওজন করার দাঁড়িপাল্লাটা ভালু  তার বড় ধারালো বাঁকানো নখ দিয়ে একেবারে নষ্ট করে দেয়। শেয়াল চোখের পলকও ফেলেনি, বারেকের জন্যও তার মুখের হাসি মোছেনি (তার বাঘুমামা তাচ্ছিল্য, ঘেন্না আর ব্যঙ্গ করে বলে যে কবরে যাওয়ার সময়েও ওর মুখের হাসি মিলোবে না)।
শেয়াল ভালুকে বলল যে আইনানুসারে ওকে কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ভালু হাসতে হাসতে বলল – “অবশ্যই দেব। তুমি শুধু অপেক্ষা কর। তোমার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আমি ছুটে এসে আমার ঘাড়টাই ভেঙ্গে ফেলব”।
সে হো হো করে হেসে উঠে থাবা দিয়ে নিজের জাঙে থাপ্পড় কসাল।
“হ্যাঁ”, খুব ঠান্ডা গলায় শেয়াল বলল, “আমি তোমাকে চটপট সেরে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি কেননা মৌমাছিগুলো অধৈর্য হয়ে উঠছে”।
“দেখুন প্রভু!” খুব হিসেব কষে সে একটা নাটকীয় ভঙ্গী করে মৌচাকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করল। ভালুর চোখ সেদিকে পড়তেই তার হাসি তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে গেল, কেননা সে দেখল হাজারে হাজারে মৌমাছি মুখ চোখ রাগে লাল করে, প্রখর ভ্রুকুটি করে আর শরীরগুলো শক্ত করে আক্রমণ শানাবার জন্য তৈরি হয়ে তার আপাদমস্তক মাপছে।
শেয়াল খুব মিষ্টি করে বলল – “ওরা আমার ইশারার জন্য অপেক্ষা করে না। তুমি জানো, ওরা অচ্ছেদ্দা একদম পছন্দ করে না”।
ভালুকের বিশাল চেহারা আর ক্ষমতা সত্ত্বেও সাহসের দিক থেকে সে ছিল একটা ফাঁকা কলসি – তাই সে ভয়ে ফ্যাকাসে মেরে গেল।
ভালু কলকল করে বলে উঠল – “আমি ওজন দাঁড়িটা সারিয়ে দেব। কিন্তু দয়া করে ওদের বল আমার দিকে ওইভাবে না তাকাতে; ওদেরকে মৌচাকে ফিরে যেতে আদেশ কর”।
শেয়াল আস্তে করে মৌমাছিদের বলল – “মিষ্টি সোনারা শোন, শ্রীল শ্রীযুক্ত ভল্লুক আমাদেরকে নতুন দাঁড়িপাল্লা এনে দেবেন কথা দিয়েছেন”।
মৌমাছিরা একযোগে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করে উঠল। খুব শ্রদ্ধাপূর্ণ মুখ করে শেয়াল তাদের কথা শুনল। শুনতে শুনতেই সে রাণী মৌমাছির কথার সঙ্গে একমত হয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগল – “হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি আপনার সঙ্গে একমত। আহ্‌! সে তো বোঝাই যাচ্ছে। আপনার কথাকে সন্দেহ করতে পারে এমন কার ক্ষমতা? আমি ওকে বলব”।
কৌতূহলের চোটে ভালুকটার প্রাণ প্রায় ফাটো ফাটো। “শেয়াল, ওরা কী বলছে? তুমি আমাকে টেনশনে ফেলছ”। ওর দিকে শেয়াল খানিকক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল। “ওরা বলল যে দাঁড়িপাল্লাটা একদম নতুন হতে হবে”। “হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই ওটা নতুন হবে। আচ্ছা, কী ধরণের ফিনিশ চাও?” “নিকেল করা”। “রাজী, নিকেল প্লেটেড”। “বিদেশী মেক”। “আচ্ছা, তাই হবে।” “সুইট্‌জারল্যান্ডের হলে ভাল হয়।” “ওহ্‌ না, ওটা বড্ড বাড়াবাড়ি। তুমি আমাকে শোষণ করছ!” “শ্রীযুক্ত ভল্লুক মহাশয়, কথাটা আর একবার আর একটু জোরে বলবেন? ওরা শুনতে পায়নি।”
“আমি বললাম যে ওটাও হয়ে যাবে!...ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি ওদের ভালবাসার চেষ্টা করব। কিন্তু সবার আগে ওদেরকে মৌচাকে ফিরে যেতে বল। অত অত মৌমাছির মাথা আমার দিকে ঘুরে আছে, আমার খুব নার্ভাস লাগছে”।
শেয়াল জাদুকরদের মত অদ্ভুত ভঙ্গী করল আর মৌমাছিরা ভালুকের দিকে শেষবারের মত কড়া চোখে তাকিয়ে চাকের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেল। ভালুকও মুষড়ানো মনে গোমড়া মুখে সেখান থেকে চলে গেল, মনের মধ্যে একটা অস্পষ্ট ধারণা নিয়ে যে মৌমাছিরা ওকে ঠকিয়েছে। কিন্তু পরের দিন সে আবার হাজির হল হাতে একটা ঝাঁ চকচকে নিকেল করা ওজন দাড়ি নিয়ে, যার ওপরে ছোট্ট একটা ব্রোঞ্জ প্লেটে লেখা – “মেড ইন সুইটজারল্যান্ড”।
যেমন আমি বলেছিলাম – শেয়াল জানত কীভাবে মৌমাছিদের আর ভালুককে চালনা করতে হয়; কিন্তু সব শেয়ালের বড় শেয়াল যে কিভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তা কেউ জানত?
যতদিন না তারা কৃত্রিম মৌমাছি তৈরি করল।
হ্যাঁ, ব্রোঞ্জের তৈরি মৌমাছি, ইলেক্‌ট্রনিক্যালি নিয়ন্ত্রিত, রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা পরিচালিত (যেমন সচিত্র ব্রোশারগুলোতে লেখা থাকে); তারা জ্যান্ত মৌমাছির সব কাজই করতে পারে কিন্তু তাদের থেকে অনেক বেশি সুবিধা সমেত। এগুলো ক্লান্ত হয় না, হারিয়ে যায় না, মাকড়সার জালে আটকে যাবে না আর পাখিরাও খেতে পারবে না; তারা প্রাকৃতিক মৌমাছির মত মধু খায় না (যে মধু হিসেবের খাতায় আর শেয়ালের অত্মরাত্মায় লাল রঙের বড় সংখ্যায় উঠে থাকে); তাদের মধ্যে কোন রাণী নেই, কোন পুং মৌমাছি নেই। তারা তাদের রাজত্বে সবাই সমান, নিরীহ, অনুগত, সহজবশ্য ও বাধ্য, শক্তপোক্ত এবং সক্রিয়, আর তাদের অফুরন্ত জীবন। সবদিক থেকেই তার কাছে আসল মৌমাছিদের থেকে এই নকল মৌমাছিরা অনেক গুণের অধিকারী।
শেয়াল তৎক্ষণাৎ ব্যবসায়ের সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে আর তিলমাত্র দেরি করল না। সে সব জ্যান্ত মৌমাছিদের মেরে ফেলল, মোমের চাকগুলো সব ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিল আর তার সঞ্চিত অর্থ থেকে একহাজার ব্রোঞ্জের মৌমাছি আর ব্রোঞ্জের চাক কিনল, কন্ট্রোল বোর্ডের ইনস্টলেশন অর্ডার দিল, সেটা কীভাবে চালাবে শিখে নিল আর একদিন সকালে জীবজন্তুরা হাঁ করে দেখল কীভাবে ব্রোঞ্জের মৌমাছিরা সেখানের আকাশে প্রথমবার উড়ল।
শেয়ালের কোন ভুল হয়নি। তার চেয়ার থেকে না উঠেই সে একটা লিভার নাড়াল আর এক ঝাঁক মৌমাছি উত্তরদিকে তীব্রবেগে উড়ে গেল; আর একটা লিভার নাড়াতেই আরও এক ঝাঁক বন্দুকের নল থেকে ছিটকে বেরনোর মত দক্ষিণ দিকে উড়ে গেল; আবার অন্য আর একটা লিভারে অন্য এক ঝাঁক পূর্ব দিকে উড়ে গেল। খানিকক্ষণের মধ্যেই ব্রোঞ্জের মৌমাছিরা অভূতপূর্ব গতিতে উড়তে লাগল – একটা চাপা  মৌমাছির গুঞ্জনের মত শব্দ শোনা গেল যেটা আবার আসল মৌমাছির গুঞ্জনের প্রতিধ্বনি মনে হ’ল। তারা তীরের বেগে একটা জলপ্রপাতের মত ফুলের ওপরে বসল, মকরন্দ দ্রুত শুষে নিল, ফিরতি উড়ান ধরল, চাকে ফিরে গেল, পকেটের মধু জমা করল – তারপর দ্রুত কিছু জিনিষে মোচড় দিল আর কয়েকটা সংক্ষিপ্ত তীক্ষ্ণ আওয়াজ করল – ট্রিক, ট্র্যাক, ক্রাক আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তারা মধু তৈরি করে ফেলল – খাঁটি, স্বচ্ছ, সোনালী, কলুষতাহীন, অপচনশীল মধু – তারপর আবার উড়ান শুরু করল। চিত্তবিক্ষেপহীন, ক্লান্তিহীন, শখহীন, ক্রোধহীন –  সারাদিনে ২৪ ঘন্টা  মানে ২৪x৭। শেয়াল তো আনন্দে আত্মহারা!
ভালুক প্রথমবার নতুন মধু চেখেই চোখগুলো গুল্লি গুল্লি করল, জিভে চকাস্‌ শব্দ করল কিন্তু কোন মন্তব্য করতে সাহস না পেয়ে বৌকে জিগ্যেস করল –
“একটু চেখে দেখ তো, কেমন লাগছে?”
“ঠিক বুঝতে পারছি না, একটা কীরকম মেটালিক টেস্ট পাচ্ছি!”
“ঠিক বলেছ, আমারও তাই মনে হল”।
কিন্তু ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে প্রতিবাদ করে উঠলঃ
“বাপি! মামি! কী যা তা বলছ! এই নতুন মধুটার টেস্ট প্রমাণ করে যে এটা অনেক ভাল, সবদিক থেকে ভাল। অন্য মধু তোমাদের ভাল লাগে কী করে, কয়েকটা নোংরা পোকা যেটা বানায়? অথচ এটা দেখ কত পরিষ্কার, কত স্বাস্থ্যসম্মত, আগের থেকে কতটা আধুনিক! এক কথায় বেটার মধু।”
ভালু আর ভালুনী ছেলেমেয়েদের কথা টালবার মত কোন যুক্তি খুঁজে না পেয়ে চুপ করে রইল। কিন্তু তারা যখন একাকী হ’ল তারা জোর দিয়ে বলল,
– যাই বলো আর তাই বলো আমার কিন্তু এখনও ঐ পুরনো ধরনের মধুই পছন্দ, কারণ এতে একটা সুন্দর গন্ধ ছিল ... – ঠিক বলেছ, আম্মো তাই বলি। আমরা মানছি যে নতুন মধুটা নিঃসন্দেহে প্যাস্‌চারাইজড্‌ হয়ে আসছে কিন্তু ঐ গন্ধটা ...”
আহ্‌, সেই গন্ধ!
তারা একথা কাউকে বলতে সাহস পেল না, কারণ আসলে তারা ঐ কোম্পানিতে চাকরি করে যেখানে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য, ব্রোঞ্জের মৌমাছিরা অপারেট করছে।
ভালুনী গদগদ হয়ে বলল – “যদি সত্যিকারের কেউ ভেবে দেখে তাহলেই বুঝবে ব্রোঞ্জ মৌমাছিদের শুধু আমাদের জন্যই আবিষ্কার করা হয়েছে”। ভালু কোন মন্তব্য করল না, দেখে মনে হবে সে এব্যাপারে একেবারেই উদাসীন, কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্থলে সে তার বৌয়ের মতনই গর্বিত।
তাই মেশিন মৌমাছির চুয়ান মধু কেনা আর পান করা জগতের কেউ বন্ধ করতে চাইল না বিশেষ করে যখন তারা বুঝতে পারল যে অন্য সব প্রাণীরাও শেয়ালের বিপণীতে মধু কিনতে ভিড় করছে; তারা সবাই যে মধুটা পছন্দ করছে বলে তা কিন্তু নয়, আসলে সব ঐ ব্রোঞ্জের মৌমাছিদের জন্য আর “হাল ফ্যাশনে ফ্যাশনদুরস্ত আছি” এই বলে জাঁক করার জন্য।
আর এই সব মিলিয়ে শেয়ালের লাভের অঙ্ক বাড়তে লাগল বনের দাবানলের মত হু হু করে। তাকে সাহায্য করার জন্য একটা অ্যাসিস্টান্ট রাখতে বাধ্য হল সে আর অনেক চিন্তাভাবনা করে সে একটা দাঁড়কাককে বেছে নিল কারণ দাঁড়কাক আর মধু-র সম্পর্ক একেবারেই মধুর নয়। খুব শীঘ্রই এক হাজার মৌমাছি পাঁচ হাজার হ’ল; আর পাঁচ হাজার, দশ হাজার হ’ল। বনের সব পশুরা শেয়ালকে অবিশ্বাস্য ঐশ্বর্যের  অধিকারী বলে ভাবতে শুরু করল। শেয়াল মহানন্দে মুচকি মুচকি ফিচেল হাসি হাসতে হাসতে তার থাবাদুটো ঘষতে থাকল।
এরমধ্যেই মৌমাছির ঝাঁক আসা যাওয়া করতে লাগল। বনের পশুরা তাদের মাথার ওপর দিয়ে স্বর্ণবিন্দুগুলোর দ্রুত গতিতে পেরিয়ে যাওয়া দেখতে বা চোখে অনুসরণ করতে কোনটাই পারত না। তাদেরকে প্রশংসা করল না কেবলমাত্র অশিক্ষিত মূর্খ মাকড়সারা – তারা গলা ফাটিয়ে অভিযোগ জানাতে থাকল যে ব্রোঞ্জের মৌমাছিরা তাদের জালের মধ্যে দিয়ে সটান পেরিয়ে গিয়ে সেগুলোর ফর্দাফাই করে দেয়।
এসব হচ্ছে কী? পৃথিবীর ধ্বংস? – যারা প্রথমবারের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হ’ল তারা গলা চিরে চীৎকার করল, কিন্তু যখন কেউ একজন তাদেরকে বোঝাল আসল ব্যাপারটা কী, তখন তারা শেয়ালকে শাসালো যে তারা তার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করবে।
ভালুনী বলল – “কী পেজোমি! কী বেকুবি!”
এটা আলো আর অন্ধকার, ভালো এবং মন্দ, সভ্যতা এবং বর্বরতার মধ্যে সেই চিরন্তন বিবাদ।
পাখিরাও তাজ্জব বনে গেল কারণ তাদের মধ্যে একজন যখন প্রথম ব্রোঞ্জের মৌমাছি দেখল, ঠোঁট ফাঁক করে সেটাকে গিলে ফেলল। হায়রে দুর্ভাগা!
ঐ ধাতব মৌমাছিটা পাখিটার স্বরতন্ত্রী ছিঁড়ে শরীরের মধ্যে ঢুকে গিয়ে সেখানে একটা টিউমারের সৃষ্টি করল যার ফলে কিছুদিনের মধ্যেই পাখিটা নিষ্ঠুরতম কষ্টের মধ্যে দিয়ে মারা গেল – কোন সান্ত্বনা ছাড়াই – কারণ গান গেয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার বা শোক জানাবার জন্য ওখানে তখন কোন পাখিই ছিল না – কারণ বাকী পাখিরা চরম শিক্ষা পেয়ে সবাই ফুড়ুৎ হয়ে গেছে।
ধনসম্পদের বাড়বাড়ন্তে শেয়ালের আত্মহারা পর্বটা কিছুদিন চলল, তারপরই কিছু সমস্যার উদয় হ’ল। প্রথমে একটা ছোট্ট মেঘ, তার পিছু পিছু আর একটা – যতক্ষণ না পর্যন্ত গোটা আকাশটা প্রবল দুর্যোগের অশনি সংকেত নিয়ে কালো মেঘে ছেয়ে গেল।
রাজহংসীর গোলাপ ফুল নিয়ে দুর্ঘটনা দিয়ে বিপর্যয়ের মিছিল শুরু হ’ল। একদিন বিকেলে একটা মৌচাক খালি করার সময় শেয়াল আবিষ্কার করল যে সোনালী মধুর মধ্যে কিছু ধূসর কণা ভাসছে – সেগুলো অস্বচ্ছ আর বিস্বাদ। নখের ডগাতে একটু মধু নিয়ে শেয়াল চেখে দেখলো যে একটা বিদঘুটে গন্ধ আর তিতকুটে স্বাদ। দূষিত সমস্ত মধুটা সে ফেলে দিতে বাধ্য হ’ল। রাজহাঁসের গোলাপ ফুলগুলো ঝড়টাকে হারিকেনে পরিণত করেছে।
রাজহংসী ক্যাঁক ক্যাঁক করে বলল, - “শেয়াল, তোমার কী মনে পড়ে সেই প্ল্যাস্টিকের গোলাপ ফুলগুলোর কথা যেগুলো আমার স্বর্গত স্বামীর স্মৃতিতে বারান্দায় রাখা ছিল? সেগুলোর কথা তোমার মনে আছে? বেশ, দেখ তোমার মৌমাছিরা আমার গোলাপ ফুলগুলোর কি হাল করেছে” – সে হাত তুলে দেখাল, শেয়াল অবস্থাটা দেখল আর খাঁটি ব্যবসাদার হিসেবে উল্টোপাল্টা না বকে সরাসরি জিজ্ঞেস করল –
“কত?”
হাঁসি বলল – কুড়ি পেসো।
  • পনেরো।
  • চব্বিশ।
  • ষোল।
  • আঠাশ।
“তুমি কি পাগল? যদি তুমি মনে কর এটা স্টক মার্কেট...”
“এটা স্টক মার্কেট তা আমি মনে করি না। কিন্তু আমি সুদে আসলে উদ্ধার করব”।
“থাম! থাম! এই নাও তোমার কুড়ি পেসো”।
  • বত্রিশ।
“আচ্ছা বেশ, চুপ কর, আমি তোমার টাকা মিটিয়ে দিচ্ছি”।
হাঁসি যখন টাকা গুনে নিয়ে চলে গেল শেয়াল ক্ষোভে ফেটে পড়ল। সে দোকানের ভেতরে গিয়ে মেঝেতে লাথ কষাল, দেয়ালে ঘুঁষি মারল, দাঁতে দাঁত চিপে চীৎকার করতে লাগল – এই প্রথম, এই প্রথম কেউ আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করল। আর এই বোকা হাঁসিটাকে দেখ – কয়েকটা প্ল্যাস্টিকের গোলাপ – যার দাম চল্লিশ পেসোর বেশী হবে না - তার জন্য বত্রিশ পেসো খিঁচে নিল। আর এসব কিছু হ’ল ব্রোঞ্জ মৌমাছিগুলোর জন্য – চুলোয় যাক। সহজাত প্রবৃত্তির অভাবে ওরা ভুল করে। ওরা নকল ফুলের সঙ্গে আসল ফুলকে গুলিয়ে ফেলে। অন্য মৌমাছিরা কক্ষনো এইধরণের ভুল করবে না। কিন্তু অন্যদের কথা আর কে ভাববে? আসলে এ জীবনে সব কিছুই কি আর নিখুঁত হয়?
আর একদিন, একটা ব্রোঞ্জ মৌমাছি একটা লিলি ফুলের ভেতরে ঢুকে ঐ ফুলে মধু খেতে ব্যস্ত একটা হামিংবার্ডের গলাটা কুচ্‌ করে কেটে ফেলল। পাখির রক্তে লিলি ফুলের মধু রাঙা হয়ে গেল কিন্তু যেহেতু এই মৌমাছি বর্ণ-গন্ধ-স্বাদ কিছুই বুঝতে পারে না, শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক স্পন্দনের প্রতিক্রিয়া করে, তাই এটা মধু আর রক্ত মিশিয়ে ফেলল। ফলে মধুর রং হয়ে গেল গোলাপী যা দেখে শেয়াল একেবারে ভেবকে গেল। সৌভাগ্যবশত তার কর্মচারী তার কাঁধ থেকে চিন্তার বোঝ নামিয়ে দিল।
দাঁড়কাক তার নীচু, কর্কশ, আইবুড়ী কণ্ঠস্বরে বলল – বস্‌, যদি আপনার জায়গায় আমি হতাম এটাকে বাচ্চা-স্পেশাল মধু বলে বিক্রি করতাম।
- আর যদি দেখা যায় এটা বিষাক্ত, তাহলে? - অতটা দুর্ভাগ্যজনক হলে বস্‌ আমি এখনও টিঁকে থাকতাম নাকি?
- আহ্‌! তার মানে তুমি এটা খেয়ে দেখেছ? তাহলে তুমি, আমার অধস্তন কর্মচারী, আমার মধু চুরি করছ। কিন্তু তুমি ইন্টারভিউয়ের সময় আমাকে বলেছিলে না যে মধুকে তুমি ‘ঘৃণাসহকারে পরিহার’ কর?
একজন আপনার উপকারার্থে নিজের জীবন বাজি রাখল আর দেখুন আপনি কীভাবে তার প্রতিদান দিলেন – দাঁড়কাক অপমানে বেগুন পোড়ার মত মুখ করে বিড়বিড় করে বলল।
- সারা জীবন ধরে মধু জিনিসটাকে আমি ঘৃণা আর বিতৃষ্ণার সঙ্গে পরিত্যাগ করেছি কিন্তু এই মধুটা বিষাক্ত কিনা পরীক্ষা করবার জন্য চেখেছিলাম। আপনার জন্য আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি। এখন আপনি যদি মনে করেন যে আমি অন্যায় করেছি, তাহলে চীফ, আমাকে বরখাস্ত করুন।
দাঁড়কাকের উপদেশ শোনা ছাড়া শেয়ালের আর কিই বা করার আছে? বাচ্চাদের স্পেশ্যাল গোলাপী মধু বিশাল হিট হ’ল। শেয়াল পুরোটা বিক্রি করে ফেলল, কিন্তু কেউ অভিযোগ জানাল না।
শেয়াল নিশ্চিন্ত বোধ করল। বেচারা, তার মৌমাছিদের যে একই সমস্যা হবে সেটা সে বুঝতেই পারল না। দিন কয়েক পরে শেয়াল লক্ষ করল যে মৌমাছিগুলোর মৌচাকে ফিরে আসতে ক্রমশ বেশি বেশি সময় লাগছে। এক রাত্রে দোকানের দরজা বন্ধ করে সে আর দাঁড়কাক এই নতুন রহস্য নিয়ে গভীর আলোচনায় বসল।
শেয়াল বলল – এদের এত দেরী হচ্ছে কেন? শয়তানগুলো যাচ্ছে কোথায়? কালকে একটা ঝাঁক পাঁচ ঘন্টা সময় নিয়েছে ফিরে আসতে। প্রতিদিনের উৎপাদন কমছে আর ইলেকট্রিসিটির খরচ বাড়ছে। তার ওপর গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতন ঐ গোলাপী মধুটা এখনও আমার গলায় আটকে আছে। প্রতি মুহূর্তে আমার আশঙ্কা হয় – আজকে কী মধু হবে? সবুজ মধু? কালো মধু? নীল মধু? নোনতা মধু?
দাঁড়কাক যুক্তি দিল – গোলাপের মত দুর্ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হয়নি, বস্‌। আর গোলাপী মধুর কথা যদি বলেন, আমার মনে হয় না ওটা নিয়ে আপনার কোন অনুযোগ আছে।
- আমি একমত। কিন্তু এই বিলম্বের রহস্য কী? এর ব্যাখ্যা কী হতে পারে? - কিছুই না। শুধুমাত্র – - শুধুমাত্র কী?
দাঁড়কাক খুব গম্ভীর হয়ে ঠ্যাংগুলো আড়াআড়ি করে বসে, হাতগুলো জড়ো করে মুখ তুলে তাকাল।
কয়েক মুহূর্ত ভেবে কাক বলল – চীফ, মৌমাছিদের পিছু ধাওয়া করে গোয়েন্দাগিরি করা বড় সহজ কাজ নয়। তারা এত দ্রুত ওড়ে যে কারুর পক্ষে বা প্রায় কারুর পক্ষে তাদের অনুসরণ করা অসম্ভব। কিন্তু আমি একজন নভশ্চরকে জানি, উপযুক্ত পারিতোষিক পেলে সে এই ঝুঁকির মোকাবিলা করতে পারবে। আর আমি আপনার দিব্যি করে বলছি যে সত্যটা না জেনে সে ফিরবে না।
- কে সেই বিহগ? - একান্তই আপনার সেবক।
শেয়াল তার অপমানের কথা কাককে বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিল কিন্তু ভাল ভেবে সে প্রস্তাবটা গ্রহণ করতে মনস্থ করল। কারণ হাতগুটিয়ে বসে থেকে ক্রমবর্ধমান এবং অবিরাম ক্ষতি নিয়ে নিরন্তর মগজ খোঁচানোর থেকে যে কোন সমাধানসূত্র স্বাগত।
দাঁড়কাক বহু দেরী করে ফিরল, হাঁপাতে হাঁপাতে, যেন সে চীন থেকে গোটা রাস্তা উড়ে এল। (শেয়াল সন্দেহ করল যে এসবই ভান আর তার কর্মচারী প্রথমদিন থেকেই সত্য ঘটনাটা জানত)। তার মুখের ভাব দেখে খবর খুব একটা ভাল বলে মনে হ’ল না।
“বস্‌”, সে তোতলাতে তোতলাতে বলল, “আমি জানিনা খবরটা কীভাবে দেওয়া উচিৎ, কেননা মৌমাছিরা দেরী করছে, ভবিষ্যতে আরও আরও বিলম্ব হবে, কারণ এদেশে আর কোন ফুল নেই আর তাদেরকে বিদেশে যেতেই হবে”।
“কী বলছ কী, দেশে কোন ফুল নেই, এর মানেটা কী? কী ধরনের বদমাইশি এটা?”
“বস্‌, শুনুন, শুনুন। মনে হচ্ছে মৌমাছিগুলো ফুল থেকে মধু শুষে নেওয়ার পর সেগুলো নুয়ে পড়ছে, দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তারপর মরে যাচ্ছে”।
“আর তারা মরছে কেন?” “মৌমাছিগুলোর ধাতব নল তারা সহ্য করতে পারছে না”। “অসহ্য! শয়তান কোথাকার!” “দাঁড়ান, এখানেই শেষ নয়। মৌমাছিগুলো ফুলগুলোকে গুমখুন করার পর গাছগুলোও মরে যাচ্ছে”। “গুমখুন! ঐ শব্দটা তোমার মুখে আমি যেন দ্বিতীয় বার না শুনি”।
“বেশ, হত্যা বলি তাহলে! মৌমাছিগুলো ফুলগুলোকে হত্যা করার পর গাছে আর ফুল ফোটে না। পরিণাম? সারা দেশে আর ফুল নেই। এবার আপনি কী বলবেন বস্‌?”
শেয়াল কিচ্ছুটি বলল না। কিচ্ছুটি না। সে স্তম্ভিত, হতবাক্‌ হয়ে গেল।
সব চাইতে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হ’ল কাক কিছু মিথ্যে বলেনি। ব্রোঞ্জের মৌমাছিগুলো দেশের সব ফুলগাছগুলোর দফারফা করে দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেতে শুরু করল, প্রথমে কাছাকাছি দেশে, তারপর দূরের দেশে, তারপর আরও দূরবর্তী, তারপর তার থেকেও দূর দূর দেশে, তারপর সারা পৃথিবী ঘুরে তারা মৌচাকে ফিরে আসতে লাগল।
ইতিমধ্যে পক্ষীকুল একটা অদ্ভুত দুঃখবোধে আচ্ছন্ন হয়ে গেল অথচ কেউ জানল না কেন। রহস্যময় কারণে কেউ কেউ আত্মহত্যা করল। পাপিয়া পাখিরা গান গাওয়া বন্ধ করে দিল। চিত্রদোয়েল পাখিদের রং ফ্যাকাশে হয়ে গেল। লোকে বলে নদীগুলো সব শুকিয়ে গেল আর ঝর্ণাগুলোর কলধ্বনি স্তব্ধ হয়ে গেল। এসব সত্যিই ঘটেছিল কিনা আমি জানি না। আমি শুধু এটুকু জানি, যখন ব্রোঞ্জ মৌমাছিরা দেশ থেকে দেশান্তরে যেতে লাগল, তারা সারা পৃথিবীটাকে ওলটপালট করে দিল, গোটা পৃথিবীতে ফুল বলে আর কিছু রইল না, মাঠেঘাটে কোথাও কোন ফুল ফুটত না।
মৌমাছিরা তাদের সফর থেকে ফিরে এল, মৌচাকে ঢুকল, মোচড় দিল, ট্রিক, ট্র্যাক, ক্রাক আওয়াজ করল, কিন্তু শেয়ালের কপালে একফোঁটা নিকৃষ্টতম মানের মধুও পড়ল না। মৌমাছিরা যেমন শূন্যকুম্ভ গিয়েছিল তেমনি ফিরে এল।
শেয়াল মরীয়া হয়ে উঠল।তার ব্যাবসা লাটে উঠেছে। সঞ্চিত মধুভান্ডারের কল্যাণে কিছুদিন চলল কিন্তু সেটুকুও একদিন নিঃশেষ হয়ে গেল। এবার উচিৎ কর্তব্য দাঁড়কাককে বিদায় জানানো আর সব খরিদ্দারকে কাঁদিয়ে বিপণিটা বন্ধ করে দেওয়া।
একজন খদ্দের কিন্তু হাল ছাড়ল না – সেই আদি অকৃত্রিম ভালু। “শেয়াল!” চড়া গলায় বলল -, “আমাকে মধু দাও নাহলে তোমাকে মেরে মাথার ঘিলু বার করে দেব”।
“আরে, আরে অপেক্ষা কর। পর্শুই বিদেশ থেকে খানিকটা মাল আসবে” – শেয়াল কথা দিল। কিন্তু সেই মাল আর কোনদিনই এসে পৌঁছল না।
শেয়াল তাদের আশা পূরণের কয়েকবার চেষ্টা করল। মৌমাছির ঝাঁককে সে বিভিন্ন দিকে পাঠাল। বৃথাই। সে ঠাট্টা করে ট্রিক, ট্র্যাক, ক্রাক আওয়াজ করল কিন্তু মধুর চিহ্ন মাত্র নেই।
অবশেষে, এক রাত্রে শেয়াল সব কেবল কেটে দিল, কন্ট্রোল বোর্ড নষ্ট করে দিল, একটা খন্দে ব্রোঞ্জের মৌমাছিগুলোকে পুঁতে দিল, টাকাগুলো কুড়িয়ে বাড়িয়ে তুলে নিল, তারপর অন্ধকারের আড়ালে অজানা গন্তব্যস্থলের দিকে ভেগে গেল।
বর্ডার পার হবার সময় পেছনে কিছু খুকখুকে হাসি আর কয়েকটা চেনা গলার ডাক শুনতে পেল – “শে-য়াল! শে-য়াল!”
এরা হ’ল সেই মাকড়সারা, যারা চাঁদের আলোয় তাদের প্রাগৈতিহাসিক জাল বুনছে। একটা নোংরা, জঘন্য হাসি মুখে ঝুলিয়ে শেয়াল লম্বা লম্বা পা ফেলে উধাও হয়ে গেল। তখন থেকে তাকে আর কেউ কোনদিন দেখতে পায়নি। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে কেনি বীচমাউন্ট এই গল্পটি ইংরাজীতে অনুবাদ করেছিলেন।
মার্কো দেনেভি-র জন্ম ১২ মে ১৯২২ আরহেন্‌তিনা-র [আর্জেন্টিনা] সাইন্স পেনিয়ায় (Saenz Pena); মৃত্যু ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৮ বুয়েনোসাইরিস-এ [Buenos Aires]। লেখক এবং রাজনৈতিক সংবাদদাতা। তাঁর প্রথম সফল উপন্যাস “Rosaura a las diez”(দশটার সময় গ্রোসাইরা) ক্রাফ্‌ট পুরস্কার পায়। এটি বেস্ট সেলার ছিল, অনেকগুলি ভাষায় অনূদিত ও চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে।
মার্কো দেনেভি বুয়েনোসাইরিস-এ থাকতেন এবং তাঁর উপন্যাস আর ছোট গল্প ওখানেই রচনা করেছিলেন; তার মধ্যে “The Bronze Bees” সবথেকে জনপ্রিয় ছোটগল্প। মানুষের লোভ এবং প্রকৃতির সঙ্গে ছিনিমিনি খেলার ফল কী হতে পারে সেটা নিয়েই ব্যঙ্গাত্মক গল্প, আবার এটি অসাধারণ একটি ফ্যান্টাসির নিদর্শন। লাতিন আমেরিকার গল্পকারদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তিনি অত্যন্ত সাহিত্যানুগ ভাষা ব্যবহার করেন যেগুলির মূল স্প্যানিশ ভাষার স্বকীয় স্বাদ ক্ষুণ্ণ না করে অন্য ভাষায় অনুবাদকর্ম অত্যন্ত দুরূহ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register