Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে কিশোর ঘোষ (পর্ব - ১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে কিশোর ঘোষ (পর্ব - ১)

মুহূর্তের সেলফি

সেগমেন্ট - ১

উল্টো দিক থেকে শুরু করা যাক। ধরুন, জন্মের বদলে মৃত্যুর দিক থেকে হাঁটা শুরু করেছে একটা মানুষ। মানে একদিন তার বুড়ো হাড় জোড়া লাগবে, চশমার কুয়াশা মুছতে মুছতে মাঝবয়স ডিঙোবে লোকটা, তারপর প্রেমিকার ঠোঁট, স্তনে মুখ ঘষতে ঘষতে শিশু হয়ে যাবে পাগলের মতো। যত শিশু হবে তত সামাজের শিকড়বাকড় থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবে সে। তারপর কাঁদবে। খুব। কাঁদতে কাঁদতে মায়ের নাড়ির সঙ্গে বেধে যাবে আত্মা, মানে শরীর। যেহেতু নরম বয়সে শরীর আর আত্মার বিভাজন হয়নি, হয় না। তারপর গর্ভে ফিরবে সে। চোখে সমুদ্র-কান্না। সেখান থেকে স্বর্গের সিঁড়ি ধরে ভ্যানিস! পেছন পড়ে থাকবে মৃত্যু থেকে জন্ম অবধি হেঁটে আসা এক জীবনের কান্না!

লোকটা কবি হলে এই কান্নার নাম কবিতা। অবশ্য মনে রাখা জরুরি যে, সব কান্নাই কিন্তু দুঃখ-ছন্দে লেখা না, আনন্দের অপ্রথাগত কান্নাই আসল। তবে কান্নাই। সেও।

এমন কান্নাকাটির অনেক কারণ আছে। যেমন ধরুন, যদি বলি এই আমি আসলে এক খুনে আসামি। অপরাধের শেষ নেই আমার। বিরল সব অপরাধের সঙ্গে দেখা হয়েছে দিকেদিকে! বহুবার জেল খেটেছি। গত বছর চল্লিশে একশ আটবার ফাঁসি হয়েছে আমার। মরে গিয়ে কিছুদিন বিষাদ-ভূত হয়ে কালো মেঘে মেঘে, স্যাঁতস্যাঁতে আগানেবাগানে, শ্মশাণে কবরে ঘুরেঠুরে ফের একটা গর্ভসুরঙ্গ আবিষ্কার করেই ঝুপ করে সেঁধিয়ে গেছি। মানে ব্যাক করেছি জন্মে, হাত-পা-ওলা জীবনে। এভাবেই চলছে। বিষয় খুব জটিল না। সকলকেই কম-বেশি এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বোঝালেই বুঝবেন। ধারাবাহিক যখন তখন বিস্তারিত জানাব।

এখন বলি, বেশ কিছুদিন আগে এক মারাত্মক অপরাধে দমবন্ধ করা জেল হয়ে গেছিল আমার। সেদিন বোধদয় হল। ভোর-রাতে জেল ভেঙে পালালাম। সোজা কলকাতা স্টেশন। কলকাতা-হলদিবাড়ি ইন্টারসিটি এক্সপেস ধরে ছুট। তারপর বেশ কিছু মুহূর্তের বকাঝকা, আদর-আবদার খেতে খেতে পৌঁছলাম এনজিপি। সেখান থেকে শিলিগুড়ি।

সবাই জানে, শিলিগুড়ির মতো শহর হয় না। সেখানে অসংখ্য মুহূর্তের সেলফি সম্ভব। শিলিগুড়ি হল খাঁটি বহুমাত্রিক গেটওয়ে। স্বর্গে ও নরকে যাওয়ার পথ রয়েছে প্যারালাল। বেছে নিলেই হল।

যেদিন পৌঁছেছি তার পরদিন সকালে চম্পাসারি থেকে প্রধাননগরের দিকে যাওয়ার পথে আমি একটা ঠোঁট দেখলাম। লাল। উড়ছিল। মনে হল মুখটা ভ্যালি অব ফ্ল্যাওয়ার্স। ঠোঁট হল লাল টকটকে গোলাপ। নেশা ধরানো দৃশ্য। দৃশ্যের ভেতরের দৃশ্য আসল শয়তান! কাঁটার কথা মনে রাখতে দেয় না সে! তাছাড়া নেশার ক্লিভেজ রয়েছে পরতে পরতে। সামান্য ট্রেক করার ঝক্কি নিলেই সেই পাহাড়ি নেশার রাস্তায় প্রবেশ অবাধ! আলাপ হতেই পারতো অল্প কুয়াশাচ্ছন্ন কমলালেবু বনের সঙ্গে। দাঁতে কাটতে পারতাম স্বাদ। একশ শতাংশ নিষিদ্ধ স্বাদ। নিষিদ্ধ বলেই তো স্বাদ!

কিন্তু সুভানের সঙ্গে আলাপ হল। সুভানের কাছে ছিল গুলমা। আরও ভালো করে বললে, ওর কাছে ছিল---গুলমার এক প্রজাপতির গোল গোল ওড়া। ফলে মহাজাগতিক কাণ্ড ঘটে গেল! যা আমাকে সামাজিক ভাবে, সভ্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে আরও বেশি পাপিতাপি করে তুলল। এবার সেটাই জানাব।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register