Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব - ১৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব - ১৯)

স্রোতের কথা

পর্ব - ১৯

[আশীর্বাদ...অনিন্দিতা...ঝড়....জল ]
" আমি এখন এক এক করে নতুন ফ্লেজলিংদের ডেকে নেবো...তোমরা এসে এখানে ছোট করে নিজেদের ইনট্রো দেবে..তারপর গডেসের ব্লেসিং গিফ্ট টা ম্যাজিকাল ট্রে তে রাখবে....ঠিক আছে?? তাহলে আমি প্রথমে ডেকে নেবো মিস্টার ডাইকো টেনজিন কে...ডাইকো ডিয়ার... তুমি প্লিজ স্টেজের উপর এসো.." "ট্রে ট্রে করছে.... কিন্তু ট্রে কোথায় রে স্রোত??দেখতে পাচ্ছি না তো??" "উফ্ মিট্টি....তুই চুপ করে বসে দ্যাখ না...ডাইকো কে তো আগে ডেকেছে...ও কি করে দেখে নিয়ে...আমরাও তাই করবো...." প্রিস্টেস অগ্নিরূপার ভরাট কন্ঠস্বর হলে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে একটা তীব্র সাদা আলো ডাইকোর উপর এসে পড়লো....ডাইকো নার্ভাস মুখে বড় বড় পা ফেলে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল.... "হাই সবাই... আমি.... আমি ডাইকো...ডাইকো টেনজিন... আমি টিবেটের লাসা থেকে আসছি...ওখানে আমার বাবার একটা রিসর্ট আছে...ইনফ্যাক্ট আমার বাবার টোটাল সাতটা রিসর্ট আছে অল ওভার ওয়ার্ল্ড.... আমি আর আমার ভাই..." " আ্যাহেম...আ্যাহেম".....ডাইকোর কথা শেষ হওয়ার আগেই অগ্নিরূপা গলা খাঁকারি দিলেন... "আমরা আমাদের মধ্যে তোমাকে পেয়ে খুব খুশি ডাইকো ডিয়ার... কিন্তু তোমার অন্য বন্ধুদের সাথেও তো আলাপ পরিচয় করতে হবে বেটা... আর এরপর গ্র্যান্ড ডিনারটাও যে আছে...... তাছাড়া এরপর তো আমাদের আলাপ পরিচয় চলতেই থাকবে...তাই না?" আমাদের সমবেত হাসিতে ডাইকোর মুখ লাল হয়ে গেল.... " প্লিজ তোমরা হেসো না....ও ভীষন ভালো আর সরল... আমি তোমার মেন্টর হতে চাই ডাইকো... তুমি কি রাজি ডিয়ার??" প্রিস্টেস তাশি উঠে এসে হাসিমুখে ডাইকোর কাঁধে হাত রেখেছেন... ‌ডাইকো একমুখ হেসে মাথা নাড়লো... " ডাইকো তুমি এই ট্রে টার উপর তোমার গিফ্ট টা রাখো..."...... চোখের পলকে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে একটা কারুকার্য করা গোল্ডেন ট্রে এসে ডাইকোর সামনে শূণ্যে ভেসে রইলো.... ডাইকোর ব্যাগ থেকে বেরোলো একটা টাটকা তাজা পদ্মফুল...আর অদ্ভুত ব্যাপার....ফুলটা ট্রে তে রাখার সাথে সাথে বিশাল আকার ধারণ করলো.... এক অপূর্ব সুমিষ্ট গন্ধে গোটা হল ভরে উঠলো.... গোটা হলরুম্ 'হেইল কুরুকুল্লা ' রবে গমগম করে উঠলো....... স্টেজের উপর বসে থাকা প্রত্যেক প্রফেসর প্রিস্ট এবং প্রিস্টেসদের মুখ... আনন্দে.. হাসিতে উজ্জ্বল.... প্রিস্টেস তাশি হাসিমুখে বলে উঠলেন...."আই নিউ ইট্...আমাকে গডেস কুরুকুল্লা কালই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন...." ডাইকো উজ্জ্বল মুখে ফিরে এলে... ডাক পড়লো পামেলা রেডবার্ডের....প্যাম জানালো সে ফ্লোরিডায় থাকে...তার বাবা আর মা দুজনেই রকেট সায়েন্টিস্ট....প্যামের ব্যাগ থেকে বেরোলো একটি গোল্ডেন চ্যাপলেট...... ঠিক আগের মতই গোটা হল ভেঙে পড়লো 'হেইল হেকেটি' রবে.....প্রিস্টেস ডায়না প্যামের মেন্টর হলেন... সুজান মেটার বাবা রকেট সায়েন্টিস্ট এবং মা ডক্টর....তার ব্যাগ থেকেও গডেস্ হেকেটিরই ব্লেসিং গিফ্ট অর্থাৎ গোল্ডেন চ্যাপলেটই বেরোলো...সুজানের মেন্টর হলেন প্রিস্টেস আলিশা.... সুজান একটু গোমড়া মুখেই এসে বসলো.... "প্যাম....তোর আমার মেন্টর আলাদা হয়ে গেল রে..." "তাই তো দেখছি..." প্যামের বিষন্ন উত্তর... স্টেজে ততক্ষণে সমীরের ডাক পড়েছে... দিল্লীর ছেলে, সমীরের বাবা এবং মা.... একজন পুলিশ কমিশনার..... আর একজন..... বিখ্যাত ল-ইয়ার... এবং তার ব্যাগ থেকে বেরোলো অদ্ভুত সাদাটে রঙের পাথরের ব্রেসলেট.....গডেস্ নিক্সের ব্লেসিং ( পরে জেনেছিলাম ওই পাথরটার নাম 'মুনস্টোন' )....'হেইল নিক্স' চিৎকারের সাথে সাথেই সমীরের মেন্টর হলেন প্রিস্ট টাইরেসিয়াস.... "আমি রিজ্ মালিক....এই যে আমার গিফ্ট..." তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রিজ্ প্রায় হোঁচট খেয়ে পড়েই যাচ্ছিল.... "আরে রিজ্ !!!! আস্তে আস্তে বেটা....তোমার কি হলো ডিয়ার... তুমি এতো ছটফট্ করছো কেন??" প্রিস্টেস অগ্নিরূপা অবাক হয়ে বললেন..... রিজ্ লজ্জা পেয়ে গেল... "স্যরি ম্যাম্.....আমি রিজওয়ান মালিক ফ্রম দুবাই... আমার বাবার দুটো অয়েল পিট্...তেলের খনি আছে...." কেন যেন এত সুন্দর আরামদায়ক আবহাওয়াতেও রিজ্ ঘেমে চলেছে..... রিজের গিফ্ট হোলো গডেস্ কুরুকুল্লার পদ্মফুল.. আর ওর মেন্টর হলেন প্রিস্ট অনিরুদ্ধ....... "এবার আমি ডাকছি মিস্ মৃত্তিকা মাহাতো কে" সাথে সাথেই মিট্টি স্প্রিং এর মতো লাফিয়ে উঠে আমার গালে গাল ঠেকিয়েই স্কার্ট সামলে দৌড়লো... "হাই অল্... আমি মৃত্তিকা মাহাতো....ফ্রম পুরুলিয়া...." মিট্টি খুব স্মার্টলি বলার চেষ্টা করলো.... ‌‌" আমার বাবা চাষ করেন...আমাদের জমি আর বাগান আছে... আমার মা হাউস ওয়াইফ্ ..... আমাদের....." মিট্টি কিছু একটা বলতে যাওয়ার আগেই হলের সামনের দিক থেকে অর্থাৎ আলোহাদের গ্রূপ টা থেকে একটা হাসির রোল উঠলো.... কিছু মন্তব্যও বিভিন্ন গলায় ছিটকে ছিটকে এলো...... "ট্যাকি.....চাষার মেয়ে....এক্কেবারে বেগার....ডাউনমার্কেট... অশিক্ষিত....ক্লাসলেস্ " আমি বুঝতে পারলাম অসহ্য রাগে আমার গা থেকে আগুন বেরোচ্ছে.... নিজের অজান্তেই আমি উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিলাম..... কিন্তু তার আগেই এক অদ্ভুত ঘটনায় চমৎকৃত হয়ে গেলাম.... হঠাৎ গোটা হল জুড়ে একটা সোঁ সোঁ আওয়াজের সাথে সাথেই ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রবল গতিবেগে একটা ঝড়ের মত বাতাস হা হা করে বয়ে গেল !!.... জানি না এ রকম বদ্ধ ঘরে এই রকম প্রবল হাওয়া কি করে সৃষ্টি হোলো...আর সেই ঝড়ের মতো প্রবল হাওয়া আমাদের সবার চুল এবং জামাকাপড় এলোমেলো বেসামাল করে দিয়ে সোজা গিয়ে ধাক্কা মারলো আলোহাদের রো তে...আর তারপরই সেই প্রবল শক্তিশালী ঝড়ের মতো বাতাসের ধাক্কায় আলোহা সহ পাঁচ/ছ'জন ছেলে মেয়ে জাস্ট ছিটকে গিয়ে লাট খাওয়া ঘুড়ির মত.... হলের ছাদে গিয়ে ধাক্কা খেল.... এবং অদ্ভুত ভাবে ল্ অফ গ্র্যাভিটেশন কে অগ্রাহ্য করে বেলুনের মতো সেখানেই লটকে....ভেসে রইলো....আর এর সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল তোড়ে হলের ছাদ থেকে ঝরঝর করে জল ঝরে পড়তে লাগলো ওদের উপর .... অদ্ভুত ভাবে শুধু আলোহাদেরই উপর... মূহুর্তে গোটা হল্ আলোহা'দের ভয়ার্ত বিস্মিত আর্তনাদে মুখরিত হয়ে উঠলো...আমরা সবাই অবাক আতংকিত বিস্ময়ে উঠে দাঁড়ালাম... " ক্লাস... আভিজাত্য... মানুষের জন্মপরিচয় বা চেহারায় থাকেনা ফ্লেজলিংস্......রাদার....সেটা একটা মানুষ আরেকজনের সাথে কিরকম বিহেভ করছে...আর নিজেকে নিজের কাজের এবং কথার মাধ্যমে কিভাবে তৈরী করছে... উন্নত করছে....তার উপর নির্ভর করে... সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এখানে সবচেয়ে ডাউনমার্কেট তোমরা...." প্রিস্টেস অনিন্দিতা...কখন যেন উঠে এসেছেন স্টেজের সামনে...মুখ রাগে লাল.... যে স্নেহময় মুখ কিছুক্ষণ আগে সবার মনের ভিতর মায়ার স্পর্শ বুলিয়ে দিয়েছিল....সেই মুখের এই ভয়ঙ্কর পরিবর্তন দেখে আমার বুকের ভিতরটা আতংকে হিম হয়ে কুঁকড়ে গেল.... আমি শপথ করে বলতে পারি...হলে উপস্থিত প্রত্যেকেরই একই অবস্থা....এমন কি স্টেজের উপরে....মিট্টিও.... দেখলাম...থরথর্ করে কাঁপছে.... পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন মিরান্ডা... উনি তাড়াতাড়ি উঠে এসে অনিন্দিতার কাঁধে হাত রাখলেন..... "আরে... অনিন্দিতা....কি করছো....ওরা বাচ্ছা.... জাস্ট ফ্লেজলিং....পরে সব ঠিক হয়ে যাবে...ওরা বন্ধু হয়ে যাবে..." "বাচ্ছা অবস্থায়ই শিক্ষা হওয়া উচিত মিরান্ডা..... কারণ সেই শিক্ষাই লাইফটাইমের জন্য হয়.... এরপর এরকম অসভ্যতা দেখলে শুধু শিক্ষা নয়..... শাস্তি হবে...." বলতে বলতেই ওনার হাতের এক ঈশারায় আলোহা এবং তার দলবল উপর থেকে রকেটের মত নেমে এসে নিজেদের সিটে হুমড়ি খেয়ে পড়লো....জলে ভিজে বেড়ালের মতো হয়ে.... আমি দেখলাম.... স্টেজের উপর প্রফেসর হাসান সহ বাকিরাও দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন... অনিন্দিতা ও মিরান্ডা নিজেদের জায়গায় ফিরে যেতে....সবাই বসে পড়লেন...... "মৃত্তিকা এবার তুমি তোমার পাওয়া ব্লেসিং গিফ্ট টা...." প্রিস্টেস অগ্নিরূপার কথা শেষ হওয়ার আগেই মিট্টি তাড়াতাড়ি কাঁপা কাঁপা হাতে ধরা সোনালী ব্যাগ টা সামনে ভাসতে থাকা ট্রের উপরে রেখে দিলো....আর সেখান থেকে বেরিয়ে এল এক টকটকে লাল জবাফুল... বেরিয়েই বিশাল আকার ধারণ করলো....... "হেইল মহাকালী" ধ্বনির মধ্যেই , প্রিস্টেস অহনা এগিয়ে এসে মিট্টি কে জড়িয়ে ধরেছেন.... "আমি ভাবছিলাম গডেস্ মহাকালী কি এবারে কাউকে ব্লেসিং দেন নি!!! উনি কি কোনো কারণে ক্ষুব্ধ... তুমি আমার চিন্তা ঘোচালে ডিয়ার.... আমি ই তোমার মেন্টর হবো " "হেইল মহাকালী" উত্তাল শব্দের মধ্যেই মিট্টি এসে আমার পাশে বসে পড়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কপাল থেকে গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছলো... "কি কান্ড মাইরি... এ কি জায়গা বস্.... এ তো সিনেমারও বাবা.... খুব সাবধানে থাকতে হবে মাইরি...বুঝলি স্রোত.... আচ্ছা!!! ঐ ঝড়্ আর জল টা ঐ ম্যাডাম টা...মানে থুড়ি ঐ প্রিস্টেস টা... মানে ঐ অনিন্দিতা ম্যাম টা....কি করে এখানে আনলো বল্ তো !!!???" আমার তখন আর মিট্টির কথার উত্তর দেওয়ার সময় বা উপায় কোনোটাই ছিলো না ( অবশ্য উত্তর টা জানতাম ও না )....কারণ তখন গোটা হল জুড়ে প্রিস্টেস অগ্নিরূপার ভরাট দানাদার গলা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে.... "আমি এখন ডেকে নেবো এই সেশনের আমাদের সর্বশেষ ফ্লেজলিং ' মিস্ স্রোতস্বিনী বসুমল্লিক কে' ডিয়ার স্রোতস্বিনী... তুমি প্লিজ স্টেজে উঠে এসো..."
মিট্টির হাত টা হাতের মধ্যে নিয়ে একটু চাপ দিয়ে... বাকি বন্ধুদের হাত নাড়ার প্রত্যুত্তরে হাত নেড়ে মুখে হাসি....মনে একরাশ উৎকণ্ঠা ও ভয় নিয়ে আমি স্টেজের দিকে এগিয়ে গেলাম।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register