Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

Cafe কলামে পূর্বা দাস - ৫

maro news
Cafe কলামে পূর্বা দাস - ৫

গপ্পো নয়...

বভ্রু কে অনেকদিন পর দেখলাম। তা আট মাস তো হবেই। মহাবীরনগরে থাকতে ওর সাথে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই একদিন না একদিন মুলাকাত হতোই। সাথে ওর হাড়জিরজিরে ঘোড়া, থুড়ি, ঘোড়া না, ঘুড়ী। দেখতে ফিনফিনে হলে হবে কি, নামের বাহার আছে। সিলভিয়া। আসলে বভ্রুর সাজপোশাক আর ঐ ঘুড়ী দুটোই চোখ টেনে নিত। আমায় দেখে চোখ নাচাত বভ্রু। যেন বেশ সখী আমরা। সাহস করে একদিন জিজ্ঞাসা করেই ফেলি, কোথায় যাও ঘোড়া নিয়ে? "ভাড়া খাটে তো। বিয়েবাড়ীতে, পার্টিতে।" তবে ঐ পাঁজরসর্বস্ব ঘোড়ায় চড়তে সাহস হয়না কারো। ও নাকি নাচ দেখায়। সেই সৌভাগ্যও হল একদিন। মোনালিসার দাদার বিয়েতে সপরিবারে নিমন্ত্রন ছিল আমার। সেখানেই দেখলাম সিলভিয়ার কেরামতি। মোনালিসা আমার নতুন বন্ধু। বাঙ্গালী, তবে তিনপুরুষে রাজস্হানবাসী। একটা স্কুলে পড়ায় ও। ডালবাটি, সর্ষো কি শাগ, সাথে বাংলার ভাঁপা ইলিশ, পাটিসাপটা, চন্দ্রপুলি বানাতে ওস্তাদ। কিন্তু বাঙ্গালী বিয়ের বৌভাতে, ভাবা যায়, সব নিরামিষ আইটেম। পুষিয়ে দিল বভ্রুর ঘোড়া। জব্বর ট্রেনিং দিয়েছে বভ্রু। হিন্দী, পাঞ্জাবী, রাজস্হানী গানের সাথে পা তুলে, ভেঙ্গে, চরকিপাক ঘুরে - বেশ নাচ। বভ্রুর জেব উপছে পড়ে।
মহাবীরনগর ছেড়েছি এক বছরের বেশী। তারপর মাত্র একবারই দেখা হয়েছিল বভ্রুর সাথে। বড়িমন্ডীতে। বলল, সিলভিয়া খুব কম খাচ্ছে। তাই সস্তায় ফলমূল কিনতে এসেছে। ব্যস। তারপর একদম বেপাত্তা সে। অবশ্য রাজীবগান্ধীনগরের এই দিকটা একটু অন্যরকম। শুধুই স্টুডেন্টস হস্টেল আর অজস্র ছোট বড় ইন্সটিটিউশন। ফ্রুটজুসের আর ফাস্টফুডের দোকান, রাস্তার মোড়ে মোড়ে সেলাই মেশিন নিয়ে বসা দর্জিরা, সব মিলে জমজমাট কমার্শিয়াল। এরমধ্যে হাতী, ঘোড়া, উটের জায়গা হয় না। রংবাড়ী যাবার রাস্তায় ইরিগেশন অফিস ক্যাম্পাসের ভেতর হয়েছে আধার সংশোধন কেন্দ্র। কাজ ছিল সেখানে। ঘটোৎকচ সার্কল থেকে রাস্তাটা যেখানে বাঁক নেবে, ঠিক সেখানে পৌষের রোদ্দুর মেখে, রোদ্দুর রঙের পোশাকে, দেখি বভ্রু। মুখেচোখে থম হয়ে আছে ` ভরা বাদর মাহ ভাদর।' কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই, হাউ হাউ কান্না। ` সিলভিয়া মরি গয়ি দিদি।' একটু পেছনদিকে উঁচু ফুটপাথে বসে ওর ছেলের বৌ ইঁটের উনোনে রান্না করতে করতেই বাচ্চাগুলোকে খাইয়ে দিচ্ছে তাড়াতাড়ি। কিভাবে হল জানতে চাইলাম। পার্টি ছিল কাল। বুখার ছিল তাই বভ্রু বা ওর ছেলে কেউ সাথে যেতে পারেনি। অন্য একজন নিয়ে গিয়েছিল সিলভি কে। সেখানে অতিরিক্ত পরিশ্রম আর নিতে পারেনি ক্ষীণপ্রাণ জীবটা। নাকমুখ দিয়ে নাকি রক্ত বেরিয়ে এসেছিল আর ওখানেই শুয়ে পড়েছিল শেষবারের মত। অন্তিম সংস্কারের জন্য টাকা চাইল বভ্রুর ছেলে। ঘোড়ার অন্তিম সংস্কার! সে তো মিউনিসিপ্যালিটির কাজ। মনে মনে ভাবলেও, মুখে বলিনি। সিলভি শুধু ঘোড়া তো না, ওদের পরিজন। বভ্রুদের যাযাবরী রক্ত এখন থিতু হয়েছে। সরকার ওদের থাকার জায়গা দিয়েছে। পরিচয়পত্রও আছে। জাতব্যবসা লোহারের কাজ করেনা বভ্রু বা ওর ছেলে কোনদিনই। এটা বভ্রুই আমায় বলেছিল একবার। এবার তবে কি সিলভিয়ার বদলে নাচ দেখাবে বভ্রু? ভোটার কার্ডে মাত্র পয়ত্রিশ বছর বয়স বভ্রুর। এখনও অন্তত চার পাঁচটা চুনাও ওকে দেখতে হবে তো!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register