Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মানিক পাঁচালী -তে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়

maro news
মানিক পাঁচালী -তে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়

কণ্ঠস্বর: প্রান্তীয়-র প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় সত্যজিৎ

নাম তাঁর সত্যজিৎ। শুনতে cliche লাগলেও স্বগর্বে বলা যেতেই পারে যে এই ভদ্রলোক সত্যের সাথে বিশ্বজয় করতে এসেছিলেন, জয় করেছেন এবং পার্থিব শরীরকে বিদায় জানালেও মানুষের মননে থেকে গেছেন চিরকাল। ইংরেজি সাহিত্য পড়তে চাইলেও হয়েছিলেন অর্থনীতির ছাত্র, কিন্তু বিশ্ব দরবারে নিজের চিন্হ রেখে গেলেন তাঁর সৃষ্ট ছায়াছবি ও তাঁর সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে। সত্যজিৎ রায় বিষয়ে আলোচনা করা ও লেখালিখি করা দুঃসাধ্য বিষয় কারণ এমন ব্যপ্তিকে ফ্রেমের মধ্যে আনা শুধুমাত্র আমাদের প্রিয় মানিক দার পক্ষেই সম্ভব। যে কোন লেখার একটি narrative থাকে আর এই লেখার narrative হিসেবে sub altern theory কে মাথায় রেখে পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি ইন্দির থাকুরণ চরিত্রটির ওপর এবং মানিক বাবুর স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি two: a film fable এর দুটি শিশুর শিশুসুলভ প্রতিযোগিতার উর্ধ্বে ওঠা সমাজের এক নির্মম প্রতিযোগিতার চিত্রর ওপর আলোকপাত করার চেষ্টা করা হল। প্রান্তিক মানুষদের প্রতিনিধি হিসেবে ইন্দির ঠাকরুন এর চরিত্রায়ন, ও দুটি নিষ্পাপ শিশুর 'পাপী' প্রতিযোগিতা যেন দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখায় সমাজের বাস্তব রূপ। পথের পাঁচালীর ইন্দির ঠাকরুন বয়সের ভারে বৃদ্ধা এবং সমাজের ভারে দরিদ্র বিধবা যিনি কি না নিজের ভাইয়ের অভাবের সংসারে আশ্রিতা। শীর্ণ শরীর ও জীর্ণ কাপড়ের ফাঁক দিয়েও ঝলমল করে গাছ থেকে চুরি করে দুর্গার আনা ফল খাওয়া এই বৃদ্ধা পিসির রাজকীয় হাঁসি আবার পরক্ষনেই আমরা দেখি নিজের ভাইয়ের বউয়ের রুঢ় অভিব্যক্তির সামনে সারাদিন অনাহারে থাকা দুর্গার বিধবা পিসির করুন হাঁসি। আশ্রিতার ঠিকানা বদলায় নিজের ভাইয়ের সংসার থেকে পাড়াতুতো ভাইয়ের সংসারে কিন্তু নতুন অতিথি অপুর মুখ দেখতে আবার শিকড়ের টানে ফিরে আসে। বৃদ্ধার পালার সমাপ্তি ঘটে মৃত্যুতে, ঠিক যেন তাঁর গাওয়া গান "হরি দিন তো গেল সন্ধ্যে হল, পার কর আমারে।" তাঁর মৃত্যুর epitaph হয়ে ওঠে। বাস্তবের মাটি থেকে তুলে আনা ইন্দির পিসি জীবন্ত করে তুললেন গ্রামের অভাবের সংসারে অযাচিত বুড়ি পিসিমার করুন চিত্র। অভাবের সংসারে কিচেন পলিটিক্সের মধ্যেও যিনি প্রান্তীয়, সেই চরিত্রকেও অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পরিচালক বাবু তাঁর ম্যাজিক টাচ দিয়ে দিলেন। Two: a film fable সমবয়সের অসম লড়াই যেন আবার সেই প্রান্তিক মানুষদের জন্য আওয়াজ তুলতে শেখাল। দুটি শিশুর মধ্যে লড়াই আসলে যেন প্রাসাদ ও কুটিরের লড়াই, অর্থ ও ক্ষমতার সাথে সৃজনশীলতা ও আনন্দের লড়াই, সাম্রাজ্যবাদ বনাম জাতীয়তাবাদের লড়াই, ধনতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র। শিশু মনের এই জটিল মনস্তত্ত্বের চিত্র আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় নির্মম সত্যের বাস্তবতা এবং শেষ দৃশ্যের কুটিরবাসির বাঁশির সুর যখন প্রাসাদের ও প্রাচুর্যের দম্ভকে খর্ব করে তখন কোথাও গিয়ে মানিক বাবুর প্রান্তিক মানুষকে কেন্দ্রীয় পটভূমিতে রাখার প্রয়াস সফল রূপদান পায়। গায়ত্রী সি স্পিভাক দেখিয়েছিলেন পুরুষের চোখে নারীর subaltern, সাদা চামড়ার চোখে কালো চামড়ার subaltern, ধনী মানুষের চোখে অর্থহীনরা হলেন subaltern. স্পিভাক এই বক্তব্যকে সামনে রেখে প্রশ্ন করেছিলেন, "Can the Subaltern Speak?" পথের পাঁচালী এবং Two: a film fable প্রান্তিকদের করুন বাস্তব চিত্র প্রকাশ করেছিল নির্মমভাবে কিন্তু পাশাপাশি পরিচালক মহাশয়ের হাত ধরে তারা তাদের marginal life status এর বিষয়ে একটু হলেও প্রশ্ন করার জন্য জমি প্রস্তুত করতে পেরেছিল কি না তা বিবেচনা সাপেক্ষ হয়ে থাকবে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register