Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পকথায় অনুপম দত্ত

maro news
গল্পকথায় অনুপম দত্ত

ভ্রান্তি

তুমি কিন্তু দিনদিন অসম্ভব ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছ! অফিস থেকে ফিরতে না ফিরতেই গিন্নীর আক্রমণে একটু বেসামাল হয়ে পড়লেন অলোকবাবু। হ্যাঁ, এককালে তিনি খুব ভুলটুল করতেন বটে কিন্তু আজকাল তো আর...। চায়ের কাপটা তাড়াতাড়ি নামিয়ে বললেন - কেন, আবার কী করলাম। কী আবার করবে, আমাকে উদ্ধার করেছ। কোহিনুরের প্যাকেটটা পড়ার টেবিলে ফেলে রেখেছিলে! নেহাত মালতীর চোখে পড়লো তাই নাহলে দিদি জামাইবাবুর সামনে কিরকম বেইজ্জত হতাম ভাবতে পারছ? অফিস বেরোনোর সময়তো বড় মুখ করে বলে গেলে - দিদি জামাইবাবুকে রাতে চিলিচিকেন আর ফ্রায়েড রাইস খাওয়াবে। চালের প্যাকেটটা পড়ার ঘরে থাকলে কী দিয়ে ফ্রায়েড রাইস হবে শুনি! ও, তাহলে এই ব্যাপার। এ হে হে, বড়ই ভুল হয়ে গেছে দেখছি। গতকাল অলোকবাবুর বড় শালী আর ভায়রাভাই এসেছেন।দেরাদুন রাইসের প্যাকেটটা যদি পড়ার ঘরে থাকে তাহলে সকালে রান্নাঘরে ঠক করে কী ফেললেন? একটা ভারী প্যাকেট এবার অলোকবাবুর কোলে এসে পড়লো। নাও, তোমার অমূল্য সৃষ্টি! ভেবেছিলাম উনুনে দিয়ে দি। তারপর মায়া হলো। আর কেউ না পড়ুক তোমার সোহাগের রীতাকে না পড়ালে হয়! থাকো তুমি এইসব নিয়ে, সংসার উচ্ছন্নে যাক। থমথমে মুখে এবার বিশাখা চায়ে চুমুক দেন। এই হয়েছে এক জ্বালা। কোনকালে অফিসক্লাবের ফাংশনে সাজাহান করেছিলেন।তিনি সুজা আর রীতা তাঁর স্ত্রী। বেশ ভাল উৎরেছিল নাটকটা। ভাই, ভাইয়ের বৌ, পাঁচ বছর বয়সী ভাইপো দর্শকাসনে। নাটক দেখে ফেরার পথে ভাইপো বলে বসলো - নতুন জেঠি খুব ভালো।ব্যাস, সেই থেকে সুযোগ পেলেই বিশাখা রীতাকে জড়িয়ে খোঁটা দেন। আ হা হা, ওসব থাকনা। দিদি জামাইবাবু চলে গেল? যাবেনা! আবার ফোঁস করে ওঠেন বিশাখা।যা আপ্যায়নের ছিরি। কাল দিদিরা আসতে না আসতে তুমি বিজনদাকে বলনি - আসুন,আসুন, আমরা ভীষণ আশংকা করছিলাম আপনারা আসবেন! পাঁচবছর পর ওরা এলো আর...বিশাখার গলা বুঁজে এল। এই দেখো কী মুশকিল। তাড়াহুড়োয় আশা বলতে গিয়ে আশংকা বলে ফেলেছি। দিদি, বিজনদা অত খেয়াল করেছে নাকি। হ্যাঁ, সবাই তোমার মত আলাভোলা কিনা! আচ্ছা, তুমি কি বুড়োবয়েসে প্রেমে পড়েছো? এরকম অতর্কিত আক্রমণ আশা করেননি অলোকবাবু।কাশতে কাশতে বললেন,কী মুশকিল, তোমার মাথা খারাপ হল নাকি।এত বছর পেরিয়ে এসে...। বিশাখা গম্ভীর হয়ে গেলেন - এই বয়েসটাই খারাপ।সেদিন ম্যাগাজিনে সার্ভে পড়লাম, তুমিওতো পড়ছিলে। নিকুচি করেছে সার্ভের! যত্তসব থার্ডক্লাশ পত্রিকা। কাগজের ছেলেটাকে বলতে হবে ওগুলো যেন আর না দেয়। পত্রিকা বন্ধ করে কী হবে? পাড়ায় লোকজন নেই! বিশাখা আরো গম্ভীর হয়ে বললেন - কয়েকমাস ধরে দেখছি তোমার অফিস থেকে ফিরতে মাঝেমাঝেই দেরি হচ্ছে।জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যাচ্ছ। রীতার ওখানে যাচ্ছনাতো? তুমি থামবে! ধমকে উঠলেন অলোকবাবু।রীতা পাঁচবছর হল মুম্বাই ট্রান্সফার হয়ে গেছে - তুমিতো জানো! ধমক দিয়ে তুমি বেশিদিন পার পাবেনা।আমি কিন্তু খোকার কাছে চলে যাব।কবে থেকে বলছি খোকার নতুন নম্বরটা দাও।কতদিন কথা বলিনি ছেলেটার সাথে! তোমাদের বাপ ছেলের ঝামেলার মধ্যে আমাকে জড়াবে না।আমি খোকার কাছে যাবই।
----
রাত বারোটা। বিশাখা ঘুমিয়ে পড়েছেন।অলোকবাবু বিশাখাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় এসে বসেছেন। গত পাঁচবছর ধরে এরকমই চলছে। সকালে বাজার রান্না সেরে বিশাখাকে খাইয়ে অফিস চলে যান।অফিস থেকে ফিরে রোজ বিশাখার আক্রমণ সামলান।পুরোনো সব ঘটনা, পুরোনো অভিযোগ। দিদি জামাইবাবু গত হয়েছেন দু বছর হল। কিন্তু বিশাখা গত পাঁচবছরের কোন কিছু নিয়ে কথা বলেন না।পাঁচবছর আগে খোকা তাঁদের ছেড়ে...। অফিসফেরত কালও অলোকবাবু ড. মিত্রর কাছে গিয়েছিলেন। আর বেশিদিন বিশাখা অলোকবাবুর ভুলভ্রান্তি নিয়ে খোঁটা দিতে পারবেননা। আর ছমাস।
অলোকবাবুর আঙুলের ফাঁকে চতুর্থ সিগারেটটা ধীরে ধীরে পুড়ছে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register