Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পকথায় শুভশ্রী সাহা

maro news
গল্পকথায় শুভশ্রী সাহা

বসন্ত এলে

আজকাল বিকেল হলেই উন্মুখ হয়ে যায় কেমন আকাশ। শৃঙ্গারের পরের লাল রঙ লাগে আকাশের দুই গালে। তিরতিরে বাতাসে ছাতিমের পাতা কেঁপে যাচ্ছে সেই ধু ধু দুপুর থেকেই। পুকুরপাড়ের আমগাছ টায় এবার ঝাঁপিয়ে মুকুল এসেছে। আনমনে ছাদের শুকনো কাপড় তুলে যায় দত্তবাড়ির লতা ভুলে যায় শাশুড়ি র আচারের বোয়াম। বউমা---লতা দ্রুত পা চালায়। পথ ফেলে অনেকটা এগিয়ে গেছে হাঁসের দল। দীঘিতে ক্রমশ ছায়া পড়ে আসছে। আসরুণ বিবি জলে পড়া আলোয় নিজের বিবর্ণ মুখ দেখে আঙুল বোলাতে থাকল সারা গালে। মরা গাছে বসন্তেও পাতা আসে না--
চায়ের দোকানের ঝাঁপ খুলে উনুনে কয়লা ফেলল ঝপাঝপ সুবল। মেঘ লাগে যেন আকাশের পশ্চিমকোণে,  চিত্তির! সকালে তেমন বিক্রি বাটা হয়নি। শহর তলীর এ বাসস্ট্যান্ডে কটাই বা বাস দাঁড়ায়। বুনো নিম গাছের নিচে বসে আছে বেঁটে সলিল। এ বছর চাকরি টা না হলে রেখার বিয়ে হয়ে যাবে। আগের বসন্তেই দোলের দিন সে আর রেখা মল্লারপুরে ছিল রঙ লেগেছিল শ্রীরাধিকার অঙ্গে!।--- ও সলিল ভাই, ফাল্গুনে বৃষ্টি এমন পিচনে লাগল কেন গো! চটকা ভাঙলো সুবলের ডাকে-- এক পশলা বৃষ্টির পর ই গোল আকাশ ছোঁয়া  চাঁদ উঠল। রায় বাড়ির নাটমন্দিরে আরতির ঘ্ন্টা কাসর বাজছে। দুদিন বাদেই তো দোল-- ভটচায কাকা,রাধা কৃষ্ণকে ধড়াচূড়া পরাচ্ছেন, আর গুনগুন করছেন। পেতলের পরাতে লাল আবির সাজাচ্ছে বিধবা মেয়ে আশালতা। আশালতা বাল বিধবা তাই সে রঙ তার জন্য নয়। অনেক রাতে  রায় বাড়ির ছোট কর্তা আশাকে রঙ মাখিয়ে যান। ভাতের হাঁড়িতে টগবগ করে ভাত ফুটছে। লতারা বিয়ের আগে ডাল্টনগঞ্জে থাকত। ফাগুনী পূর্নিমাতে সেখানে বনে বনে রঙ ধরতো আকাশ থেকে নেমে আসত আগুনপরীর দল। দোলের দিন  সন্ধ্যায়, ছাতিম গামাহার নিম করোঞ্জের পাকদণ্ডী পথ পেরিয়ে কতদুর চলে যেত সে আর মউল। বানভাসাভাসি চাঁদের আলোয় ভালোবাসা মেখে নিত দুজনে । মউলের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি, সে নাকি নকশাল হয়ে গেছে। বাগী হলেই কি হারাতে হয় এ ভাবে! লোকে বলে দোল মানেই রঙ, ফাগুনের চাঁদ আর  রাধাকৃষ্ণ আর পলাশের লালিমা ।  সেতো কবেই হারিয়ে ফেলেছে তার সব ভালোবাসাটুকু। যা আছে তা আশ্রয়, বেঁচে থাকার দাম্পত্য । কোলের ছেলেকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে বারান্দার ফাঁক থেকে লতা খুঁজতে চাইল  সেই ফেলে আসা বসন্তী চাঁদ---
অন্ধকারে বাগানে ডেকে  বিধবা ছোট কাকিমাকে রঙ লাগিয়েছিল ভাশুরপো।  জানাজানি হয়ে গেলে লজ্জায় কাকিমা দত্তদের বাগানেই ঝুলে পড়েছিল। এই বাগান এখন ব্রাত্য তবু দোলের পলাশ এখানেও ফোটে লাল হয়ে। গলায় দড়ির বাগান বলে কেউ ভয়ে ঢোকেই না প্রায়। শুধু ঋজু আসে এখানে। তার এমন নির্জনতায়, লাল রঙের ভর লাগে যেন। আনমনে এঁকে ফেলে শান্তিনিকতনি দোপাট্টা আর ছাতিমের পাতা---- ডিপ্রেশন  থাকেনা তার  কমার্সিয়াল ছবি, আর বোর্ড আঁকার পর!!
পলাশের সাথে বসন্তর কি মিল ঋতজা বোঝে না। তবু চোদ্দতলার এই অফিসের চেম্বার থেকে মাঝে মাঝে পলাশ দেখতে ইচ্ছা করে। সে বসন্ত হসন্ত চেনে না, দিল্লীতে বেশিরভাগ টাই মানুষ, পরে মুম্বাইতে বাবার চাকরীর শেষ কয়েক বছর। ঋতুজা একটা ওয়েল সার্কুলেটেড ডেইলি পেপারের কয়েকটা কলম হান্ডলিং করে। তার মধ্যে ফ্যাশন,  আর মেইন স্ট্রিম সিনেমা গুলির সমালোচনা করা হয়। আর এই সব করতে গিয়ে সে ভীষন ভাবে রাজাদিত্যের প্রতি উইক হয়ে পড়েছে। রাজা  উঠতি নায়ক। সিরিয়ালে খুব নাম ডাক, কিন্তু বড় পর্দায় এই প্রথম। যদিও সে জানে রাজা কে কন্ট্রোল করছে, তলোয়ার আন ধর ডিস্ট্রিবিউটারস দেরবাড়ীর বড়  বউ  দেবাঞ্জলি ধর, যে ধরকে তিনবারের বার বিয়ে করেছে। সব জেনেও  তবুও সে কী ভীষন ভালো লাগাতে ভুগছে। পলাশ গাছ আর  শিমুল কি মিলমিশ লাগে! মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল-- ভ্রমর কইও গিয়া--  রাজার ফোন? ঋতুজা ছুটল
এবারের ভোটে দাঁড়িয়েছে গুরুর বউ,  কে জানে ভাগ্যে কি আছে। এমনি ই গুরুর গুরুগিরি চলে যাবার পর থেকেই চাপে আছে বেহালা দক্ষিন পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থী রেনু চৌধুরীর নির্বাচন এজেন্ট কার্তিক চন্দ্র পড়ুই। গুরুর বরাবর পটেটো ডিসিজ ছিল সে আর বউদি দুজনেই জানতো! কি মাইরি বসন্ত ফসন্ত বলে হেবি সব যায়গায় যেত পটেটোর সাথে। সে আর বউদি দুজনেই বুঝিয়েছে, বউদি চমকিয়েছেও অনেক বার কিন্তু কে জানে গুরু এবারের টার সাথে পুরো ঝুলে গেছিল। আর কি! পার্টির রোষে পড়ে সব টিকিট ফিকিট তো গেলোই, উলটে কেতো পড়ুই এর ভাগ্যের চাকাই গেল  ডংডংয়ে ঘুরে। এখন বউদি হাল ধরেছে কিন্তু চিপ্পু মেয়েমানুষ গুস্টিকে নিয়েই ব্যস্ত!  গুরুর মত কথায় কথায় পয়সা ফেলে নাকি! এবার আবার কি সব বসন্তের র‍্যালা হবে যেন, যত্তসব  ক্যাতা!  নিজের  আর  বউএর মাথা গোজার ঠাই টা হয়ে গেলে এত চিন্তা হত নাকি! অন্যমনস্ক কার্তিক 'বসন্ত এসে গেছে' লিফলেট দিয়ে পার্টি অফিসের  সভাপতির চেয়ার টা ভালো করে মুছে নিল।
ঝড় আসবে নাকি, না বৃষ্টি! যাহ বাবা! বসন্তের আকাশেও মেঘ জমেছে বিস্তর ----
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register