Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

"পাঠগ্রহণের দিনগুলি" সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অমিতাভ দাস (পর্ব - ৯)

maro news
"পাঠগ্রহণের দিনগুলি" সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অমিতাভ দাস (পর্ব - ৯)

পাঠগ্রহণের দিনগুলি

পর্ব - ৯

দেবকুমার গঙ্গোপাধ্যায় ।'ভাষাপৃথিবী 'বলে খুব সুন্দর একটা পত্রিকা করতেন ।আমার লেখার একেবারে সূচনার দিক ।লেটার প্রেসে ঝকঝকে ছাপা ।বইমেলা তাঁকে পাওয়া যেত নিজস্ব টেবিলে ।তিনি বোদলেয়ার ও রাবোর  কবিতা অনুবাদ করেছিলেন ।কিছু টলস্টয়ের গল্প ।দেবকুমার দার একটি বই 'সুরভিলতা ও অন্যান্য কবিতা ' অসামান্য একটি কাব্যগ্রন্থ । পরিচ্ছন্ন রুচির ছাপ ছিল তাঁর কাগছে ।অনুবাদ ও প্রবন্ধের ওপর জোর ছিল ।তিনি একটা সময় 'অনুবর্তনে' লিখতেন ।তাঁর কোনো খবর আজ জানি না ,কোথায় যে হারিয়ে গেলেন !
জহর সেনগুপ্তের 'ধৃতি ,' সত্য গুহ-এর 'সাহিত্য বাগদ্রোনী' ,অনির্বাণ দাসের 'অহর্নিশ-'এ লিখেছি ।এখন অবিশ্যি শুভাশিস অহর্নিশের সম্পাদক । এই পত্রিকাটি ক্রমাগত চমকপ্রদ কাজ করে চলেছে ।বুদ্ধদেব বসুকে নিয়ে সংখ্যাটির জন্য আমরা সম্পাদক শুভাশিস চক্রবর্তীকে অবগুণ্ঠন সাহিত্য সম্মান ও সংবর্ধনা দিয়েছিলাম ।নরেশ গুহ ,সুভাষ ঘোষাল ,অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের ওপর সংখ্যা বাংলা সাহিত্যের সম্পদ বলেই আমার মনে হয় । পরবর্তী কালে অবগুণ্ঠন সাহিত্য সম্মান পেয়েছে দৌড় , কণিকা , ধ্রুবতারা , সাইন্যাপস্ , পারক , শ্রমণ , নান্দনিক প্রভৃতি পত্রিকা । আমরা সর্বদাই চেয়েছি ভালো ভালো ছোট পত্রিকাকে খুঁজে বার করে সম্মান জানাতে । তারা আড়ালে কাজ করে চলেছে । বাংলাভাষার প্রকৃত সেবা করছে ।তাদের সম্মান জানিয়ে অবগুণ্ঠন সম্মানিত হতে চেয়েছে কেবল । এইটুকুই , আর কিছু নয় ।
১৯৯৯-এ মারুফ হোসেন আর শ্যামল ভট্টাচার্যের 'সবুজের অভিযান ' বলে  সুন্দর একটা ছোট কাগজ করত । প্রতি সংখ্যায় থাকত একজনের সাক্ষাত্কার।থাকত একজন লেখকের একবছরের পাঠ প্রতিক্রিয়া ।আরেকটি সুন্দর মননধর্মী পত্রিকা ছিল তখন শৌনক বর্মনের ' প্রচ্ছায়া ' ।
বিভাবসু । আমার আরেক পছন্দের কবি ।একেবারে প্রচার বিমুখ--অন্তর্মুখী কবি ।নিজেকে নিজের ভিতরে গুটিয়ে রাখেন ।একটা কাগজ করেন--উত্তর ইতিহাস ।ইদানীং অনিয়মিত ।এই পত্রিকাটি আমার বিশেষ প্রিয় ।হাল আমলের নানা তথ্য ,অনুবাদমূলক রচনা ও মননশীল প্রবন্ধের পাশে বিভাবসু কৃত সম্পাদকীয় চমৎকার ।তাঁর ভাষা বোধ ও শৈলী বারবার মুগ্ধ করেছে । উত্তর ইতিহাসের প্রতিটি সংখ্যই  আমার সংগ্রহে আছে এবং যত্ন করে বাঁধিয়ে রেখেছি ।বিভা বসুর 'শ্রাবণ গ্রন্থির মেয়ে ' আর 'নেট কবিতা' আমার বিশেষ প্রিয় ।
পংকজ মন্ডলের 'নীলাক্ষর ।'প্রথমে ছিল 'নিরক্ষর ।' এখন হয়েছে'নীল অক্ষর ।' এই পত্রিকার কাছে আমি ঋণী । আমার প্রথম বই 'এখন তুমি মানে বিষণ্ণতা'র প্রকাশক ছিল নীলাক্ষর । প্রচুর কবিতা লিখেছি ।তাছাড়া বছর দুয়েক আগে আমার প্রথম সাক্ষাৎকারটি  নীলাক্ষরেই ছাপা হয়েছিল ।কে লেখেননি এই কাগজে !বাংলাভাষার প্রথম শ্রেণীর প্রায় সব কবিরাই লিখেছেন ।
আমার আরো কিছু পছন্দের কাগজ আছে । যেমন , বহুস্বর , ভাষা , ফসিল , শ্রমণ , আবর্ত , আদম , অণুমাত্রিক , শতানীক , ছায়াবৃত্ত , কণিকা , নান্দনিক , সাইন্যাপস্ , ক্র্যাকার , উজান স্রোত , ইসক্রা , পারক , খেয়া , একালের কবিকণ্ঠ , আলোপৃথিবী , বর্ষালিপি , গল্পলোক , রক্তমাংস , মকটেল , হৃদ্ কথন , ছাপাখানার গলি , পথের আলাপ এই রকম আরো কতো পত্রিকা ।
এতক্ষণ  লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে কিছু লিখলাম ।এবার আমার পছন্দের কিছু বইয়ের নামোল্লেখ করতে চাই ।সুব্রত মন্ডলের 'মা-এর সমস্ত ক্ষত আমার জন্ম দাগ' ,শবরী শর্মারায়ের 'বুক ভর্তি তোফা ',সঞ্জয় ঋষির'ছুঁতে চাই অথচ ,' গৌরাঙ্গ দাসের'খড়কুটো , 'কিশলয় ঠাকুরের 'একটি পালাবার ইচ্ছে ,'সুকৃতির 'দূরত্ব মানি না আমি ,' শুভ্রনীলের 'ছায়ার সাথে গুনগুন' , প্রিয়াঞ্জলি দেবনাথের ' শব্দের অরণ্যে আরো এক ক্রোশ ' , সন্তোষ চক্রবর্তীর ধুলোর শরীর , পল্লব গোস্বামীর ' সারাক্ষণ মেঘ ও ময়ূর ' , পঙ্কজ কুমার বড়ালের ' করতলে আকাশ পেতেছি'  এমন -ই আরো কিছু বই ।
অবগুণ্ঠন থেকে বেরিয়েছিল সঞ্জয়ের প্রথম বই--ছুঁতে চাই ,অথচ । আমার বেশ পছন্দের বই । শরবী শর্মা রায়ের বই বেরুলো একটু বেশী বয়সে ।এত চমৎকার লেখেন ।কেবলি মুগ্ধ হতে হয় ।আমার এক প্রিয় কবি তিনি--
ক.
শব্দ পেতে বসি ,মাখি...খাই
শরীর মৃদঙ্গ জুড়ে
বাজে কৃষ্ণ-রাই...(মৃদঙ্গ)
খ.
গঙ্গা ,হাটে এলাম তোর
এক মুঠো মাটি দে
দুগ্গা গড়বো...(মাটি)
গ.
বই-খাতা নেই
মগ্ন পড়ুয়া
সামনে আচার্য বৃক্ষ...(মগ্ন)
দুর্দান্ত সব ছোট ছোট কবিতা লেখেন ,যে বিস্ময়ে আর মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হতে হয় ।সুব্রত মন্ডল অনেক বড়ো মাপের কবি ।তাঁর কবিতার নিবিড় পাঠক আমি--
'দেবতার মত শুয়ে আছি নদীর উপর
প্রিয় বন্ধুদের লাশ হয়ে ।'(দেবতা না বন্ধু)
মনে পড়ছে দীপকরঞ্জনের 'শুভেচ্ছার মত নীল' ' চৈত্রের দৈবতা ' বইদুটির কথাও ।আমার পছন্দের একটি কবিতা---
মা-বাবাকে দেখতে পাবে না
ব উছেলেমেয়েকেও নয়
সেগুন-মঞ্জরি সাদা রাজহাঁস
গণিকা বা সন্ন্যাসী
কারোকেই দেখতে পাবে না ।
শুধু জলের শব্দ শুনবে
শুধু ফুলের গন্ধ---
দগ্ধদিন ও ঝাউগাছের স্মৃতি
কাছে গিয়ে দাঁড়াবে তখন
বলবে
এসেছি ( চৈত্রের দেবতা : ৪৮ নং)

(চলবে)

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register