Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পগাছা - অমিতা মজুমদার

maro news
গল্পগাছা - অমিতা মজুমদার

অভিলাষ ও অপারগতা

আজ এমনটা হলো কেন ? একটা বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিল। অনেকেই তার দিকে একবার তাকিয়েছে কিন্তু তাদের চেয়ারের উলটাদিকে এক ভদ্রলোক বসেছিলেন। বয়েস বছর পঞ্চাশ হবে হয়তো। বেশ সুঠাম দেহ এবং সুদর্শন। ভদ্রলোক একবারের জন্যও তার দিকে চেয়ে দেখেনি। ব্যাপারটা প্রিয়ার কিছুতেই মাথা থেকে যাচ্ছেনা। প্রিয়াও চল্লিশ পেরিয়েছে। তবুও তার দিকে এইযে সকলে একবার হলেও ফিরে চায় তাতে কি প্রিয়ার মনে একটু অহংবোধের জন্ম হয়েছে ? নইলে আজ ওই ভদ্রলোক একবারও তাকে দেখেনি বলে তার মনে কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। ভদ্রলোক একাই এসেছিলেন মনে হলো। কারণ বেশিরভাগ সময় একাই ছিলেন। আশেপাশে তেমন কেউকে দেখেনি যাদের ওনার কাছের লোক বলে মনে হতে পারে।

 তেমন  ঘনিষ্ঠ কারো বিয়ে নয়  নয়, তাই গিয়ে কিছুটা সময় থেকে হাই হ্যালো করে খাবার টেবিলে বসে পড়া,খাওয়া শেষ করে বাড়ি ফেরা। মাঝে নিয়ম করে বর বৌয়ের সাথে একটু ছবি তোলা। ব্যস এ পর্যন্তই। তার মাঝে বিশেষ একজনের প্রতি এতোটা আগ্রহী হওয়া শোভন নয়। প্রিয়ার অভ্যাসও তেমন নয়। কিন্তু আজ এর ব্যতিক্রম ঘটছে। তাকি শুধুমাত্র প্রিয়ার অহংকারে লেগেছে বলে? নাকি অন্যকিছু। কিছুতেই প্রিয়া মেলাতে পারছেনা বিষয়টা। আকাশকেও কিছু বলতে পারছেনা।

প্রিয়া দেখতে খুব সুন্দরী,একথা প্রিয়া নিজেও জানে। যখন পাঁচজনের মধ্যে দাঁড়ায় সকলের চোখ তার দিকেই থাকে এটা সে টের পায়। আজকাল তাই প্রিয়ার এটা কিছুটা অভ্যাসে দাড়িয়েছে। কোথাও কোন অনুষ্ঠানে গেলে সবাই যেন একবার অন্তত তাকেই দেখে । এর ব্যত্যয় ঘটেওনি কখনো।

বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে জামা-কাপড় ছেড়ে স্নানে যায় প্রিয়া। বাইরে থেকে এসে স্নান করা প্রিয়ার অভ্যাস। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে থাকে প্রিয়া। স্নানঘরের আয়নায় ঘুরেফিরে নিজেকে দেখে। আর মনে মনে লজ্জা ও শংকা অনুভব করে। নিজেকে তিরস্কার করে এসব কি ভাবছে সে !

কিন্তু ভাবনাটা সরাতে পারেনা। তাই স্নান সেরে এসে গায়ে লোশন মাখাতে মাখাতে আড়চোখে চায় বিছানায় আধশোয়া আকাশের দিকে। আকাশেরও বয়েস বছর পঞ্চাশ হবে।একটু কম বয়সেই পারিবারিক ভাবে দেখাশোনা করে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের রজত জয়ন্তী উদযাপন করলো গতমাসে বেশ ধুমধাম করেই। নিজেরা না চাইলেও ছেলে-মেয়ে দুটোই সব আয়োজন করে। আকাশ মনোযোগ দিয়ে কি যেন পড়ছে। প্রিয়া হঠাৎ বলে ওঠে এই আকাশ, বরের মঞ্চের পাশে যে ভদ্রলোক বসা ছিলেন ওনাকে কি তুমি চেনো ? আকাশ বলে  কার কথা বলছো? আরে ওইযে তোমার উলটো দিকেই বসা ছিল। কেমন অদ্ভুত না ! কারও সাথে তেমন কথা বলেনি। বিয়ে বাড়ি এসে কেমন কাঠের পুতুলের মতো বসে ছিল। একবারের জন্যও ওঠেনি। আশ্চর্য ! নিজের অস্বস্তির কথা চেপে রেখেই আকাশের সাথে কথা বলে যাচ্ছিল প্রিয়া ।

আকাশ একটু বিরক্ত হয়েই বলে, এই মাঝ রাত্তিরে তোমার হলোটা কি ? কোথাকার কোন লোক কারো সাথে কথা বলেনি ,উঠে হাটাহাটি করেনি,ছবি তোলেনি এসব নিয়ে পড়েছ ? প্রিয়া আমতা আমতা করে বলে না এমনিই।

আকাশ তখন কেমন অন্তর্যাামীর মতো বলে বসে, এমনি এমনি যে নয় তা বেশ বুঝতে পারছি। আমার সুন্দরী স্ত্রী, যে রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে এখনো কিশোর,তরুণ,যুবা,প্রৌঢ়,এমনকি বৃদ্ধ তালুকদার সাহেব ও একবার ফিরে দেখেন,তার দিকে ওই ভদ্রলোক একবারের জন্যও তাকায়নি। এটা ঠিক মহারানীর পছন্দ হয়নি।

শোন মনে আক্ষেপ রেখোনা,ওনার উপায় থাকলে ঠিক তোমাকে দেখতেন।  একজন স্বনামধন্য ভাস্কর্য শিল্পী।

উনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register