Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

Cafe কলামে -আত্মজ উপাধ্যায় (পর্ব - ৩০)

maro news
Cafe কলামে -আত্মজ উপাধ্যায় (পর্ব - ৩০)

বিবাহঃ নারী পুরুষের যৌনমিলনের অনুমতি? - ২২

ভাবুন, এমন একটা সমাজ, যেখানে বিয়ে নেই, ফলে, ডিভোর্সের প্রসংগও নেই, সমাজে কোন বাবা নেই, এবং যেখানে কোন ছোট পরিবার বলে কিছু দেখা যায়না। টেবিলের মাঝখানে ঠাকুরমা বা তার মা বসে আছে,তার ছেলে ও মেয়েরা তার সাথেই থাকে। বা তাদের ছেলে মেয়ে সন্তানরাও সেখানেই থাকে, এবং মায়ের রক্তরেখায় যারা আছে। পুরুষের সেখানে বিশেষ কোন কাজ নেই, শুধু মহিলাদের গর্ভবতী করা ছাড়া , লালন পালনেও জড়িত নয়। এই প্রগতিশীল নারীবাদী বিশ্ব- বা কালের প্রমাদে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ, যেকোন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মতো, আপনি যেইভাবেই দেখুন- এটা আছে হিমালয়ের অতি প্রাচ্যে,সুদূর পূর্ব পাদদেশে , দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের সবুজ উপত্যকায়। লাগু হ্রদ (Lugu Lake) বলে একটা বিস্তৃত জলাশয় কাছে আছে।
তিব্বতি (বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কেউ নয়) একটি প্রাচীন উপজাতি সম্প্রদায় তারা, তাদের মোসুও (Mosuo) বলা হয়, তারা আশ্চর্যজনকভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে জীবনযাপন করে: নারীদেরকে পুরুষের তুলনায় শ্রেষ্ঠ না হলেও সমান মনে করা হয়; উভয়েই তাদের পছন্দমতো বহু যৌন সঙ্গী রয়েছে,এ নিয়ে কারোর মাথা ব্যাথা নেই, সামাজিক আলোচনা সমালোচনা থেকে মুক্ত; এবং বর্ধিত বা বেড়ে উঠা পরিবারগুলি বাচ্চাদের লালনপালন এবং বয়স্কদের দেখাশুনা যত্ন করে। আপনার কি ইউটোপিয়ান বলে মনে হচ্ছে? বা আর কতদিন বেঁচে থাকতে পারবে?
[caption id="attachment_50832" align="alignright" width="300"] A Mosuo woman weaves with a loom at her shop in Lijiang, China. Photograph: Chien-min Chung/Getty Images[/caption]
বহুযুগ ধরে তাদের এই সংস্কৃতি চলে আসছে। সন্তানরা মায়েদের, আর তাদের বাবারা তাদের মায়ের সাথে থাকে। বিয়ে সেখানে হয়না, যেকেউ যেকাউকে পছন্দকরে যৌনসংগম করে, ধরাবাঁধা নিয়ম বা শাস্তি এসব নেই।অথচ চীনে এরকম সমাজ বা বিয়ে বহির্ভূত সমাজ নেই। এখানে একজন মহিলাকে ঘিরে বড় ও বিস্তৃত পরিবার তৈরি হয়। পুরুষ এবং মহিলারা "হাঁটা বিবাহ" হিসাবে একটি দুর্দান্ত শব্দ বা টার্মে পরিচিত যার মানে নারী ও পুরুষ রাতে একটা ঘরে যৌন সুখের জন্য প্রবেশ করে, পুরুষ তার টুপিটা দরজায় একটা হুকে আটকে যায়, এর মানে হল অন্য পুরুষ এই টুপি দেখলে আর সেই মহিলার ঘরে ঢুকবেনা।একে "অ্যাক্সিয়া"(“axia”) প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রথা নামে পরিচিত। এই অ্যাক্সিয়া কারুর কাছে এক দিনের জন্য হতে পারে, বা ভাল লাগলে বহুদিন চলতে পারে। কোন নিয়ম নেই। কারুর জীবন সংগী নেই, সবই সাময়িকভাবে চলে। এরা সারাদিনের পরিশ্রমের পর যোউনসংগমকে একটা উপভোগ্য সময়কাটানো বা পুরুষের বীর্য সংগ্রহ হিসাবে ভাবে।
সম্পত্তির মালিকানা ও উত্তরাধিকার সূত্রে মহিলারা পায়, তারা কৃষিজাতীয় কাজ সমাজে ফসল বপন এবং পরিবার পরিচালনা করেন - রান্না, ঘরদোর পয়-পরিষ্কার এবং শিশু লালন পালন ইত্যাদি করে। শক্ত শক্ত কাজগুলি পুরুষরা করে, ক্ষেতে লাঙ্গল, বিল্ডিং বা বাড়ি ঘর মেরামত, পশু জবাই এবং বিস্তৃত পরিবার সিদ্ধান্ত নি্তে সহায়তা করে, যদিও চূড়ান্ত বিচার বা সিদ্ধান্ত সর্বদা দিদিমার বা যিনি সবচেয়ে বয়স্কা মহিলা, তার থাকে। যদিও পুরুষদের পিতৃতান্ত্রিক কোনও দায়িত্ব নেই - মহিলাদের পক্ষে তাদের সন্তানের বাবা কে এসব মাথায় রাখেনা এবং এর সাথে কোনও কলঙ্ক কুসংস্কার যুক্ত নেই -পুরুষরা তাদের বোনদের সন্তানদের মামা হিসাবে বড় করার তাদের যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে।
এখানে ভাইবোন বলে যেহেতু চিহ্নিত কিছু নেই পুরুষরা সবাই মামার মত দায়িত্ব নেয়, বাচ্চাদের কাছের জন হল সবচেয়ে ছোট বয়সের মামা। সব পুরুষ সেখানে নারী তান্ত্রিক সমাজের বাসিন্দা। তাদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া কিছু নেই। বাচ্চাদের হাগা মুতা থেকে ঘর সংসারের সবই নির্দ্বিধায় ঘরের বয়স্ক মহিলার নির্দেশে করে। আর সব মহিলাই মৃত্যু অব্দি নিজেকে একাই মনে করে মানে যেটা আমরা কুমারী মনে করি।
কিন্তু একটা বড় পরিবেশের মধ্যে ছোট কিছু থাকলে তা বড় পরিবেশটা গ্রাস করে নেয়। চীনে তাই হচ্ছে, এই তীব্বতী সম্প্রদায়টি চীনের বড় দ্রুত জীবনের সাথে আস্তে আস্তে মিশে পালটে যাচ্ছে। চীনে ২৭ বছরের উপর কোন মহিলা অবিবাহিত থাকলে তাকে 'অবশিষ্ট' বলে ঠাট্টা করে। কিন্তু মোসু দের মতো বাকী সমাজ এমন ভাবে চলতে পারবে? মোসুওর একটি নিজস্ব ধর্ম রয়েছে যার নাম দাবা (Daba), যা ৩২ টি প্রতীক ব্যবহার করে। "তারা একটি" আদিম "বিশ্বাস ব্যবস্থা অনুসরণ করে। তবে, দাবা নামে অভিহিত দাব ধর্মের প্রধান রীতিনীতি বিশেষজ্ঞরা আত্মার অধিকারী এই অনুশীলনকারীদের এক ধরণের পুরোহিত হিসাবে দেখে।এটি চিন্ময়জগততত্ত্ব বা ঐ তত্ত্বে বিশ্বাস সম্পর্কিত উপর ভিত্তি করে এবং পূর্বপুরুষের উপাসনা এবং একজন মাতৃদেবীর উপাসনার সাথে জড়িত: মোসুও তাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে একজন পৃষ্ঠপোষক যোদ্ধা দেবতার পরিবর্তে অভিভাবক মা দেবী রেখেছেন।
তবে বর্তমানে মোসুও ভাষার লিখিত রূপ নেই তাই একটি লিখিত রূপ বিকশিত করার প্রচেষ্টা চলছে ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register