Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || সৌরভ সন্ধ্যায় || লিখেছেন আবির মুখোপাধ্যায়

maro news
T3 || সৌরভ সন্ধ্যায় || লিখেছেন আবির মুখোপাধ্যায়

দিকশূণ্যপুরের পথে

এই যে এখন তোমার স্মৃতিচারণা করতে বসেছি, এমন তো করার কথা ছিল না! কাল এমন অসময়েই বড়মা ফোন করে বললেন "আবির, সৌরভ আর নেই!"
একটা অনাকাঙ্ক্ষিত শীত আমায় কাঁপিয়ে দিল, দু'চোখ দিয়ে দেখা বাইরের পৃথিবীটা ঝাপসা দেখাচ্ছিল। আমার দম নিতে কষ্ট হচ্ছিল, খুব! তাহলে, এ ক'দিনে তোমার বুকে কত কষ্ট হয়েছে সৌরভদা?
এক আশ্চর্য মানুষ ছিলেন সৌরভ চন্দ্র। আর পাঁচটা বাঙালি ছেলের মতই শিক্ষিত, মার্জিত, রুচীশীল নিপাট ভদ্রলোক... পার্থক্য এই, তাঁর দু'হাতে ভগবান অঢেল সুতো দিয়ে রেখেছিলেন। তিনি নিঃশব্দে বুনতে পারতেন স্বপ্ন, হাওয়াই মিঠাই এর মত কাঁধে সেসব রঙীন স্বপ্ন নিয়ে যেতেন নন্দন চত্বরে,সেখানে আসা তরুণ তরুণীদের বুকে গেঁথে দিতেন কী দারুণ কায়দায়! আমি বারবার কেন তোমায় অতীত করে দিচ্ছি? একদিনে মানুষ অতীত হয়ে যায়? কাল সারারাত, যতবার আচমকা ঘুম ভেঙেছে, ততবারই আমার মনে হয়েছে একবার সৌরভদা'কে ফোন করি! যদি ধরে! দরাজ গলায় ডেকে ওঠে- "আবির! কেমন আছ?"
যতই ভাবছি, কত কত স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে! আমার পত্রিকায় উপদেষ্টা হতে ফোন করেছি, তুমি বললে - এত বড় বড় মানুষের সাথে আমায় রাখছিস আবির! আমি অতি সামান্য, সবার শেষে নামটা রাখিস। আরেকবার কোনো পোস্টারে লিখেছিলাম 'বিশিষ্ট কবি', সে যে কত অনুরোধ করে 'বিশিষ্ট' কথাটা তুলে দিলে! কিন্তু আমি, আমরা সকলেই জানি তুমি সবঅর্থে বিশিষ্ট, অনন্য! এই আমি সর্বস্ব দুনিয়ায়, এমন ক'জন মানুষ তোমার মত নির্লিপ্ত ও বিনয়ী হতে পারেন, আমার জানা নেই।
সৌরভ'দা তুমি আর সত্যিই কখনও আমাদের কারও ফোন তুলবে না? 'বাংলার লেখক ও শিল্পী মঞ্চ'-র অনুষ্ঠানের শেষ দিনে হল ছাড়ার তাড়াতাড়ির সময়েই, আমি ডেকে বললাম... "দাদা, দাঁড়াও একটা সেলফি তুলি!" আমি বুঝিনি তোমার পৃথিবী ছাড়ারও এত তাড়া ছিল!
আমি অপেক্ষা শুরু করলাম। যদি পরপার বলে কিছু থাকে আমি জানি, সেখানে তুমি একটি কবিতার মঞ্চ সাজিয়ে অপেক্ষা করছ। আমি আসব, আমরা সকলে আসব... তুমি মঞ্চে থাকবে স্ব-মহিমায়। হাতে মাইক৷ একে একে ডেকে নেবে কবি ও বাচিকশিল্পীদের নাম! আমরা আবার একসাথে রাতজেগে তোরজোর করব! কবিতা উৎসব!
আপাতত সাবধানে যেও। আমি দেখতে পাচ্ছি পরনে চেকচেক শার্ট, চোখে রিমলেশ চশমা, কাঁধে পিঠব্যাগ নিয়ে কবি হেঁটে চলেছেন অনন্তের পথে। দীপ্ত তাঁর চোখ, নির্লিপ্ত-প্রসন্ন তাঁর মুখ। জাগতিক সমস্তকিছু ছিন্ন করে কবি হেঁটে যাচ্ছেন কবিতার এক ইউটোপিয়ান রাজ্যে!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register