Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || সৌরভ সন্ধ্যায় || লিখেছেন শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়

maro news
T3 || সৌরভ সন্ধ্যায় || লিখেছেন শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়

কই ফিনিক্স, জাগো...

এতবছরে বহুবার শুনেছি,শোকের আয়ু বড়জোর আড়াইদিন। আত্মীয়-পরিজন,প্রিয় ও স্বজনের চলে যাওয়ায় অজস্রবার তা অনুভবও করেছি। কিন্তু আজ জীবনের অর্ধেক পার করে এসে একটা ছেলে বেমক্কা এমন করে আমাদের সবার হাত ছেড়ে পালিয়ে গেলো যে শুধুই খুঁজে চলেছি,কান্না লুকিয়ে অপদার্থের মতো বেঁচে থাকা দিনে আর চতুর্দিক ভিজে যাওয়া অন্তহীন রাতেও।
সৌরভ ছেলেটা নিজেই কাছে এসেছিলো,খুব সোজা আর স্পষ্ট বক্তব্য নিয়ে। এই যে সব অতীতকালের শব্দ চলে আসছে,তার কারণ আমি অত্যন্ত সাধারণ এক অদূরদর্শী মানুষ। বর্তমানকেও স্পষ্ট বুঝি না,আর ভবিষ্যৎ তো নয়ই। আদ্যন্ত কবিতায় বাঁচে সৌরভ,আর সেখান থেকেই আমাদের এত কাছে আসার শুরু। কয়েকটা দিন কিছুই লেখার মতো অবস্থায় যে ছিলাম না,তার কারণ আমি অত্যন্ত গড়পড়তা চিন্তার স্তরের মানুষ, সামনে থেকে সরে যাওয়াকে চিরতরে চলে যাওয়া ভেবে ভেঙেচুরে যাচ্ছি এখনও। নিজের অপারগতা আর না- জানা কত সহজে এককথায় স্বীকার করা যায়,ওকে দেখেই শিখেছি। বয়স,পদমর্যাদা আর নিজের গুছিয়ে রাখা হিসেব এলোমেলো হয়ে যাবার সব ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে যে কাউকে যা খুশি বলে দিতে পারতো, বলতোও। আর তার জন্য যতটা সমালোচনা কুড়িয়েছে,নিজেকে উজাড় করে চেনা-অচেনা নির্বিশেষে মানুষকে ভালবেসে আর মানুষের বিপদে পাশে থেকে সকলকে খুব চুপিসাড়েই অসম্ভব মায়ায় জড়িয়েছে তার চেয়ে বহু বহুগুণ।
ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করতে বসিনি,সত্যি বলতে এখনও সেই সুস্থিতি আসেনি মনের। আর আমাদের যত বেশি কথা,যত তর্ক,রাগারাগি আর কবিতা নিয়ে সময় কেটেছে,তার সামান্যও তুলে ধরতে গেলে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে হবে। ছেলেটা সত্যিই ভালবাসতে জানে,নইলে এই যে দেখছি চলে গিয়েছে আমাদের ছেড়ে,তারপরেও কীভাবে সবসময় ওর সঙ্গেই আছি!
সৌরভ রাজনীতি বুঝতো,বুঝতো অর্থনীতিও। আমাকে এসব বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে বহুবার,পারেনি। কিন্তু আমরা প্রায় সকলেই যেটা বেশ ভালো বুঝি,সেটা ও একেবারেই বোঝেনি। নিজের আখের গোছানো আর নিজেকে সযত্নে বাঁচিয়ে রাখার এই আপাত ভদ্র শিল্প সে একেবারেই আয়ত্ত করতে পারেনি,বরং ঘৃণার চোখেই দেখেছে। সমস্ত পঙ্কিলতা,কলুষতা মুছে এক "ওয়াল্ডেন" এর স্বপ্ন দেখতো,বারবার ধাক্কা খেতো,অসহ্য রাগ আর বিরক্তি অবধারিতভাবে মাঝরাতেও বলতো আমার মতো, আমাদের মতো প্রিয় মানুষদের,তারপরেও অসম্ভব বলিষ্ঠ কবিতায় আর নতুন সাহসে ভর করে যেন নিজের ছাইয়ের থেকেই জেগে উঠতো প্রাচীন ফিনিক্সের মতো। এই আমাদের সৌরভ। এই তেজ,এই দাপট ওকেই মানায়,আমাদের মতো সাবধানীদের, সবদিক সামলে চলা অত্যন্ত সাধারণদের নয়।
অসুখ সবার জীবনে আসে,অগ্রজ কবির চিকিৎসার ব্যবস্থা আর শুশ্রূষার দায়িত্বে থাকতে থাকতে সামান্য অসাবধানতায় সৌরভ নিজেও সংক্রামিত হয়েছে। এমন অসহনীয় কষ্ট একা সহ্য করতে করতে আর আমাদের নিশ্চিন্ত জীবনে থাকতে দেখে অসহ্য রাগ আর বিরক্তিতেই হয়তো সব কষ্ট আর যন্ত্রণা আমাদের জন্য রেখে গন্ধরাজের সুরভি ওই অপার্থিব বিকেলটার গায়ে ছড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো,বাবার জন্য লেখা সব কবিতা,মায়ের জন্য প্রতিদিনের সব দায়িত্ব মাথায় নিয়ে ওঁদের কাছেই।
আমরা হা-পিত্যেশ অপেক্ষায়, ডানপিটে ছেলেটা বলে যায়নি যখন,ফিরবে অবশ্যই। সৌরভ চন্দ্র জাত ফিনিক্স, সব অপদার্থ অদূরদর্শী ভাবনা আর কষ্ট পাওয়া মুছে দিয়ে নিজের ছাইয়ের থেকে উঠে আসবেই। চেনা ফোনের ওপার থেকে আবারও ভেসে আসবে,"শুভঙ্করদা,চারটে লাইন লিখেছি,একটু শুনবে?"
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register