কবিতায় স্বর্ণযুগে দেব চক্রবর্তী (গুচ্ছ কবিতা)
১| ঈশ্বরের সন্তান
ভালোবাসার জন্য হাজার মাইল
পেরোতে পারি-
ভালোবাসার জন্য বাতাসহীন
দূর আলোকবর্ষকে
কাছে টেনে নিতে পারি।
ভালোবাসার জন্য দুর্গম আরাকানের হিংস্র পশুর সাথে
লড়াই করতেও কুণ্ঠিত নই।
ভালোবাসার জন্য হাসিমুখে
ঝাঁপ দিতে পারি কৃষ্ণসাগরের তুফানে।
কোনও রকম মৃত্যুতেই দ্বিধা নেই আমার ;
তোমরা আমাকে হনন করো।
কেননা
প্রেম বাঁচিয়েছি অন্ধ প্রেমিকার।
ভালোবাসার জন্য তাঁদের পার করেছি এই দানব জঙ্গল।
ভালোবাসার জন্য ছেড়ে দিয়েছি পরমান্ন।
এই আমি ঈশ্বরের সন্তান-
তোমরা আমাকে হনন করো, হনন করো।
এসো, মহামুক্তির স্বাদ এনে দাও॥
২| কেন চেয়ে আছো
আমাকে নিঃস্ব করেছো
আমার চোখ ফাটিয়ে রক্ত ঝরিয়েছো
আমার বুকের এফোঁর ওফোঁর করে
ঢুকিয়েছো কত অণু পরমাণু ।
তবুও দেখো , আমি কেমন অবিচল ;
ঠিক তোমার চিরচেনা রবীন্দ্রনাথের মতো ।
আর কত !
আর কত রক্ত ঝরাবে আমার !
এই জীর্ণ পৃথিবীর থেকে শেষবারের মতো
কোলে তুলে নাও ।
পৃথিবীর কোলে পাশ ফিরে শুই চিরকালের মতো !
ঠিক আমার নষ্ট শৈশবের মতো !
আমার ক্ষুধার্ত যৌবনের মতো !
আমার হেজে যাওয়া স্বপ্নের মতো ।
‘কেন চেয়ে আছো গো মা মুখপানে !’
কথা বলো – মুক্ত করো এ অর্বাচীনে ॥
প্রণাম মা…..
৩| বাঁচবো কোথায়
বাঁচার খুব ইচ্ছে ছিলো
বাঁচবো কোথায় গুরু
মৃত্যু পেয়েছে অগ্রাধিকার
এই তো মরণ শুরু।
বিষাক্ত দিন বিষাক্ত সব
বিষাক্ত শব গুনি
মৃত্যু পেয়েছে অগ্রাধিকার
শুনছি নিরোর ধুনী।
হায় হাহাকার মরণ সুখে
বাজনা বাজে কৈ
মৃত্যু পেয়েছে অগ্রাধিকার
কাড়ছে বাঁচার মৈ॥
বি. দ্র.- ‘গুরু’ শব্দটির অর্থ বুঝতে ‘গুরুদেব’ পড়বেন।
৪| ছায়া
মানুষ খুঁজতে খুঁজতে ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসছে সময়।
মরুভূমির প্রান্ত ছুঁয়ে আসা দিকভ্রান্ত পথিকের কাছেও প্রশ্ন ছিলো-
মানুষ দেখেছো কোথাও
সে ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল, শুধু ক্যাকটাস চোখে পড়েছে তাঁর।
ক্রমশঃ সূর্য গলে যায়
সমতলে নেমে আসে গভীর ছায়া ।
ও কার ছায়া!
আমার নাকি কোনও না-মানুষের!
ছায়া ক্রমশঃ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়
সম্পূর্ণ অবয়ব জুড়ে ছেয়ে আছে প্রতিশ্রুতি আর বীভৎস প্রলাপ।
মরীচিকাতে চিনে নিই
এ ছায়া কার!
নিঃশব্দে জেগে ওঠে ধুলোঝড়
আর মদ্যপ উল্লাস।
কবর থেকে যেন জেগে উঠলো জ্যান্ত লাশ।
তবে কি অনুমানই ঠিক!